November 22, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

নিয়ম মেনেই এলো বর্ষা, ভারি বৃষ্টিতে দক্ষিণ-পূর্বে বন্যার শঙ্কা

1 min read

এবার নিয়ম মেনেই বাংলাদেশের সীমানায় এসেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা। জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ নাগাদ মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

বাংলা সনের আষাঢ় ও শ্রাবণ- এ দু’মাস বর্ষাকাল। মঙ্গলবার (৩১ মে) জৈষ্ঠ্য মাসের ১৭ তারিখ। এদিন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশের টেকনাফ উপকূলে এসে পৌঁছেছে।

আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক  বলেন, জুনের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যদি মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করে, তবে আমরা তাকে বলি নর্মাল অন সেট (স্বাভাবিক বিস্তার লাভ)। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। স্বাভাবিক অন সেটের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ এদিক-সেদিক হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, গত বছর সারাদেশে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করতে ১৭ জুন পর্যন্ত সময় লেগেছিল। এর আগের বছর ২৩ জুন পর্যন্ত লাগে। দেখা গেছে, মৌসুমি বায়ু জুনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে গিয়ে বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করতে সময় নেয়। আজকে (৩১ মে) পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।এরপর চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসতে আরও দু-একদিন সময় নেয়, চট্টগ্রাম বিভাগে পুরোপুরি বিস্তার লাভ করতে জুনের প্রথম সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। আমরা মনে করি, মৌসুমি বায়ু ঢাকা, সিলেট পর্যন্ত বিস্তার লাভ করতে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ লেগে যাবে। সাধারণত জুনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করে থাকে’- বলেন এ আবহাওয়াবিদ।আবুল কালাম মল্লিকের মতে, আজ ৩১ মে, তাই আমরা বলতে পারি মৌসুমি বায়ু খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে এসেছে। আমরা আশা করছি, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষের দিকে মৌসুমি বায়ু সারাদেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। তবে খুলনা বিভাগে বিস্তার লাভ করতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত মৌসুমি বায়ু টেকনাফ দিয়ে ঢুকে চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, রংপুর বরিশাল শেষে খুলনা বিভাগে বিস্তার লাভ করে থাকে। মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশের প্রবেশ করে আস্তে আস্তে উত্তর-পশ্চিম দিকে ধাবিত হয়। যেদিকে এ মেঘমালা ধাবিত হয় সেদিকেই বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।

দেশে এখনো বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টি শুরু হয়নি জানিয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে কম শক্তিমাত্রার বজ্রমেঘ তৈরি হচ্ছে। এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। একইসঙ্গে বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে বিশেষজ্ঞ কমিটি আগামী বৃহস্পতিবার (২ জুন) বৈঠকে বসবে জানিয়ে আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হবে বর্ষাকালে কী ধরনের বৃষ্টি হবে- স্বাভাবিক হবে, নাকি স্বাভাবিকের চেয়ে কম বা বেশি হবে। তখন এসব বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।

মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি ও গতিপথ বিষয়ে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, মৌসুমি বায়ুর দুটি শাখা রয়েছে। একটা হচ্ছে আরব সাগরীয় শাখা, অপরটি বঙ্গোপসাগরীয় শাখা। আরব সাগর শাখার মৌসুমি বায়ু মাদাগাস্কার থেকে গুজরাট ও কেরালা হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। মৌসুমি বায়ুর অন্য একটি শাখা আরব সাগর থেকে ভারতের ভেতর দিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়ে বঙ্গোপসাগর দিয়ে টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।দুদিক থেকে মৌসুমী বায়ু এ উপমহাদেশে প্রবেশ করে। এতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকে। যা প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় সেখানে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকে। এই জলীয়বাষ্প মেঘ তৈরি করে। যেটা বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে বলা হয় মৌসুমি বৃষ্টিপাত। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়ে থাকে’- বলেন আবুল কালাম মল্লিক।মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার ওপর বৃষ্টিপাতের মাত্রা নির্ভর করে জানিয়ে তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলে বেশি বৃষ্টি হয় আর নিষ্ক্রিয় হলে বৃষ্টি কম হয়।অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে। যার ফলে দেশের উজানে ভারতের আসাম, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরা ও হিমালয় পাদদেশীয় অববাহিকার পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।’তিনি বলেন, জুন মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এসময়ে তিস্তা অববাহিকা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার-মেঘনা অববাহিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের কিছু স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ওই অঞ্চলের কয়েকটি স্থানে ভারি বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে সময়বিশেষে বিভিন্ন নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী ২ সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে এই অববাহিকাভুক্ত নদ-নদীগুলোর পানি ওই সময়ে দ্রুত বাড়তে পারে। সেখানকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে’- বলেন আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া।আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেল ভিত্তিক পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২ সপ্তাহের বাংলাদেশের অববাহিকাভিত্তিক বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বর্তমানে কমছে এবং বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থানে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ অববাহিকা এবং উজানের ভারতীয় অববাহিকায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র আববাহিকার সব প্রধান নদ-নদীর পানি সময়বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।প্রতিবেদনে বলা হয়, জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে (সিকিম ও গ্যাংটক) ভারি বৃষ্টিপাত ঘটার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা নদীর পানি সাময়িকভাবে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর বিপৎসীমা অতিক্রম করার কোনো সম্ভাবনা নেই।গঙ্গা নদীর পানি বর্তমানে স্থিতিশীল আছে, অন্যদিকে পদ্মার পানি কমছে। আগামী দুই সপ্তাহে, গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি ধীরগতিতে বাড়তে পারে। তবে এসময়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।মেঘনা অববাহিকার উজানের প্রধান নদীগুলোর পানি বর্তমানে কমছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে আগামী দুই সপ্তাহে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার উজানের অন্যান্য নদ-নদীর (সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই কংস,মনু, খোয়াই) পানি সময়বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে এবং কোথাও কোথাও সাময়িকভাবে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *