May 9, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

মহাকালের লেখা চিত্রনাট্যে জয়ী মহানায়ক

1 min read

টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতে মঞ্চে এলেন লিওনেল মেসি। গোল্ডেন বল হাতে নিলেন। সামনেই থাকা সোনালী ট্রফিটায় আঁকলেন চুমু। অবশেষে! বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তার অর্জনের শেষ নেই। কতশত রেকর্ড, কত শিরোপা নামের পাশে। তবু একটি আক্ষেপ ছিল। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে, হৃদয় ভাঙার অনেক গল্পের পর ফুটবলের মহাতারকা পেলেন সেই পরম আরাধ্য স্বাদ- বিশ্বকাপ জয়! 

সেটিও এলো এমন এক ফাইনাল জিতে, বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ফাইনালগুলির তালিকায় যে ম্যাচ থাকবে ওপরের দিকেই। লুসাইল স্টেডিয়ামে নানা নাটকীয়তা, রুদ্ধশ্বাস লড়াই, নখ কামড়ানো উত্তেজনার টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচে মেসিরও ঘুচল দীর্ঘ আক্ষেপ।

গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ফুটবল বিশ্বকে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন তার জাদুকরী বাঁ পায়ে। ফুটবলের সবুজ আঙিনায় উপহার দিয়েছেন কত না স্মরণীয় মুহূর্ত। বার্সেলোনায় হয়ে গেছেন কিংবদন্তি। স্পেনের ক্লাবটির হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে তার গোল ৬৭২টি। দুটিই রেকর্ড। আরও কত রেকর্ড পায়ে লুটিয়ে পড়েছে, হিসাব রাখা দায়।

চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ১০টি লা লিগাসহ বার্সেলোনার হয়ে ৩৫টি শিরোপা, সেখান থেকে পিএসজিতে পাড়ি দিয়ে প্যারিসেও ২টি ট্রফির স্বাদ পাওয়া হয়ে গেছে। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর হাতে উঠেছে রেকর্ড সাতবার।

বড় টুর্নামেন্টে চারবার ফাইনালে খেলেও দেশের হয়ে জেতা হচ্ছিল না কিছু। এর মধ্যে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের দুঃখগাঁথা আছে। কিন্তু দুঃখের পরই তো আসে সুখ, কান্নার পর হাসি। মেসির ক্ষেত্রেও যেন তাই হলো। পরপর দুটি ফাইনালে জিতলেন। গত বছর কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে পান দেশের হয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ। সবচেয়ে বড় অর্জন ধরা দিল এবার, বিশ্বকাপ!

রূপকথা? চিত্রনাট্য লেখাই ছিল হয়তো এভাবে।

অথচ এর কিছুই হয়তো হতো না। তিন বছরে তিন ফাইনালে হারের কষ্ট সইতে না পেরে ২০১৬ সালে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন মেসি। তার আগে নিজ দেশে কম সমালোচনাও শুনতে হয়নি তাকে।

মহাকালের লেখা চিত্রনাট্যে জয়ী মহানায়ক

মাত্র ১৩ বছর বয়সে পাড়ি দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। কাম্প নউয়ে সময়ের পরিক্রমায় একে একে গড়েন সাফল্যের সৌধ। বার্সেলোনায় যতটা নিজেকে উজাড় করে দেন মেসি, জাতীয় দলেও কি দেন ততটা?-একটা সময় এমন প্রশ্ন উঠেছিল আর্জেন্টিনায়। দিয়েগো মারাদোনার চেয়ে মেসিকে ভালোবাসা তাই কঠিন মনে করেছে আর্জেন্টাইনরা।

যদিও মেসি বারবার দেখিয়েছেন, আর্জেন্টিনার জার্সির প্রতি তিনি কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত বছর দেশকে কোপা আমেরিকা জেতানোর পর তার কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্যও তাই বলে। এরপর থেকে আর্জেন্টাইনদের মনোজগতেও মেসিকে নিয়ে ভাবনার পরিবর্তন ঘটে। মারাদোনার মতো তার উত্তরসূরিকেও আপন করে নেন দেশের মানুষ।

মহাকালের লেখা চিত্রনাট্যে জয়ী মহানায়ক

এই বিশ্বকাপে সেটি আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে বারবার। প্রতিটি ম্যাচে তিনি নিজেও দিয়েছেন ভক্তদের ভালোবাসার প্রতিদান। দলের শিরোপা জয়ের মূল কারিগর যে তিনিই।

৩৫ বছরে বয়সে নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে খেলতে এসে মেসি যা পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, রীতিমতো অবিশ্বাস্য।  ১৯৮৬ সালে যেমন প্রায় একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দিয়েছিলেন মারাদোনা, অনেকটা ঠিক সেভাবেই তৃতীয় ট্রফি এলো মেসির হাত ধরে।

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপে এসে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে অভাবনীয় হার, এরপর আর্জেন্টিনার যে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, সেটির শুরু মেক্সিকোর বিপক্ষে মেসির ওই দুর্দান্ত গোলের পর থেকেই।

এই বিশ্বকাপ দুই হাত ভরিয়ে দিয়েছে মেসিকে। বিশ্ব মঞ্চে মারাদোনার ম্যাচ ও গোলের সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়া, গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া, জার্মান গ্রেট লোথার মাথেউসকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলাসহ আরও একগাদা রেকর্ড-অর্জন যুক্ত হয়েছে তার নামের পাশে।

প্রথম চার বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে কোনো গোল তিনি করতে পারেনি। এবার নকআউটের প্রতিটি ধাপে পেয়েছেন জালের দেখা। ফাইনালেও গোলের আগল খোলে তার পা থেকেই।

মহাকালের লেখা চিত্রনাট্যে জয়ী মহানায়ক

এরপর ৭৯ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা, ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে ফ্রান্সের সমতা, অতিরিক্ত সময়ে ফের মেসির গোলে আবার আর্জেন্টিনার এগিয়ে যাওয়া, শেষ মুহূর্তে এমবাপের আরেকটি গোলে ম্যাচ টাইব্রেকারে, সেখানে আরেকবার এমিলিয়ানো মার্তিনেসের বীরত্ব- কী ছিল না ফাইনালে।

মেসির জন্য সবকিছু যেন লেখাই ছিল এভাবে। বিশ্বকাপের মঞ্চে মহানায়কের শেষটা হলো রাজকীয়।

২০১৪ সালের ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের পর মেসিকে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিতে হয়েছিল মলিন মুখে, আট বছর পর আবারও যখন গোল্ডেন বল পেলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক, এবার তার মুখে চওড়া হাসি।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *