May 8, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

যেসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভোগাবে বাংলাদেশকে

1 min read

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বেশ কিছু বিপদের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। বেশি প্রভাব পড়বে পানি ও বাতাসের ওপর। বদলে যাবে আবহমান ঋতুর চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি। ব্যাহত হবে খাদ্য উৎপাদন। প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে এসবের লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটা জানিয়েছেন জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন প্রকল্পের টিম লিডার অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। এ সময় ন্যাপ প্রণয়নের বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। যা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।

যেসব বিপদের আশঙ্কা ন্যাপে

১৯৬১-১৯৯১ সালের তথ্য বিশ্লেষণে এমনই আভাস পাওয়া গেছে। রাজশাহীতে এই সময়ে গরমের জন্য বাইরে বের হওয়া বেশ কষ্টদায়ক। এদিকে আবার সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে দেখা দিতে পারে বন্যা।

২০১৭ সালে এমন সময়ে বন্যা হয়েছিল। আশঙ্কা বলছে, এখন থেকে প্রতি ৫ বছর পর পর এমন বন্যা হবে, যা আগের ৩০ বছরের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

কোনও বছর বৃষ্টি বেশি হবে, কোনও বছর কম। আবার হঠাৎ বৃষ্টিপাত বাড়বে। গত বছর রংপুরে একদিনে বৃষ্টি হয়েছিল ২২০ মিলিমিটার। তার আগের বছর হয়েছিল ৪৫৩ মিলিমিটার। ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে রাজধানীর বাসাবাড়িতেও হাঁটুপানি উঠবে।

আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি কম হচ্ছে। এটি আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগে আষাঢ়ের প্রথম দিনে কদম ফুটতে দেখা যেত। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের দোলাচলে এখন এ ফুল খুব একটা দেখা যায় না। এর পেছনেও অনিয়মিত বৃষ্টির ভূমিকা রয়েছে।

বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টি কমলেও বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে পারে। ২০১৭ সালে চৈত্র-বৈশাখে বৃষ্টি হয়েছে অনেকটা আষাঢ়ের মতোই। ফলে দেশে কিছুটা খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। এ বছর বর্ষা এসেছে বলতে গেলে মার্চ-এপ্রিলে।

অন্যদিকে, সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ততার প্রভাব গোপালগঞ্জ পর্যন্ত এসেছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ইতোমধ্যে লবণাক্ত। এসব এলাকার মানুষ ঢাকায় এসে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। দেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে লবণাক্ততা আরও বাড়বে। ৫-৭ বছরের মধ্যে এমন মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি। সম্ভাব্য ওই ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার।

এর মাঝে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশ্বের হার ৩.৬ মিলিমিটার। আমাদের উপকূলে তা ৫-৬ মিলিমিটার।

গবেষকরা বলছেন, খরার কারণে বিভিন্ন পোকামাকড়ের বৃদ্ধিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিগত বছরগুলোতে দেশে কুয়াশাও বেড়েছে। যা আগামীতে আরও বাড়তে পারে। সম্প্রতি দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুও বাড়ছে। ২০১৩-২০ সাল পর্যন্ত বজ্রাঘাতে ১ হাজার ৮৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।

গত ১০ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) একটি সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানেও বিশেষজ্ঞরা এমনটা জানান।

তাপমাত্রা বাড়লে কী সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ফুল ফোটার সময় বদলে যাবে। তাতে ফসলের উৎপাদন কমবে। ২০-৩০ বছর পরে এখন যে প্রজাতির ধান, গম, আলুর উৎপাদন হচ্ছে তা কমে যাবে। ভুট্টার উৎপাদন বাড়বে। সমাধান হচ্ছে— আমাদের ভাত খাওয়া কমাতে হবে। ভুট্টা খাওয়া বাড়াতে হবে। সারা বিশ্ব এরই মধ্যে এ চর্চা শুরু করেছে।

সেমিনারে অ্যাডাপটেশন অব আরবান এরিয়াস টু ক্লাইমেট চেইঞ্জ বা জিআইজেড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ড. ডানা দে লা ফনটেইনও বাংলাদেশের ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ এ দেশের প্রায় ১০ শতাংশ জমি ডুবে যেতে পারে। সম্ভাব্য এই বিপদ থেকে বাঁচতে স্থানীয় অভিযোজন পরিকল্পনার ওপর জোর দিতে হবে বলে জানান তিনি।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *