November 23, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

যেসব কারণে করোনায় মৃত্যু বেশি ঢাকায়

1 min read

দেশের সর্বাধিক আধুনিক হাসপাতাল ঢাকায় থাকার পরও করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে এই বিভাগে। ভাইরাসটির সংক্রমণে দেশে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৮৬ জন মারা গেছেন, যার অর্ধেকের বেশি মৃত্যু হয়েছে শুধু ঢাকায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত জনঘনত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বালাই না থাকায় ঢাকায় সংক্রমণ বেশি, তাই মৃত্যুও বেশি। তবে অস্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ ও মানসিক চাপের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি থাকা, বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হওয়াও ঢাকায় মৃত্যুহার বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকায় অধিক টেস্টের কারণে বেশি রোগী শনাক্ত হওয়া ও চিকিৎসার জন্য অনেকে ঢাকায় এসে মারা যাওয়ায় খাতা-কলমে রাজধানীতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে সারা দেশে মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের, যা মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া চারজন চট্টগ্রাম এবং একজন করে রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ৬ হাজার ৯৮৬ জন, যার মধ্যে ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৫ জনের (৫৪ দশমিক ৩২ শতাংশ)। মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগে মৃত্যুর হার ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোয় মৃত্যুর হার ৮ শতাংশের নিচে। অথচ, করোনা রোগীর চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি ও আধুনিক হাসপাতালগুলো ঢাকায় অবস্থিত। সারা দেশের মোট ৫৬৭টি আইসিইউর মধ্যে ২৮৫টির অবস্থান ঢাকা মহানগরীতে।

এ ব্যাপারে ইউজিসি অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক) ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘‘মানসিক চাপ, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, কম ঘুম, ফাস্টফুড নির্ভরতাসহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন প্রণালির কারণে ঢাকায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি। এসব রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া ঢাকায় জনঘনত্ব বেশি। মানুষ গাদাগাদি করে চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। তাই সংক্রমণ বেশি। মৃত্যুও বেশি।’’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হিসাবেও কিছু গরমিল থাকতে পারে। যেহেতু ঢাকায় পরীক্ষা বেশি, তাই রোগীও শনাক্ত হচ্ছে বেশি। ঢাকার বাইরে রোগী শনাক্ত বাড়লে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও হয়তো বদলে যেত।’’

প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ শনাক্তে গতকাল পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫২টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই হয়েছে ৬০ শতাংশের বেশি নমুনা পরীক্ষা। বাকি ৪০ শতাংশের কম পরীক্ষা হয়েছে সারা দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপজ্জনক মাত্রায় বায়ুদূষণের কারণে রাজধানীতে ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এটা করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া মানুষ যত্রতত্র থুতু ও কফ ফেলছে। তা ধুলোর সঙ্গে মিশে নানাভাবে মানুষের শরীরে ঢুকতে পারে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’র প্রতিবেদন অনুযায়ী গতকাল বিকাল ৫টা ৩৩ মিনিটে বায়ুমান সূচকে (একিআই) ২০৯ স্কোর নিয়ে ঢাকা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত নগরী। চলতি মাসের ৫ তারিখ একিউআই স্কোর ২৬৩ নিয়ে দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল ঢাকা। একিআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ এবং অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভিতরে থাকার এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস আমদানিকৃত রোগ। ঢাকা বাংলাদেশের প্রধান প্রবেশ পথ। এ ছাড়া ঢাকায় জনঘনত্ব বেশি। এখানে বড় বড় হাসপাতাল থাকলেও কোনো স্বাস্থ্য কাঠামো নেই, ঠিক যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। বায়ুদূষণও বেশি। বায়ুদূষণ শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্ষতিসহ নানা রোগ সৃষ্টি করে, যা করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বাইরে থেকেও অনেক রোগী ঢাকায় চিকিৎসা করাতে এসে মারা যাচ্ছেন। করোনায় মৃত্যুর সব মাপকাঠিতে ঢাকা এগিয়ে।

About The Author