November 23, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

শ্রীলঙ্কার সংকট থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে

1 min read

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা বর্তমান সময়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই নিচে নেমেছে যে আমদানি করা কাগজের অভাবে স্কুল পরীক্ষা বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য। রান্নার গ্যাসের পাশাপাশি অভাব দেখা দিয়েছে কেরোসিন কিংবা পেট্রোলের ক্ষেত্রেও। বিদ্যুতের অভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্ল্যাক আউট।

পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ বেকারত্ব এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিসের ঘাটতি দেখা দেয়ায় অনেক শ্রীলংকান বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় নিজ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। সবার অবশ্য দেশ ছাড়ার সামর্থ্য না থাকায় অগণিত শ্রীলংকান এখন মূল পেশার বাইরে অন্যকিছু করতে বাধ্য হচ্ছেন। নয়তো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশ্ব মিডিয়ায় সেদেশের মানুষের দুর্ভোগ উঠে আসছে।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কখনো এতোটা দুরাবস্থায় পড়েনি দেশটি। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিবেশী ভারতের কাছে নতুন করে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে লংকান সরকার। শ্রীলংকা যখন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ২৫০ মিলিয়ন ডলারের কারেন্সি সহযোগিতা দিয়েছিল। এটি ছিল কোনো দেশের জন্য দেওয়া বাংলাদেশের প্রথম ঋণ। তারা আবারও ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। এছাড়া তারা পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ঋণ পরিশোধ করে আসছে।

জনসম্পদ ও আভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধিতে বেশ সক্ষম ছিল শ্রীলংকা। তারপরেও কেন তাদের এই পরিস্থিতি? এ বিষয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা নানা কারণ সামনে এনেছে, যা থেকে বিভিন্ন দেশ শিক্ষা নিতে পারে তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনায়।

শ্রীলংকা একযুগের বেশি সময় ধরে তাদের দেশে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তা এবং আরও নানা ধরণের প্রকল্প রয়েছে, যেগুলো বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় ও অতিবাহুল্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে দেদারছে ঋণ নিয়েছে শ্রীলংকার বিভিন্ন সরকার। যার কারণে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে খালি হতে থাকে। সেদেশের অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, গত ১৫ বছর ধরে শ্রীলংকায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ তেমন একটি হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগের পরিবর্তে বিভিন্ন সরকার ঋণ করার প্রতি মনোযোগী হয়েছে।

দেশটির সরকার অর্থ জোগাড়ের জন্য ২০০৭ সাল থেকে সার্বভৌম বন্ড ইস্যু করেছে। একটি দেশের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে এ ধরণের সার্বভৈৗম বন্ড বিক্রি করা হয়। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে এ ধরণের বন্ড বিক্রি করে অর্থের জোগান দেয়া হয়। শ্রীলংকা সেটাই করেছে। কিন্তু এই অর্থ কিভাবে পরিশোধ করা হবে সে ব্যাপারে খুব একটা চিন্তা-ভাবনা করেনি। বর্তমানে শুধু ওই বন্ড বাবদ শ্রীলংকার ঋণ রয়েছে এখন সাড়ে বারো বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া দেশীয় উৎস থেকেও সরকার ঋণ করেছে।

এছাড়াও কর কমানো, পর্যটন-রেমিট্যান্স থেকে আয় কমা এবং কৃষিতে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেয়ায় সবমিলিয়ে মারাত্মক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে একসময়ের স্বাবলম্বী এই দেশটি। এই পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেবার আছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে, যেকোনো সময় যেকোনো দেশ নতুন করে সংকটে পড়তে পারে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যদিও এখন পর্যন্ত বেশ ভাল অবস্থানে রয়েছে, তারপরেও ভবিষ্যত নানা রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় শ্রীলংকার পরিস্থিতি মাথায় রাখা যেতে পারে। সেইসঙ্গে আমাদের আশাবাদ, বন্ধুরাষ্ট্র শ্রীলংকা দ্রুতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-সংস্থার সাহায্যে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে স্বাভাবিক অবস্থায় যেতে পারবে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *