বাড়তি ফসল ফলাতে চরে নজর সরকারের
1 min read
দেশে খাদ্যের অভাব যেন না হয় সেজন্য প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদ করার নির্দেশনা আছে সরকারের। এই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। এজন্য নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এসব উদ্যোগের লক্ষ্য, বিস্তীর্ণ অনাবাদি জমি চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। সেই সঙ্গে আমদানিনির্ভরতা কমানো। এরই অংশ হিসেবে দেশের চরাঞ্চলে পতিত জমিতে ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চরাঞ্চলে প্রায় এক লাখ এক হাজার ৮৯২ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে। এসব জমির শস্য নিবিড়তা ১৪০ শতাংশ (কোনো জমিতে এক ফসল হলে সেটির শস্য নিবিড়তা শতভাগ ধরা হয়, সে হিসেবে ১৪০ শতাংশ শস্য নিবিড়তার অর্থ ওই জমিতে এক ফসল এবং আরেক ফসলের অর্ধেকের মতো ফলে)। এসব পতিত জমি চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ হবে, গড়ে উঠবে নারী ও তরুণ উদ্যোক্তা। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, ফসলের উন্নত জাত ও কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে এসব এলাকার শস্য নিবিড়তা বাড়বে আরও ৫ শতাংশ। সে লক্ষ্যে পতিত জমি ব্যবহারের জন্য চার হাজার ২৮১টি সোলার প্যানেলযুক্ত (সৌরশক্তিচালিত) আলোক ফাঁদ, চার হাজার ২৮১টি এলএনপি (লো লিফট পাম্প) বিতরণ করা হবে। চরে ১২১টি বিশাল শেড, ১২১টি সাবমার্সিবল পাম্প ও ১২১টি সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘বাংলাদেশের চর এলাকার উপযোগী আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। প্রকল্প প্রস্তাবনা সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কমিশন যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। অনুমোদনের পর ছয় বছর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দেশে প্রায় দুই হাজার ২২৫ বর্গকিলোমিটার চরাঞ্চল রয়েছে। যেখানে দেড় মিলিয়ন বা ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের অধিকাংশই দরিদ্র। এই বিশাল চরাঞ্চলের প্রায় ৬৭ শতাংশ উত্তরাঞ্চলে, যা প্রায় দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার। এ চরাঞ্চলে ফসল ফলিয়ে চরের মানুষের ভাগ্য বদলাতে প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। এছাড়া পতিত জমি ব্যবহারও জরুরি।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চরাঞ্চলে ফসল ফললেও সেটা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয় না। এর কারণ কৃষকরা প্রচলিত ও আদি কৃষিপদ্ধতি অনুসরণ করছেন। সেখানে ভালো বীজের অভাব যেমন আছে, তেমনি নেই কৃষি বিকেন্দ্রীকরণের কোনো পদ্ধতি। তবে উন্নত বীজ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে চাষাবাদ করে ফলন বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শস্যের নিবিড়তা বাড়িয়ে কৃষকের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নসহ নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে রয়েছে চার হাজার ২৮১টি ব্যাচে কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন; চারা উৎপাদন ও পানির হাউজে সবজি উৎপাদনকারী কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন এবং এক হাজার ২১০টি মাঠ দিবস, ৪১১টি কৃষিমেলা, ৩০টি সেমিনার ও ৩৬০টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণের আয়োজন।
এই প্রকল্পের আওতায় ৮৮ হাজার ১৮১টি কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী হবে। এতে নানা ধরনের কৃষিপণ্য প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আখ, পাট, কালোজিরা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, মরিচ, মটরশুটি ইত্যাদি। প্রকল্পটি ৩৫টি জেলার ১২১টি উপজেলায় বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও পতিত জমি ব্যবহারের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত, প্রকল্প এলাকা উপযোগী আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, চর এলাকার জনগণের পুষ্টিমানের উন্নয়ন এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অধিদপ্তর বলছে, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় বিপুল পরিমাণ বালু, দোআঁশ ও পলিমাটি স্তরে স্তরে জমে গড়ে ওঠে চর। নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, এসব মোকাবিলা করেই চরের মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। এই বিষয়গুলোও প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বলেন, দেশের চরাঞ্চল উপযোগী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন, পুষ্টি এবং আর্থসামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। চরে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করা যায়। এছাড়া আধুনিক জাতের ভুট্টাও উৎপাদন করা যায়। নানা ধরনের রবিশস্য চাষের অবারিত সুযোগ রয়েছে চরে। আধুনিক জাতের রবিশস্য উৎপাদনে চরাঞ্চলে কর্মসংস্থানও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। আবাদি জমিও কমে যাচ্ছে নানা কারণে। চরের পতিত জমি ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন দেশের খাদ্যঘাটতি মিটবে, অন্যদিকে চরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের চাকাও ঘুরবে।