প্রযুক্তিপণ্যের বাজারে বছরের মাঝামাঝিতে স্বস্তি ফেরার আশা
1 min readকরোনার কারণে দীর্ঘদিন চীন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী দেশে আসেনি প্রযুক্তিপণ্য। এর মধ্যে আবার জাহাজ ও কন্টেইনার ভাড়া বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এ অবস্থায় দেশের প্রযুক্তিরপণ্যের বাজার এখনো বেশ চড়া। করোনা স্বাভাবিক হওয়ায় বাজারে মিলছে ক্রেতাদের পছন্দের পণ্য। তবে তাদের বেশি গুনতে হচ্ছে দুই থেকে চার হাজার টাকা। ক্রেতারা সিন্ডিকেটের কথা বললেও, ব্যবসায়ীরা বলছেন চলতি বছরের মাঝামাঝি স্বাভাবিক হতে পারে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার।
সরেজমিনে মিরপুর শাহআলী মার্কেট, আগারগাঁওয়ের আইডিবি কম্পিউটার সিটি, সায়েন্সল্যাবের মাল্টিপ্লান সেন্টারে ঘুরে দেখা যায়, পছন্দের পণ্য কিনতে দোকানে দোকানে ঘুরছেন ক্রেতারা। কোথাও পছন্দের ল্যাপটপ পেলেও মিলছে না মেমরি কার্ড। এমন হচ্ছে বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে। পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে সামান্য। তবে এখনো চড়া বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
রিয়াসাদ নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জাগো নিউজকে বলেন, ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের গ্লোবাল যে দাম বাংলাদেশে সে রকম হওয়ার কথা। কিছু টাকা বেশি হতে পারে শিপিং খরচের কারণে। কিন্তু বিভিন্ন কনফিগারেশনের ল্যাপটপের যে দাম চাওয়া হচ্ছে তা অনেক বেশি। গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ল্যাপটপের সংকট ছিল। তখন দাম ছিল আরও বেশি। এখন ল্যাপটপ আছে কিন্তু দাম সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা বেশি চাইছে।
তার অভিযোগ, প্রোডাকশন যেহেতু বন্ধ হয়নি সেহেতু ব্যবসায়ীরা পণ্য আনছেন। কিন্তু সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট বাণিজ্যকে ইঙ্গিত দিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, প্রত্যেক প্রোডাক্ট ইম্পোর্টারের কাছেই স্টক আছে। তারা বিনা কারণে স্টক করে সেল বন্ধ রাখেন। বলেন প্রোডাক্ট নেই। পরে যখন আমরা বলি খুব প্রয়োজন তখন তারা বলেন দেওয়া যেতে পারে ভাই, দাম তো বাড়তি। আমরা বেশি দামে পণ্য কিনলে ক্রেতাদের কীভাবে কম দামে দেবো।
যদিও সিন্ডিকেটের কথা অস্বীকার করছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাস পুরোটাই চায়নিজ নিউইয়ারের কারণে বন্ধ ছিল। এছাড়া শিপমেন্ট খরচ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। চলতি মাসে প্রযুক্তিপণ্যের বাজার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বাজারে সরবরাহ বেড়েছে ল্যাপটপসহ অন্যান্য পণ্যের। নেটওয়ার্কিং পণ্য, রাউটার, সিকিউরিটি ক্যামেরা, গ্রাফিক্স কার্ড, প্যানেলের সংকট রয়েছে। করোনা কমছে, বাজারও শান্ত হচ্ছে। জুলাই-আগস্টে বাজার অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সদস্য ও সাইবার কমিউনিকেশনের স্বত্বাধিকারী নাজমুল আলম ভূইয়া বলেন, করোনার কারণে চায়নার বেশিরভাগ ফ্যাক্টরিই বন্ধ ছিল। তারপর চায়নিজ নিউইয়ার গেলো ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রোডাক্টশন কম কিন্তু বিশ্বব্যাপী ডিমান্ড বেশি।
তিনি বলেন, চায়না থেকে ঢাকা ২০ ফুটের কন্টেইনার ভাড়া ছিল ১২ থেকে ১৫শ ডলার। সেটা আট হাজার ডলার হয়েছে। এসব কিছুর জন্য প্রযুক্তিপণ্যের দাম একটু বাড়তি। আগামী জুলাই-আগস্টের আগে আর কমবে না। চায়নার প্রোডক্টশন যদি ঠিক হয়ে যায় বছরের মাঝামাঝি বাজার স্বাভাবিক হতে পারে।
আইটি পার্ক কম্পিউটারের ম্যানেজার মো. শামীম ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, চায়না-দুবাই থেকে ইউজড ল্যাপটপ আসে। সেগুলোর দাম ১৫শ থেকে তিন হাজার টাকা বেশি। এইচপি ব্র্যান্ডের জি থ্রি নামে একটা ল্যাপটপ বহুল প্রচলিত। মার্কেটে এটা অনেক ছিল। কিন্তু এখন একটু কম আসছে। গত বছরও ২৭ হাজার টাকায় এই ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ বিক্রি করতে পেরেছি। এটার চাহিদা আছে, কিন্তু আমরা আনতে পারছি না। অনলাইনে দেখা যায় দাম ২৭ হাজারই আছে। কিন্তু ২৯ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও আমাদের কিছু থাকছে না।
‘মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে অতিমারি করোনা। ঘরে বসেই অফিসের কাজ করতে হয়েছে অধিকাংশ চাকরিজীবীকে। শ্রেণিকক্ষের কাজ ও ক্লাস করতে হয়েছে অনলাইনে। ফলে ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনসেটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ।’
তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজ খুলে গেছে। ল্যাপটপসহ, নেটওয়ার্কিং পণ্যের চাহিদাও বেশি ছিল করোনাকালে। ক্রেতাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে, কেননা তখন পণ্যের ঘাটতি ছিল। অন্য সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি বেচাকেনা হয়েছে। তবে এখন যে সংকট এটা কবে ঠিক হবে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নাজমুল আলম ভূইয়া নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের ভালো বেচাকেনা হয়েছে। কিন্তু একমাস ধরে সেটা একটু কমেছে। কেননা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সহনশীল অবস্থায় চলে আসছে। এখন যেহেতু অনলাইনে ক্লাস কমে গেছে। আমাদের সেল একটু কমে গেছে।