November 22, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

কুড়িগ্রামে আকস্মিক বন্যায় পেঁয়াজ-বোরোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

1 min read

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টিতে গত এক সপ্তাহে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদসহ কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে জেলা সদর, উলিপুর, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারীসহ চিলমারী উপজেলার নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এসব এলাকার পেঁয়াজ ক্ষেত ও বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ আকস্মিক বন্যার কবলে শত শত একর জমির পেঁয়াজ ও বোরো আবাদ নিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন এসব অঞ্চলের কৃষকরা।

আকস্মিক এ বন্যায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই তা জমি থেকে তুলে ফেলছেন। তবে জমি থেকে তুলেও সমস্যার সমাধান হয়নি, বরং এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক কৃষক। অপরিপক্ব এসব পেঁয়াজ রোদে শুকাতে দিয়েও লাভের আশা দেখছেন না তারা। ফলে ধারদেনা করে চাষ করা ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে গত এক সপ্তাহ ধরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এসব এলাকার চর ও দ্বীপ চরের নিম্নাঞ্চলে চাষ করা শত শত একর পেঁয়াজ ক্ষেত ও বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আকস্মিক বন্যার কবল থেকে ফসল রক্ষার জন্য অনেকেই অপরিপক্ব পেঁয়াজ ও বোরো তাড়াহুড়ো করে তুলে এনেছেন। এসব অপরিপক্ব ফসল নিয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা।

কুড়িগ্রাম সদরের শিপেরপাচি এলাকার কৃষক হাসেম মোল্লার স্ত্রী জরিনা বেগম বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যায় আমাদের দুই বিঘা জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো তুলে এনে রোদে শুকাচ্ছি। এছাড়াও দেড় বিঘা জমির বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। লাভের আশায় দুটো গরু বিক্রির টাকায় ফসল ফলিয়ে বন্যার পানিতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হলাম।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরপার্বতীপুর এলাকার পেঁয়াজ চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, ধারদেনা করে দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। আর কিছুদিন গেলেই পেঁয়াজ বাজারে বিক্রির উপযোগী হতো। কিন্তু অসময়ের বন্যায় অধিকাংশ পেঁয়াজ ক্ষেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে আমার এক থেকে দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কুড়িগ্রামের কদমতলা এলাকার বোরো চাষি আইনুল মিয়া বলেন, ধরলা নদীর অববাহিকায় প্রায় চার বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় দুই বিঘা বোরো আবাদ তলিয়ে গেছে। অসময়ে এমন বন্যা আগে কখনো দেখিনি।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, অসময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তার ওয়ার্ডের গোয়াইলপুরী ও পোড়ার চর এলাকার অন্তত ৬০-৭০ জন কৃষকের বোরো আবাদ ও পেঁয়াজ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে গোয়াইলপুরী এলাকার কৃষক করিম মিয়ার এক একর জমির পেঁয়াজক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। একই এলাকার কৃষক পাষাণ আলির দেড় একর জমির বোরো আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর কুড়িগ্রামে প্রায় এক হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও এক লাখ ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ও ২৭৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫৯৩ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, চীনাবাদাম, তরমুজ, বোরো, পাট, ভুট্টাসহ সবজি ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করবো।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ সবকয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন মিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন মিটার, চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন মিটার এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দুই মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানসহ কুড়িগ্রামে আরও ১০দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এতে করে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবুর হোসেন জানান, কুড়িগ্রামে গত ১ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে ২৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে আবহাওয়ার এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে রংপুর বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় দমকা হাওয়াসহ আরও বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

 

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *