April 26, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

খাতুনগঞ্জে কমেছে নিত্যপণ্যের দাম, রমজানে স্বস্তির আশা

1 min read

তেল, চিনি, ছোলাসহ কয়েকটি পণ্যে সরকারের শুল্ক কমানোর ঘোষণার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। পাইকারিতে কমতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দাম কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি ও পেঁয়াজের। দাম কমলেও এখনো অস্থিরতা রয়েছে তেল-চিনির বাজারে। তবে রমজানে আর দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বরং আরও কমার আভাস তাদের।

রমজানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ছোলার। সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে ভালো মানের ছোলার দাম প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। তবে স্থিতিশীল রয়েছে মসুর ডালের দাম। আমদানিকারকদের মতে, বছরে ছোলার চাহিদা প্রায় ২ লাখ থেকে ২ লাখ ১৫ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রমজানেই চাহিদা থাকে প্রায় ৭০ হাজার টনের।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ছোলা আমদানি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টন। ছোলার পাশাপাশি প্রায় সমপরিমাণ মটর ডালও আমদানি হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক মেসার্স পায়েল ট্রেডার্সের মালিক আশুতোষ মহাজন  বলেন, গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ান ছোলা প্রতি কেজি ৬৩ টাকায় বিক্রি হলেও আজ (১৩ মার্চ) বিক্রি হচ্ছে ৬১-৬২ টাকায়। মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে। মসুর ডালের দাম গত সপ্তাহেও একই ছিল।

তবে খুচরা বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি ছোলা এখনো ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যও একই রকম। গত বছর একই ছোলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।সম্প্রতি দেশে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ভোজ্যতেলের। দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার এরই মধ্যে নিত্যপণ্যটির ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করে পাম অয়েলের দাম। কমেছে সয়াবিন তেলের দামও।

তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে রান্নার কাজে সয়াবিন তেল ব্যবহার হলেও প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পাম অয়েল। তাই মোট চাহিদার অর্ধেক আসে পাম অয়েল।

খাতুনগঞ্জের আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ  বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। তাই দামও কমছে। মিলারদের (আমদানিকারক) কাছেও ভোজ্যতেলের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এখন মিলাররা সরবরাহ করলে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

তিনি বলেন, সরকারি ঘোষণার পর থেকে খাতুনগঞ্জে সপ্তাহের ব্যবধানে পাম অয়েলের দাম প্রতি মণে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে যেখানে মণপ্রতি ৫ হাজার ৯০০ টাকা উঠেছিল, সেখানে রোববার দাম ছিল ৫ হাজার ২০০ টাকার নিচে।

রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন পণ্যের মধ্যে অন্যতম চিনি। সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের বাজারে কমেছে এ নিত্যপণ্যটির দামও।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মতে দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চিনি কলগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। যে কারণে চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার বেসরকারি খাতের কলগুলোর ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে সরকারি মিলগুলোতে বছরে মাত্র ৮০ হাজার টনের মতো চিনি উৎপাদন হচ্ছে। অবশিষ্ট চিনির বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ব্যক্তিখাতে পরিচালিত পাঁচ শিল্প গ্রুপের কাছে। চাহিদার অবশিষ্ট সরবরাহ আসে ওই পাঁচ সুগার রিফাইনারি থেকেই। রমজান সামনে রেখে চিনির বাজারের লাগাম ধরতে চিনি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা ১৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হবে আমদানিকারকদের।

এদিকে ভোজ্যতেল ও ছোলার মতো গত এক সপ্তাহে চিনির দামও কমেছে প্রতি মণে প্রায় ১০০ টাকা। খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে প্রতি মণ চিনি ২৭২০-২৭৩০ টাকা ছিল। কিন্তু রোববার (১৩ মার্চ) দাম ছিল ২৬২০-২৬৩০ টাকা।

তিনি বলেন, পাম অয়েল ও চিনির বাজার সকালে কমলে বিকেলে আবার বাড়ে। স্থিতিশীল থাকছে না। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে চিনিতে ১০০ টাকার মতো কমেছে।

এছাড়া খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজ-রসুনের দামও। বিশেষ করে দেশে ও ভারতে মৌসুম হওয়ার কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। আবার বর্তমানে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসছে। দুই বর্ডারই খোলা। এতে পেঁয়াজের দাম হু হু করে কমছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা কমেছে। কমেছে চীন থেকে আমদানি করা রসুনের দামও।

চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ-রসুন আড়তদার ব্যবসায়ী বশর অ্যান্ড সন্স’র মালিক হাজি আবুল বশর বলেন, রোববার পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩২-৩৩ টাকায়। বর্ডারে আজ ২৮-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্ডার পার হওয়ার জন্য পেঁয়াজের ট্রাকের লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। সামনে পেঁয়াজের দাম আরও কমতে পারে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের এখন মৌসুম। দাম ২৫ টাকার নিচে নামলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রসুনের দামও কমে যাচ্ছে। আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে। এখন ৯৫-১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে চায়না রসুন। দেশি রসুন ১৫-২০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে এটি সুখবর। মূলত বাজারে সারাবছর প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন। কিন্তু সরকার ব্যবসায়ীদের চাপে বছরের পুরোটা সময়ে বাজার মনিটরিং করতে পারে না বিধায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায়। এখন রমজান সামনে রেখে সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং বাড়ানো। এতে সাধারণ মানুষের কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে।

 

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *