নিজ থেকে সরে না দাঁড়ালে মুমিনুলকে আরও একটি সুযোগ দেবে বিসিবি?
1 min readএতকাল জানা ছিল ব্যাটার মুমিনুলই টেস্টে টাইগারদের সেরা; কিন্তু সময়ের ফেরে সে সত্যিটা হারিয়ে গেছে। তার বদলে দেখা মিলছে অন্য আরেক মুমিনুলের। টেস্টে বাংলাদেশের সবেচেয়ে বেশি ১১ সেঞ্চুরির মালিক, কক্সবাজারের ৩১ বছরের ছোট-খাট গড়নের এ যুবা হঠাৎ করেই রান করতে ভুলে গেছেন।
কাকতালীয়ভাবে ব্যাটার মুমিনুলের খারাপ সময় শুরু ঠিক এ বছরের প্রথম থেকে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৮ রানের এক দারুন ইনিংস খেলে ঐতিহাসিক জয়ে ভূমিকা রাখার পর আর ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি মুমিনুল। বাকি ১০ ইনিংসে এ বাঁ-হাতি উইলোবাজের সংগ্রহ (১৩*, ০, ৩৭, ০, ২, ৬, ৫, ২, ৯, ০) মোটে ৭৪ রান। শেষ ৪ টেস্টের ৭ ইনিংসে দুই অংকেই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি তার।তিনি শুধুই ব্যাটার। মূলতঃ ব্যাটার হিসেবেই দলে থাকা। সেই ব্যাটিংয়ের যখন এমন হতশ্রী অবস্থা, তখন খুব স্বাভাবিকভাবে তার নেতৃত্বও সংকটে ।
অধিনায়ক মুমিনুলের ব্যাটে রান নেই। তিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া বহুদুরে, দলকে এখন কিছুই দিতে পারছেন না। এসব কথাবার্তায় চারদিক সয়লাব। টিম ম্যানেজমেন্ট আর ক্রিকেট বোর্ডেও টিম বাংলাদেশের টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি এখন সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু। বোর্ডের নীতি নির্ধারক মহলেও টেস্ট অধিনায়কত্ব নিয়ে কানাঘুষা চলছে।মুমিনুলের অফফর্মের চাপটা সরাসরি তার অধিনায়কত্বের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। রান করতে না পারার চাপ আর দল পরিচালনার চাপ মিলে মুমিনুল অনেকটাই দিসেহারা। অন্তত অধিনায়কত্বর চাপটা তার ঘাড় থেকে সরালে হয়তো খানিক চাপমুক্ত হতে পারেন। কে জানে, তখন হয়তো আবার ব্যাট হাতে পুরনো সেই মুমিনুলকে দেখা যেতে পারে। ভেতরে ভেতরে এমন চিন্তা ভাবনাই চলছে এখন।
বোর্ডের প্রভাবশালী পরিচালক ও টিম বাংলাদেশের ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে কথা বলেও এমনটাই মনে হয়েছে। সঙ্গে একান্ত আলাপে খালেদ মাহমুদ সুজনের সোজা কথা, ‘আমরা চাই ব্যাটার মুমিনুল জ্বলে উঠুক। রান করুক। মুমিনুল রান করলে, লম্বা ইনিংস খেললে আমাদের জন্য ভাল। আমরা হয় টেস্ট জিতি না হয় ম্যাচে ভাল অবস্থায় থাকি; কিন্তু এখন মুমিনুল রান করতে পারছে না। এতে করে তার পক্ষে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। দলের ওপরও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তার নেতৃত্বও দিনকে দিন হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।’সুজন শেষ করেন এভাবে, ‘এখন মুমিনুলকেই ভেবেচিন্তে ঠিক করতে হবে, যে সে কী করবে?’
এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ গুঞ্জন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই ঘটতে পারে টেস্ট নেতৃত্বে রদবদল। মুমিনুলের পরিবর্তে সাকিব হতে পারেন নতুন টেস্ট অধিনায়ক- এমন কানাঘুষা চলছে ক্রিকেট পাড়ায়।
সত্যিই মুমিনুলকে সরিয়ে সাকিবকে অধিনায়ক করা হবে? টেস্ট ক্যাপ্টেন্সিতে এখনই পরিবর্তন আনা হবে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাহলে অধিনায়ক থাকছেন না মুমিনুল?
এই গুঞ্জনের বিষয়ে জাতীয় দল পরিচর্যা, পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য স্পষ্ট কিছু জানাননি। মুমিনুল আর টেস্ট ক্যাপ্টেন থাকছে না। তার পরিবর্তে সাকিবকে নতুন অধিনায়ক করা হচ্ছে এবং সব ঠিক থাকলে সাকিবই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে টিম বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে- সরাসরি এমন মন্তব্য করেননি জালাল ইউনুস। তেমন আভাস, ইঙ্গিতও বের হয়নি তার মুখ থেকে।
আজ মঙ্গলবার সকালে টেস্ট অধিনায়ক ইস্যুতে সঙ্গে একান্ত আলাপে বিসিবির অন্যতম এই নীতি নির্ধারক ও সিনিয়র পরিচালক জালাল ইউনুস পরিষ্কার বলেছেন, ‘আমরা এখনই মুমিনুল হককে থ্যাঙ্কইউ বা গুডবাই বলতে চাচ্ছি না। বলবোও না। তবে মুমিনুল যদি স্বেচ্ছায় স্টেপআউট করে তাহলে ভিন্ন কথা।’
মুমিনুল হকের কোর্টে বল ঠেলে দিয়ে জালাল বোঝানোর চেষ্টা করেন, বোর্ড মুমিনুলকে অধিনায়কত্ব ছাড়তে বাধ্য করতে রাজি নয়। তবে মুমিনুল যদি অধিনায়ক পদে থাকতেও চান, তবে তাকে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফরে ভাল করতে হবে।
বিসিবি ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান অনেক কথার ভিড়ে একটি তাৎপর্য্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তা শুনে মনে হয়েছে, মুমিনুল যদি কারিবীয়দের সঙ্গে সিরিজেও টেস্ট ক্যাপ্টেন পদে বহাল থাকতে চান, তাহলে তাকে বলে দেয়া হবে, সেটাই অধিনায়ক হিসেবে তার শেষ সুযোগ। ওই সিরিজে ভাল খেলতে না পারলে তাকে আর সুযোগ দেয়া হবে না।’
ভেতরের খবর, আজ-কালের মধ্যে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে আরেকবার কথা হবে মুমিনুলের। সেখানেই টেস্ট অধিনায়ক ইস্যুর ফয়সালা হবে। যদি আলাপ-অলোচনায় মুমিনুল সেচ্ছায় সরে দাঁড়াতে চান, তাহলে সাকিবই হবেন টেস্ট অধিনায়ক। আর যদি আরও একবার সুযোগ চান মুমিনুল, তাহলে তাকে সে সুযোগ দেয়া হবে।
জালালের এ উক্তি সেটাই বলে দিচ্ছে, ‘মুমিনুল যদি বলে, আমাকে আরও একটি সুযোগ দেন, তাহলে আমরা না করতে পারবো না।’