November 24, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

‌‘দুই দোকানের কর্মীদের বিরোধে’ জড়ানো হয় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের

1 min read

টানা দুই দিন দফায় দফায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কেউ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি, কেউবা কমদামে পণ্য কেনা নিয়ে সংঘর্ষ বলে ধারণা করছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সূত্রপাত ওই মার্কেটের দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মীদের নিজেদের বিরোধ থেকে।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল)  সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মার্কেটের চার নম্বর গেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে সন্ধ্যায় কথা কাটাকাটি থেকেই সংঘাতের শুরু। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউমার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো।

মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত ওয়েলকাম ফাস্টফুডের দুই কর্মচারীর মধ্যে। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যায়।

এরপর রাত ১১টার দিকে বাপ্পীর সমর্থক ১০-১২ জন যুবক আসেন নিউ মার্কেটে। এসময় তারা হাতে রামদা নিয়ে আসে। তারা ক্যাপিটাল দোকানটিতে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ায়। সেখানে কাওসার সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেয়। বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে নিয়ে এসে মার্কেটে হামলা চালায়।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয় যে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা হামলা করেছে। উত্তাল এই পরিস্থিতিতে এককভাবে শুধু ছাত্রদের দায়ী করছে না ব্যবসায়ী সমিতিও।

নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দোকানের কর্মচারীদের সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা কলেজ থেকে কিছু লোকজন আসছিলো। তারপর তাদের মধ্যে ঝামেলা হলে তারা কলেজে গিয়ে বলেন, তারা মার্কেটে খেতে আসছিলো এসময় তাদের মারধর করা হয়েছে। সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যবসায়ীও বিতণ্ডার এই ঘটনা জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান  বলেন, সোমবার রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের শুরু থেকেই বিভিন্ন রকম তথ্য পাচ্ছিলাম আমরা।

তিনি বলেন, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আমাদের গোয়েন্দা টিমও মাঠে কাজ করে। পাশাপাশি একাধিক ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্যও নেওয়া হয়। তবে কারণ যেটিই হোক না কেন পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ঘটনায় বুধবার (২০ এপ্রিল) মামলা হবে। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও আহত-নিহতের ঘটনায় একাধিক মামলায় একাধিক আসামি করা হতে পারে।

নিহতের স্ত্রী ডালিয়া আক্তার জানান, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় আহত অবস্থায় নাহিদ রাস্তায় পড়েছিলেন। সকালে কামরাঙ্গীরচর দেওয়ান বাড়ি এলাকার বাসা থেকে তিনি কর্মস্থলে আসেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বামী নাহিদের হাসপাতালে ভর্তির সংবাদ পান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে রাত পৌনে দশটার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। আহত শিক্ষার্থীদের কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঢাকা কলেজের চিকিৎসক, ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা আহত শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে। তখন নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরু হয়, যা চলে রাত আড়াইটা পর্যন্ত। মধ্যরাতে দুই পক্ষকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

তখন শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। কেনাকাটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়।

একপর্যায়ে দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করা হয়- এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে নিউমার্কেট এলাকায় যায় ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী। পরে ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

পরদিন মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ব্যবসায়ীরা সড়কে চলে এলে দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। সকাল সাড়ে ১০টার পর নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত এলাকায় থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে বেলা ১১টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের গেটে ও ব্যবসায়ীরা চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন।

এরপর ব্যবসায়ীরা নিউমার্কেট, গাউসিয়া মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেট, চাঁদনী চক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।

ব্যবসায়ীদের একটি অংশ সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা সম্মুখ লড়াইয়ে অংশে নেয়। আরেকটি অংশ ইট ও পাথর সরবরাহ করে।

এছাড়া দুপুরে ঢাকা কলেজের আবাসিক হল আগামী ৫ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে বিকেলের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর কিছুক্ষণ পরই শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। একইসঙ্গে অধ্যক্ষের অপসারণসহ ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার বিচার দাবিতে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২টার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সাত কলেজ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *