December 2, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

জাতীয় হাতিরঝিল ঘিরে ভয়-উদ্বেগ বাড়ছেই

1 min read

হাতিরঝিল লেক রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। বিনোদনপ্রেমী মানুষের পছন্দের অন্যতম স্থান। ব্যস্ততম নাগরিক কোলাহল থেকে কিছুটা স্বস্তির খোঁজ মেলে যেখানে। বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারসহ নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর জন্য অনিন্দ্য সুন্দর স্থান হাতিরঝিল। আবার যানজটের শহর ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও আমূল পরিবর্তন এনেছে হাতিরঝিল। এসব কারণে রাজধানীবাসীর কাছে এটি একটি অনিবার্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সেই হাতিরঝিলই এখন অরক্ষিত ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ছিনতাই, খুন, রহস্যজনক দুর্ঘটনা এখন নিয়মিতই ঘটছে হাতিরঝিলে। কিছুদিন পরপরই ‘সুরক্ষিত’হাতিরঝিল থেকে মরদেহ উদ্ধারের খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে। যে হাতিরঝিলে বুকভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার নিরাপদ জায়গা মনে করা হয়, সেই হাতিরঝিলই এখন নানা ধরনের মৃত্যু, অপরাধের ‘অভয়াশ্রমে’ পরিণত হয়েছে। কিছুদিন পরপরই হাতিরঝিলে ‘মৃত্যুর’ খবর শোনা যায়।

 স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীর দখলে। দিনেও থাকে বখাটেদের উৎপাত। অনেক সময় ঘুরতে যাওয়া মানুষদের উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা। হকাররা আবার দ্বিগুণ দাম চেয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে তর্কবিতর্কেও জড়ায়। হাতিরঝিলের সঙ্গে বেগুনবাড়ী, কুনিপাড়া, তেজগাঁও, বাড্ডা, উলন, মহানগর ও মধুবাগ এলাকায় অন্তত ৩৮টি গলি আছে। সেতুগুলোর বিপরীত পাশে রয়েছে কিছু অন্ধকার এলাকা। সেসব এলাকায়ও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়।

এরই মধ্যে উঠে এসেছে হাতিরঝিলের নানা অব্যবস্থাপনার খবর। পুরো হাতিরঝিল এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা থাকলেও তা হয়নি এখনো। আবার কয়েকটি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো নষ্ট। লেকের ছোট সেতুগুলোর বাতি নষ্ট। ঢিলেঢালা থাকে পুলিশের টহল। এসবের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীচক্র। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, পুরো হাতিরঝিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। যেটুকু ঘাটতি আছে, সেটুকুও পূরণ করা হবে।স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীর দখলে। দিনেও থাকে বখাটেদের উৎপাত। অনেক সময় ঘুরতে যাওয়া মানুষদের উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা। হকাররা আবার দ্বিগুণ দাম চেয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে তর্কবিতর্কেও জড়ায়। হাতিরঝিলের সঙ্গে বেগুনবাড়ী, কুনিপাড়া, তেজগাঁও, বাড্ডা, উলন, মহানগর ও মধুবাগ এলাকায় অন্তত ৩৮টি গলি আছে। সেতুগুলোর বিপরীত পাশে রয়েছে কিছু অন্ধকার এলাকা। সেসব এলাকায়ও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়।

 হাতিরঝিল উড়ালসড়কে (ফ্লাইওভার) প্রায়ই ভুতুড়ে অন্ধকার থাকে। সড়ক ও উড়ালসড়কে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও কিছু স্থানে বাতি জ্বলে না। রাতে এসব অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এসব সড়কে তেমন পুলিশি টহলও চোখে পড়ে না। এমনকি বিভিন্ন মোড় বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন বা অন্য কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও থাকে না। হাতিরঝিল লেকের অধিকাংশ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তা সচল নেই।

হাতিরঝিলের নিরাপত্তারকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পর অফিসিয়ালি হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বুঝে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেনাবাহিনী যখন হাতিরঝিলের তত্ত্বাবধানে ছিল, তখন তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। রাজউক দায়িত্ব নেওয়ার পরই নিরাপত্তায় ঢিলেঢালা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে নানা অপরাধ।

তিনি কীভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন চার মাস পার হলেও তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় পুলিশ। গত বছরের ৬ জানুয়ারি হাতিরঝিল লেক এলাকায় এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয় যে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র তাকে হত্যা করেছে।

