May 18, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

পদ্মার বুক চিরে বাংলাদেশের ‘সাহস’

1 min read

‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/অবাক তাকিয়ে রয়ঃ/জ্বলে-পুড়ে মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়’-কবি সুকান্ত বোধহয় আজ বড্ড বেশি প্রাসঙ্গিক। কোটি বাঙালির প্রাণের আবেগ, দ্রোহ, শক্তি, সাহসের প্রতীক চরণগুলি। খরস্রোতা পদ্মার বুকে দ্রোহের সেতু আজ দেশ-বিদেশের সব আলোচনা-সমালোচনা, ষড়যন্ত্র-কূটমন্ত্রের জবাব। বাংলাদেশের সাহস। বিশ্বের বিস্ময়। পৃথিবী সত্যি অবাক তাকিয়ে রয়!

স্বপ্ন-সাধ-আর বিশ্বাসের গাঁথুনিতে অসাধ্যকে সাধন করার এক দুর্বার সফলতা পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্বার, দুর্বিনীত শক্তি-সংগ্রামের নাম পদ্মা সেতু।

একটিমাত্র সৃষ্টিকর্ম দিয়েই জাতিসত্তা মেলে ধরা যায়, আত্মমর্যাদা প্রকাশ পায়-তারই নিদর্শন যেন এখন পদ্মা সেতু। যে সৃষ্টিকর্মের প্রতিটি কণায় বাঙালির আবেগ, অনুভূতি, নেতৃত্বের সাহসিকতা মিশে আছে। মিশে আছে বৈশ্বিক-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইতিহাস-দুঃখগাথাও। পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ আর ষড়যন্ত্র দলিত করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার নাম পদ্মা সেতু।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম নেতা আমির হোসেন আমু  বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য কখনই বিলাসী ভাবনা ছিল না। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমি মনে করি, পদ্মা সেতু বিশ্বের বুকে একটি নিদর্শন তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া ব্রিজ নিয়ে নানা গল্প আছে।

২০০৮ সাল। ক্ষমতার গ্রহণের পরপরই আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর জন্য ডিজাইন কনসালট্যান্ট নিয়োগ হয়। কনসালট্যান্ট ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সম্পন্ন করেন এবং সেতু বিভাগ প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১১ সালে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিবদ্ধ হয়। এর পরের বছর ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে। ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলোও ঋণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে।

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে জেলে পাঠানো হয়। পরবর্তীসময়ে দুর্নীতির অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং কানাডার আদালত দুর্নীতির অভিযোগের মামলাটি বাতিল করেন। এরপর প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই সেতুর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। এটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু।

দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিটে নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরে একক রেলপথ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আজকের এই দিন আমার কাছে অবশ্যই মাহেন্দ্রক্ষণ ও অবস্মরণীয়। পৃথিবীর বুকে বাঙালির মান-মর্যাদা ও প্রত্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জিডিপিতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ হবে। দারিদ্র কমবে দশমিক ৭৫ শতাংশ। আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির যে প্রচণ্ড গতি, তা আরও বাড়িয়ে দেবে। এই গতি যে বস্তুভিত্তিক পরিবর্তনই আনবে তা নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও উপরে ওঠার ক্ষেত্রে বিশেষ ধাক্কা যা আমাদের মনোবল আরাও চাঙা করবে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো, তখন আমাদের অনেক অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্টজন, বৃদ্ধিজীবী লজ্জা প্রকাশ করলেন। তারা হতাশা প্রকাশ করে বললেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। বিশ্বব্যাংক চলে গেছে, অন্যরাও চলে যাবে। এটি বড় অপমানের।’

‘সমালোচনাকারীদের উপযুক্ত জবাব শেখ হাসিনা দিতে পেরেছেন পদ্মা সেতু নির্মাণ করে। এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বিশ্ববাসীকেও জানিয়ে দেওয়ার অপেক্ষা ছিল। সক্ষমতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে নিজেদের চ্যালেঞ্জ বাড়লো বলেও মনে করছি।’

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, ‘দক্ষিাঞ্চল এক সময় অবহেলিত ছিল। সত্য কথা বলতে কী, এক সময় এ অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়নই ছিল না। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোর রাস্তা-ঘাট, সেতু ছিল না বললেই চলে। এই প্রকল্পের কারণে গোটা দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে। পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের প্রতীক বলে মনে করি। আরও সহজ কথায় যদি বলি, এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক হাব হবে। এখানে মানুষ এখন বিনিয়োগ করতে আসবে। এটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর একটি অবকাঠামো।’

একই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সরকারের নৌ-পরিবন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু্ শুধুই একটি সেতু না। এটি একটি মর্যাদার নাম। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির গর্ব ও অহংকার প্রকাশ পাচ্ছে।

এই ঘৃণিত রাজনীতি করা হয়েছে একটি দেশের মর্যাদাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য। এমন অন্ধকারের কূপ থেকে জাতিকে তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তারাধিকারী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গন্ধুর কন্যা বলেই সেই ঘৃণিত রাজনীতি, ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, ‘আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না।’ তার কথার প্রতিফলন ঘটিয়েছে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সাহস ও প্রত্যয় থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করবো।’ আজ শেষ লগ্নে এসে বলতে পারছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।’

‘পদ্মা সেতু হচ্ছে আমাদের কাছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। পদ্মা সেতু হচ্ছে আমাদের জাতিসত্তার বিজয়, মর্যাদা-অহংকারের নাম।’

‘এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গোটা দুনিয়াকে আমরা জানান দিয়ে সক্ষম হয়েছি, আমরাও পারি। এর মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের চূড়ায় অবস্থান করছেন।’

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *