মুলাদীতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সামনে সাংবাদিক পেটালো দলীয় কর্মীরা
1 min readবরিশালের মুলাদিতে একটি আঞ্চলিক দৈনিকের প্রতিনিধিকে দলীয় কার্যালয়ে দরজা আটকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদকের উপস্থিতিতে তার কর্মীরা বেদম মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সড়ক দুর্ঘটনার একটি ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দিনে দুই দফা গালাগাল করার পর তৃতীয় দফায় দলীয় কার্যালয়ে আটকে মারধর করা হয় আঞ্চলিক দৈনিক আজকের পরিবর্তনের হিজলা উপজেলা প্রতিনিধি মো. সেলিম রাড়িকে। গত মঙ্গলবার দুপুরে এবং সন্ধ্যায় নির্যাতনের পর এই ঘটনা প্রকাশ করলে তাকে প্রানে মেরে ফেলা সহ বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার হুমকী দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠু এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। সাংবাদিক নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।
এদিকে থানায় লিখিত অভিযোগ করলে সে যে-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। তবে এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করার মতো পরিস্থিতি নেই এবং আতংকে নিরাপত্তাহীনতায় নিজ বাড়িতে দিন কাটছে বলে বুধবার বিকেল ৩টায় মুঠোফোনে জানিয়েছেন নির্যাতিত সাংবাদিক মো. সেলিম রাড়ি।
সেলিম জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি এক ঘনিস্টজনকে নিয়ে হিজলা থেকে মোটর সাইকেলে মুলাদী হয়ে বরিশাল যাচ্ছিলেন। দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে মোটর সাইকেলটি মুলাদী সিনেমা হল মোড় অতিক্রমকালে সেখানে জানজটের কবলে পড়ে। খোঁজ নিয়ে দেখেন একটি ট্রাকের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানের এক ভাগ্নের মোটর সাইকেল দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। তার সাথে থাকা আলমগীর মুঠোফোনে দুর্ঘটনার ছবি তোলেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মিঠু ছবি তোলার অপরাধে তাকে ও আলমগীরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং আচমকা আলমগীরের হাত থেকে ফোনসেটটি ছিনিয়ে নিয়ে পাশাবর্তী নদীতে ছুড়ে মারে। সেলিম তাৎক্ষনিক বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিক খোকন তালুকদার এবং উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি সুমন রাড়িকে জানায়। সুমন রাড়ি সন্ধ্যায় এ বিষয়ে একটি সুরহা করার আশ্বাস দেয়। সহকর্মীদের জানানোয় দ্বিতীয় দফায় তাদের গালাগাল করে চেয়ারম্যান মিঠু।
সন্ধ্যায় মুলাদীর সাংবাদিক খোকন তালুকদারকে সাথে নিয়ে সেলিম ভয়ে ভয়ে উপজেলা সদরের কলেজ রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঢুকতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন উেপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক মিঠু। তাৎক্ষনিক তার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবি, ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং দুটি মুঠোফোন সেট নিয়ে যায় মিঠুর কর্মীরা। খবর পেয়ে হিজলা উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি দেলোয়ার হোসেনও সেখানে হাজির হন। ইতিমধ্যে মুঠোফোনের কললিস্ট দেখে বরিশালের সাংবাদিকদের ঘটনা জানানোয় সেলিম এবং বরিশালের সিনিয়র সাংবাদিকদের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে মিঠু। চেয়ারম্যানের উত্তেজনা দেখে তার সামনে সেলিমকে বেদম মারধর করে তার কর্মীরা। পরে তার মোটর সাইকেলের চাবি, ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং দুটি মুঠোফোন সেট দুটি ফেরত দেয়। তবে দুপুরে নদীতে ফেলে দেয়া ফোন সেটের বিষয়ে কোন সুরহা দেয়নি সে। যাওয়ার সময় এ ঘটনা কাউকে জানালে বা কোন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সেলিমকে এলাকা ছাড়া করা সহ তাকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়। ঐ ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যানের একাধিক কর্মী সেলিমকে মুঠোফোনে হুমকী দেয়। এ ঘটনায় তিনি আইনগত বিচার চান। কিন্তু হিজলা থেকে মুলাদীতে গিয়ে থানায় অভিযোগ করার মতো কোন পরিস্থিতি নেই। বরং ভয়ে-আতংকে নিজ বাড়িতে দিন কাটছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হিজলা উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যাওয়ার পর তার সামনেই সেলিমকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার কর্মীরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এক পর্যায়ে তার কর্মীরা সেলিমকে বেদম কিল-ঘুষি-লাথি দেয়। সেখানে থাকার মতো কোন পরিস্থিতি না থাকায় তিনি আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান।
জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হিজলার ঐ সাংবাদিক তাকে গত মঙ্গলবার দুপুরে ফোন করে চেয়ারম্যানের গালাগাল করার কথা জানিয়েছেন। তবে সন্ধ্যায় সেলিমকে মারধরের বিষয়ে তাকে কেউ অবহিত করেনি। ঐ সাংবাদিক মুলাদী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে অভিযুক্ত যে-ই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন পুলিশ সুপার।