এছাড়া গত বছরের ১২ অক্টোবর সকালে অজ্ঞাতনামা এক যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। এ ঘটনার কিছুদিন আগে সিরাজুল ইসলাম নামে এক যুবকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ছিলেন। এসব ঘটনায় হাতিরঝিলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতিরঝিল উড়ালসড়কে (ফ্লাইওভার) প্রায়ই ভুতুড়ে অন্ধকার থাকে। সড়ক ও উড়ালসড়কে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও কিছু স্থানে বাতি জ্বলে না। রাতে এসব অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এসব সড়কে তেমন পুলিশি টহলও চোখে পড়ে না। এমনকি বিভিন্ন মোড় বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন বা অন্য কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও থাকে না। হাতিরঝিল লেকের অধিকাংশ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তা সচল নেই।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো হাতিরঝিল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা জরুরি। এছাড়া কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন অলিগলিতে লাইট লাগানো প্রয়োজন। অপরাধীদের আনাগোনা, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে নিরাপত্তাকর্মীদের টহল বৃদ্ধি করা গেলে অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা জানান, হাতিরঝিল এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। তা পর্যবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তাকেন্দ্র থাকা উচিত। তা না হলে রাজধানীর অন্যতম নান্দনিক স্থান হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে অপরাধীদের আনাগোনা, ছিনতাই এবং খুনের ঘটনায় আতঙ্কে দর্শনার্থী কমে গেছে। একসময় হাতিরঝিল ছিল রাজধানীর সবচেয়ে বেশি নিরাপদকেন্দ্র। এখন রীতিমতো আতঙ্কের নগরী হিসেবে পরিণত হয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ সেখান থেকে অপরাধীদের গ্রেফতার করে। তারপরও থামছে না অপরাধ।

দর্শনার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীর দখলে। চলে অনৈতিক কাজও। রাত যত বাড়তে থাকে ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে পরিবেশ। বাড়তে থাকে ছিনতাইকারী আর মাদকসেবীদের আনাগোনা।

ঢাকায় থাকেন হাছানুল করিম (ছদ্মনাম)। গ্রাম থেকে পরীক্ষা দিতে আসা বোন ও তার এক বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে আসেন হাতিরঝিলে। সেখানে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৮-১০ জন বখাটের খপ্পরে পড়েন তারা। এরপর সম্মান আর হেনস্তার ভয়ে একটি দামি মোবাইল ও মানিব্যাগে থাকা দুই হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পান। আরও অনেকের কাছে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে থানা-পুলিশে দৌড়াদৌড়ির ঝামেলায় অভিযোগ করেন না অনেকেই।

ডিবিসি নিউজের প্রযোজক আবদুল বারীর মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিবি) মশিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামি গ্রেফতারে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা না থাকায় আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। মামলার তদন্ত চলছে, তদন্তে সময়ের প্রায়োজন।

হাতিরঝিলে দায়িত্বরত রাজউকের সিকিউরিটি ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ  দিনে হাতিরঝিলে ৩০ জন নিরাপত্তাকর্মী কাজ করেন। রাতে কাজ করেন ২৮ জন। হাতিরঝিলে ২৪টি পয়েন্ট রয়েছে। ২৪ পয়েন্টে দুজন করে দায়িত্ব দেওয়া হলেও পুরোদমে নিরাপত্তা দিতে প্রয়োজন ৪৮ জন নিরাপত্তাকর্মী। রাতে ৪৮ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করলে অপরাধ কমে আসবে। তবে আগামী ১ জুলাই থেকে পুরোদমে নিরাপত্তাকর্মীরা কাজ শুরু করবেন। আশা করছি এরপর থেকে সব ধরনের অপরাধ কমে আসবে।

এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, হাতিরঝিল এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল চলমান। রাতেও টহল বাড়ানো হয়েছে। আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।

হাতিরঝিলে সিসিটিভি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের প্রকৌশলী এ. এস. এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিলে মোট ৬৮টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি বিকল। বিকলগুলো রিপেয়ার (মেরামত) করা হবে। বৃষ্টির পানি পড়লেই ৮-১০টি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো আবার মেরামত করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা  বলেন, হাতিরঝিলের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগে ঝিলপাড়ে সভা করেছি। এছাড়া নৌকায় পুরো হাতিরঝিল ঘুরে দেখেছি। আমরা নতুন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিচ্ছি। তারা কীভাবে মনিটরিং করবে, কীভাবে চেইন অব কমান্ড অনুযায়ী কাজ করবে- সভায় সেসব বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। কারণ হাতিরঝিলের কর্তৃপক্ষ রাজউক হলেও আউটলেট সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার।

হাতিরঝিলের আওতায় প্রত্যেক থানার ওসিকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, সন্ধ্যা ও সন্ধ্যার পর যতক্ষণ লোকজন হাতিরঝিলে থাকবে, ততক্ষণ পুলিশি টহল আরও জোরদার করার অনুরোধ জানিয়ে সব থানার ওসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সিসিটিভি ক্যামেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ঠিক করা হবে। হাতিরঝিলের বেশিসংখ্যক লাইট নষ্ট ছিল, সেগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন লাইট লাগানো হয়েছে। এছাড়া আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি এবং রিপ্লেসমেন্ট করছি। এছাড়া আমি সপ্তাহে দুদিন হাতিরঝিল ঘুরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করবো।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *