November 24, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

রক্তদান নিয়ে আমাদের যত ভুল ধারণা

1 min read

অনেকেই রক্ত দান নিয়ে মনের মধ্যে একটা বিরূপ ধারণা পোষন করে রাখেন। তারা ভাবেন রক্ত দিলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।মনে করেন শরীর শুকিয়ে যায়, শক্তিও নিঃশেষ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, রক্তদানের রয়েছে নানা উপকার।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল জানান, বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় রক্তদাতার সংখ্যা এখনো নগণ্য। দেশে বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্ত সংগ্রহ হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ। এ ছাড়া সংগ্রহকৃত রক্তের মাত্র ৩০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের থেকে। নিজের পরিবারের সদস্য বা পরিচিতজন না হলে এখনো বেশির ভাগ মানুষ রক্তের জন্য নির্ভর করেন পেশাদার রক্তদাতার ওপর। রক্তের অভাবের কারণে প্রতিবছর বহু রোগীর প্রাণ সংকটের মুখে পড়ে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বের ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়ে থাকে। তবে উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছায় রক্তদানের হার প্রতি এক হাজারে ৪০ জন হলেও উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি এক হাজারে চারজনেরও কম। প্রতিবছরের ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। মূলত যাঁরা মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছায় ও বিনা মূল্যে রক্তদান করেন তাঁদের দানের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দিতে, সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দিবসটি পালন করা হয়।

আসুন জেনে নেই কারা রক্ত দিতে পারবে না:

যারা এইচআইভি পজিটিভ (এইডস আক্রান্ত), হেপাটাইটিস, সিফিলিস, টিবি, এবং রক্ত-বাহিত আরো কিছু রোগে যারা আক্রান্ত তারা রক্ত দান করতে পারবেন না। ঠান্ডা, সর্দিজ্বর, খুশখুশে কাশি, পেট খারাপ থাকলেও রক্তদান করতে পারবেন না।

যে কোন অসুখ থেকে সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠার ১৪ দিন পর আপনাকে রক্তদান করতে দেওয়া হবে। আপনি যদি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে থাকেন তবে কোর্স শেষ হওয়ার সাত দিন পর আপনি রক্ত দিতে পারবেন। অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে একেক দেশে একেক রকম নিয়ম রয়েছে।

আপনি যদি অন্তঃসত্ত্বা কিংবা প্রসূতি হন, শিশুকে স্তন্যদান করেন, কিংবা আপনার যদি অ্যাবোরশন হয়ে থাকে, তাহলে রক্তে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে রক্তদানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

রক্তদানের জন্য নূন্যতম বয়স হচ্ছে ১৬ বছর। বেশিরভাগ দেশে এই বয়সী তরুণদের রক্তদানের ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতি লাগে। রক্ত দেওয়ার সময় এই বয়সী তরুণদের জ্ঞান হারানোর ঝুঁকিও বেশি থাকে।

নিয়মিত রক্তদানকারীদের কোন সর্বোচ্চ বয়সসীমা নেই। কোন কোন দেশে এটা ৬০-৭০ বছর। যেসব দেশে গড় আয়ু কম সেখানে প্রথমবারের মতো রক্তদানকারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হতে হয়।

যেসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রক্তদানে বাধা হয়ে দাঁড়ায়:

জীবনে নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। রক্তদানের ক্ষেত্রে সেগুলো সমস্যা হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ যৌনাচার’, যেমন বহুগামিতা, অর্থের বিনিময়ে যৌনসংগম, পুরুষ সমকামিতা ইত্যাদি রক্তদানে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই রক্তদানের অনুমতি দেওয়া হয়। ইনজেকশনের মাধ্যমে যারা নেশা করেন তারাও রক্ত দিতে পারবেন না।

মশা-বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং যিকা ভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে যেসব দেশে সেখান থেকে আসা কারও দেহ থেকে রক্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে।

অনেক দেশই এসব ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কাজে নিয়োজিতদের কাছ থেকে রক্ত গ্রহণ করে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপক-ভিত্তিক কোন নিষেধাজ্ঞা বৈষম্য তৈরি করতে পারে।

রক্তদানের উপকারিতা:

  •  রক্তদানের মাধ্যমে আপনি অন্যের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
  • গবেষণা বলছে, নিয়মিত রক্তদানের ফলে কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
  • বছরে তিনবার রক্ত দিলে অস্থিমজ্জার রক্তকণিকা উৎপাদনব্যবস্থা আরো সক্রিয় হয় এবং নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরির হার বাড়ে।
  •  যাঁদের রক্তে আয়রন জমার প্রবণতা আছে, রক্তদান তাঁদের জন্য ভালো।
  •  রক্ত দিলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, কখনো রক্তচাপও নিয়ন্ত্রিত হয়। ফলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
  •  দেহে হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়ার জীবাণু আছে কি না রক্তদান উপলক্ষে বিনা খরচে অনেকেরই তা জানা হয়ে যায়।
  •  রক্ত দিলে যে ক্যালরি খরচ হয়, তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

রক্ত পরিসঞ্চালনে সাবধানতা

আমাদের দেশে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত পরিসঞ্চালন বিষয়টাকে খুব হালকাভাবে দেখা হয়। দেশে হেমাটোলজিস্ট ও ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিশেষজ্ঞের সংখ্যা খুব কম হওয়ায় এসংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের জ্ঞানচর্চাও কম। অপ্রয়োজনীয় রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রবণতা এ দেশে অনেক বেশি। আয়রন ডেফিসিয়েন্সির ক্ষেত্রে এই অপ্রয়োজনীয় রক্ত পরিসঞ্চালনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। থ্যালাসেমিয়া ট্রেইটের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। বেশির ভাগ আয়রন ডেফিসিয়েন্সিতেই রক্ত পরিসঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু দেওয়া হয়। হিমোগ্লোবিন দশের নিচে নামলেই আমরা অনেকেই রক্ত দিতে আগ্রহী হয়ে উঠি।

অনেক ক্ষেত্রে ঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ও করা হয় না। হিমোগ্লোবিন কম দেখলেই রক্ত দিয়ে দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগ নির্ণয় করা কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা খুবই সাধারণ একটি বিষয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আয়রন সাপ্লিমেন্ট দিলে দ্রুত পূরণ হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আমাদের দেশে এ রকম রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত পরিসঞ্চালনের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেশি। রোগীদের মধ্যেও এজাতীয় প্রবণতা কাজ করে। হিমোগ্লোবিন কম দেখলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীরাও অস্থির হয়ে ওঠেন রক্ত নেওয়ার জন্য।

অনিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের কারণে হেপাটাইটিস বি, সি, সিফিলিসসহ নানা রকম ইনফেকশন হতে পারে। অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ফুসফুসের সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। খুব বিরল হলেও গ্রাফট ভারসাস হোস্ট ডিজিজ হতে পারে।

শুনতে একটু অতিরঞ্জিত মনে হলেও সত্য যে রক্ত পরিসঞ্চালন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতোই একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। তাই রক্ত পরিসঞ্চালনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত।

 

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *