এইচএসসি পরীক্ষা এ বছর সরাসরি নয়: শিক্ষামন্ত্রী
1 min readকরোনা পরিস্থিতির কারণে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। এর পরিবর্তে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড়ের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের পর ডিসেম্বরে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। বুধবার (৭ অক্টোবর) ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের গড়ের ভিত্তিতে এইচএসসির মূল্যায়নটা করবো। ডিসেম্বরে মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করা হবে।’ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘মূল্যায়ন হবে আন্তর্জাতিকমানের।’
দীপু মনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে গত ২২ মার্চ ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আমরা স্থগিত করি। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় মূলত শিক্ষা কার্যক্রমের আলোকে শিখন কার্যক্রম কোন অবস্থায় আছে সেটা যাচাইয়ের জন্য। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেশে বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করে। শিক্ষা অর্জনের একটি পর্যায় শেষ করে তারা একটি সনদ পান। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এর আওতায় পরীক্ষার্থী হচ্ছেন ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন। অনিমিয়ত পরীক্ষার্থী রয়েছেন দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ এক লাখ ৬০ জাহার ৯২৯ জন। দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫১ হাজার ৩৪৮ জন। নিয়মিত-অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর বাইরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী রয়েছেন তিন হাজার ৩৯০ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছেন ১৬ হাজার ৭২৭ জন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে এর কোনও নিশ্চয়তা নেই। এটা আমরা সবাই বুঝতে পারছি। আমাদের এই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়, সেটা হলো যেকোনও পরিমার্জনসহ পরীক্ষা পদ্ধতির যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা। পরীক্ষা চলাকালীন সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি কীভাবে এড়ানো বা হ্রাস করা যায়। বিদ্যমান প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় সে বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সাতটি বিষয়ের ১৩টি পত্রে গ্রহণ করা হয়। ছয়টি বিষয়ের দুটি করে পত্র এবং তথ্য প্রযুক্তির একটি পত্র। বাংলা ও ইংরেজির দুটি করে চারটি এবং তথ্য প্রযুক্তির একটিসহ পাঁচটি সব শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যিক। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের নৈর্ব্যচনিক বিষয় হচ্ছে ৪০টি। তাই এই পরীক্ষা নিতে ৩০ থেকে ৩২ কর্মদিবস প্রয়োজন হয়। দুই হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। পরীক্ষা কেন্দ্রে এক বেঞ্চে দুই জন করে আসন দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে একজন করে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, কারণ সেক্ষেত্রে দ্বিগুণ পরীক্ষা কেন্দ্র প্রস্তুত করতে হবে। প্রশ্নপত্র প্যাকেটজাত করা হয়েছে। বিদ্যমান কেন্দ্রভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্যাকেট ভেঙে নতুন প্যাকেট করারও সুযোগ নেই। এছাড়া কেন্দ্র দ্বিগুণ করতে হলে প্রশাসনিক জনবল দ্বিগুণ করতে হবে। শুধু আমাদের জনবল নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের জনবল দ্বিগুণ করার প্রয়োজন হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিষয় কমিয়ে কিংবা সিলেবাস কমিয়ে হয়তো পরীক্ষা নেওয়া যায়, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে বিষয় কমিয়ে নেবো, সেই বিষয়টিতে কোনও পরীক্ষার্থীর ভালো প্রস্তুতি ছিল। পরীক্ষা নেওয়া শুরু হলে পরীক্ষার্থী বা তার পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে কী হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় কী করা হয়েছে তা আমরা দেখেছি। বেশিরভাগ জায়গায় পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বা এখনও স্থগিত রয়েছে। আমাদের কাছে অবশ্যই পরীক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পরীক্ষা বোর্ডগুলোর জন্য একেবারেই নতুন। ফলে কীভাবে মূল্যায়ন করা হলে ফলাফল দেশে ও বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়গুলোও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দুটি পাবলিক পরীক্ষা অতিক্রম করে এসেছে জেএসসি ও এসএসসি। সেই দুটি পরীক্ষায় তাদের যে ফলাফল নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মূল্যায়নের সুপারিশ পেতে কমিটি গঠন
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিভাগ পরিবর্তনের ফলে মূল্যায়ন সঠিক হবে না এমন চিন্তা থাকতে পারে। সে বিষয়গুলো দেখবার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপারিশ করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটি গঠন করেছি। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। শিক্ষা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি থাকবেন এবং আমাদের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান সদস্য হিসেবে থাকবেন। যারা বিভাগ পরিবর্তন করেছেন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’