৮৮ ডলার থেকে মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার
1 min readবিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার প্রভাবে বেশিরভাগ দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জন কমলেও ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবার চেয়ে ওপরে লাল-সবুজের পতাকা।
শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে তিন শতাংশে দাঁড়ালেও সেক্ষেত্রে উল্টো দাপট দেখিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়েছে মাথাপিছু আয়ও। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ ইউএস ডলার, তখন বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ছিল ৬৭৬ টাকা। এখন মাথাপিছু আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জন করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। অন্যদিকে, বর্তমানে ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ১৯১ ডলার। আর পাকিস্তানকে অনেক আগেই আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। দেশটির মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৫৪৩ টাকা।
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশে বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিল ৬৭৬ টাকা। সে হিসেবে একজনের দৈনিক আয় ছিল ১ টাকা ৮৫ পয়সা। সেখান থেকে ক্রমাগতভাবে বেড়ে বর্তমানে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৯১ হাজার ৫২২ টাকা। দৈনিক হিসেবে প্রতিজন বর্তমানে ৫২৫ টাকা আয় করেন, যা আগের মাথাপিছু আয়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল এবং স্থিতিশীল অর্থনীতি। এ অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে রয়েছে মধ্যম হারের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য আমদানি নির্ভরতা, বৈদেশিক সাহায্যের ওপর ক্রমহ্রাসমান নির্ভরতা এবং কৃষি খাতের সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প ও সেবা খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুততার সাথে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বৃহত্তম শিল্পের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এসময় পাট রপ্তানি করে দেশটি অধিকাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে তৈরি পোশাক শিল্প। এই শিল্প দেশীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের এই শিল্পকে বর্তমানে উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুকরণ করছে। স্বাধীনতার পরে যেসব শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম তৈরি পোশাক শিল্প। বিশ্বের বুকে নিজেদের কঠোর শ্রম ও উৎপাদন দক্ষতা দেখাতে পারার প্রমাণ মিলে এ শিল্পের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২-৭৩ থেকে ১৯৭৯-৮০ পর্যন্ত গড়ে ২১ দশমিক ০৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ১৯৮০-৮১ থেকে ১৯৮৯-৯০ পর্যন্ত গড়ে ১১.২০ % , ১৯৯০-৯১ থেকে ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত গড়ে ৭.২২ % , ২০০০-০১ থেকে ২০০৯-১০ পর্যন্ত গড়ে ৯.৯৬ % এবং ২০১০-১১ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত গড়ে ১২,৩৩ % হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪৩তম দেশ এবং দ্রুত বর্ধনশীল দেশসমূহের মধ্যে পঞ্চম।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭২- ৭৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৮৮ মার্কিন ডলার যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২২৭ ডলার। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, জিডিপির প্রবৃদ্ধি সর্বদাই ছিল ধনাত্মক।
বিশ্ব অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে সমানভাবে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ক্রমবর্ধমান দেশজ উৎপাদন আর মাথাপিছু আয় তারই ইঙ্গিত বহন করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ক্রমেই দৃঢ় হয়েছে। ২০০০-১০ অর্থবছরে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৫৮ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে গড় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ ১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ধ্বংসাবশেষ থেকে জাতির স্বনির্ভরতার আন্দোলন যখন একটু একটু করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করছে ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়। সে সাথে পুনরায় মুখ থুবড়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি।
বিশ্বঅর্থনীতি অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে সময় পারলেও বাংলাদেশ এতে ভালো করছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও শ্রমশক্তি। এর সঙ্গে বাড়তি সুবিধা যোগ করেছে বাংলাদেশে নির্মাণাধীন একশ’ ইকনোমিক জোন। বাংলাদেশ এসব জোনে ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে বলে মনে করে আইএমএফ।
প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক সহনশীলতা রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালে ১২ হাজার ৫০০ ডলার হবে। বর্তমান সরকার একটি টিম নিয়ে কাজ করছে। সেই টিমের আমি একজন সদস্য মাত্র। আমাদের টিমের দলনেতা প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এমন একটা সুখবর পেয়েছি। মোট জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২৫৫ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।
মাথাপিছু আয় প্রসঙ্গে বিবিএস সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলেই মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি সব সময় ইতিবাচক থাকায় ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে মাথাপিছু আয়। স্বাধীন দেশের শুরুতে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৬৭৬ টাকা সেখানে মাত্র দুই যুগ পর (১৯৯৫-৯৬) সে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ১৫২ টাকা। এর পরে ১৯৯৮-৯৯ সালে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১৪৩ টাকা। এক ধাপে ২০০০-০১ সালে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৯১ টাকা। এর পরে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৪৪৮ টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৪৪ টাকা মাথাপিছু আয় হয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে লাখ টাকা ছাড়ায় মাথাপিছু আয়। এই সময় মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬২১ টাকা। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৪০ টাকা। এখন মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার।