ভারী বৃষ্টি হলেই বিপদে পড়বে ঢাকা
1 min readভারী বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ডুবে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পাম্প মেশিনের অর্ধেকই চলছে না।
ঢাকা ওয়াসা হতে হস্তান্তরকৃত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এসব পাম্প নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছে দুই সিটি করপোরেশন। অপরদিকে পাম্প স্টেশনে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে ভারী বৃষ্টি হলে রাজধানীর মধ্যাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা ডুবে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা এ অবস্থার জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করছেন। তারা বলেছেন, ওয়াসা রামপুরা ও কমলাপুরে দুটি স্টর্ম ওয়াটার পাম্প স্টেশন স্থাপনের কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে।
তারা আরও অভিযোগ করেছেন, ২০১৬ সালে পাম্প স্টেশন দুটি স্থাপনের সময় ২২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে কোনও যন্ত্র স্থাপনের মাত্র ছয় বছরে তা নষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখন বিকল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন নিয়ে বিপাকে পড়েছে দুটি সংস্থা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চারদিকে নদীবেষ্টিত ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গার পাড়ে বেড়িবাঁধ ও পূর্বাঞ্চলে বালু নদীর তলদেশ উচুঁ হওয়া এবং খাল দখলের কারণে রাজধানীর মধ্যাঞ্চল বৃষ্টির পানির ‘বালতি’তে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে পানি অপসারণের জন্য রামপুরায় পাঁচটি, কল্যাণপুরে পাঁচটি, কমলাপুরে বড় তিনটি ও ছোট পাঁচটি, ধোলাইখালে তিনটি পাম্প রয়েছে।
এগুলো ঢাকা ওয়াসার অধীনে ছিল। এছাড়াও মিরপুরের গোড়ান চটবাড়িতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি পাম্প স্টেশন রয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ধোলাইখাল ও কমলাপুর পাম্প স্টেশন এবং উত্তর সিটিকে রামপুরা ও কল্যাণপুর পাম্প স্টেশন হস্তান্তর করে ঢাকা ওয়াসা।
ডিএনসিসির ড্রেনেজ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসনাত মোহাম্মাদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘রামপুরার পাঁচটি পাম্পের মধ্যে দুই নম্বর স্লটের পাম্পটির শ্যাফট আগেই ভাঙা ছিল। এটা মেরামত অযোগ্য। আমরা পাম্প স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ছয় নম্বর
স্লটে নতুন একটি পাম্প স্থাপন করবো। এতে খরচ হবে ২৪ কোটি টাকা। অন্য সব পাম্পের অবস্থাও খারাপ। পযায়ক্রমে সবই পরিবর্তন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর আমরা পাঁচটি পাম্পের মধ্যে মাত্র দুটি চালু করতে পেরেছি। ওই বছর ভারী বৃষ্টিপাত হলে বিপদ ছিল। আমরা জার্মানিভিত্তিক এবিবি কোম্পানির বিশেষজ্ঞ এনে পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে দুটি পাম্প চালু করেছিলাম।’
তার দাবি, ওয়াসা নিম্নমানের যন্ত্রপাতি পাম্প স্টেশনে ব্যবহার করেছে। এবার কম আরপিএম ও অধিক কার্যক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প কেনার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পাম্পের রিটেনশেন পন্ডে পানির লেভেল ৪.৬ থেকে ৪.৮। যা বিপৎসীমার কাছাকাছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির আরেক প্রকৌশলী বলেন, ‘বর্তমানে রামপুরা স্টেশনের তিনটি পাম্পের দুটি বিকল। পাম্প দুটির মেরামত দরকার। এ কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের দেখা নেই। হঠাৎ ভারী বৃষ্টি হলে কী হবে আল্লাহই ভালো জানেন।’
তিনি বলেন, ‘ধোলাইখালেরও তিনটি পাম্প অচল। তিনটিতেই জরুরি বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক মেরামত দরকার। এদিকে জুনেই পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। জুলাইয়ে সাধারণত পানি আরও বাড়ে। তাই ঢাকা ডুবে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘কমলাপুরে ওয়াসা স্থাপিত পাম্পে বিভিন্ন কোম্পানির পার্টস লাগানো রয়েছে। নতুন কোনও যন্ত্রে এমন হওয়ার কথা না।’
তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান দাবি করেন, ‘আমরা যখন পাম্পগুলো হস্তান্তর করেছি, তখন সবগুলোই ঠিক ছিল। পাম্পগুলো ঠিক না থাকার অভিযোগ মিথ্যা। পাম্প চালাতে হবে প্রতিবছর। আবার মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণও দরকার। এগুলো নিয়মিত না করলে যন্ত্র ঠিক থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘হস্তান্তরের আগে আমরা একটা পাম্প রিপ্লেস করতে চেয়েছিলাম।’
পাম্প বসানোর প্রকল্পের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই সুন্দর প্রকল্প ছিল। ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি নামানোর জন্য এটা চালু রাখতে হয়েছে আমাদের। এখনও রাখতে হবে। কারণ ঢাকাকে তো বালতি বানানো হয়েছে। সিটি করপোরেশন সে বালতি খোলার চেষ্টাই করছে না।’
ডিএসসিসির একটি দরপত্র হতে জানা যায়, কমলাপুরের বিকল পাম্প চালু করতে নতুন মোটর, পাইপ ও ভিএফডি প্যানেল লাগাতে হবে।
ডিএসসিসির পাম্প স্টেশনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকেীশলী সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক কাজের চাহিদা দিয়েছি ৬-৭ মাস আগে। তারাই এ কাজের কথা ভালো বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাফর আহমেদ ও নির্বাহী
প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মাহতাব আহমেদ জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে তাদের নিষেধ করা হয়েছে। তাই তারা এ বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারবেন না।