April 27, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

নেয়ামতের বর্ণনায় শুরু হলো ক্ষমার দশক

1 min read

ক্ষমার দশকের প্রথম তারাবিহ আজ। হাফেজে কোরআনগণ ১১ রোজার প্রস্তুতিতে তারাবি-তাহাজ্জুদ পড়বেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। ক্ষমা পেতে রোজাদাররা অবিশ্বাসীদের আকাঙ্ক্ষার কথা যেমন ত‍ুলে ধরবেন তেমনি আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত গুণে শেষ করতে না পারার আয়াতও তেলাওয়াত করা হবে। সুরা নাহলে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَةَ اللّهِ لاَ تُحْصُوهَا إِنَّ اللّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১৮)

আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করার পরপরই তাঁর ক্ষমাশীল ও করুণাময় হবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার যে নেয়ামত মানুষের উপর আছে তা দাবি করছে যে মানুষ সর্বদা তাঁর শোকরগুজার হবে। কিন্তু আল্লাহ তাঁর অপার মহিমায় তাদের অপরাধ মার্জনা করেন।

যদি তোমাদেরকে তার প্রতিটি নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে বাধ্য করা হতো, তবে তোমরা কেউই সেটা করতে সক্ষম হতে না। যদি এ ধরণের নির্দেশ আসতো তবে তোমরা দুর্বল হয়ে যেতে এবং তা করা ছেড়ে দিতে আর যদি তিনি এর জন্য তোমাদেরকে আজাব দিতেন তবে তিনি জালেম বিবেচিত হতেন না। কিন্তু আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল। অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। অল্প কিছুরই শাস্তি দিয়ে থাকেন। (ইবনে কাসির)

তোমরা যদি তার কোন কোন নেয়ামতের শোকর আদায় করতে গিয়ে কিছুটা ভুল করে ফেল, তারপর তাওবা করো এবং তাঁর আনুগত্য ও সস্তুষ্টির দিকে ফিরে আসো তবে তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। তাওবা ও তার দিকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি তো তোমাদের জন্য অতিশয় দয়ালু।’ (তাবারি)

ক্ষমার দশকের প্রথম তারাবিতে হাফেজে কোরআনগণ সুরা হিজর ও সুরা নাহল তেলাওয়াত করবেন। সংক্ষেপে এ দুই সুরার আলোচিত বিষয়গুলোর বিশেষ দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হলো-

সুরা হিজর : আয়াত ১-৯৯

মদিনার মধ্যবর্তী অঞ্চল ও সিরিয়ার নাম ‘হিজর’। এ স্থানে বসবাসকারীরা ছিল নাফরমান। আল্লাহর অবাধ্যতায় তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাদের ধ্বংসের বর্ণনা রয়েছে এ সুরায়। তাদের মতো যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতায় চলে তাদের জন্যও রয়েছে অশুভ পরিণতি। এটি মুমিন মুসলমানদের জন্য শিক্ষণীয় একটি সুরা।

ইসলাম বিদ্বেষীদের মনোভাব, ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রতি আল্লাহর হুশিয়ারি, মানবজাতির উত্থান-পতনের ইতিবৃত্ত, শয়তানের ধোঁকার আলোচনা করা হবে আজ। কাওমে লুতের চারিত্রিক বিকৃতি ও ধ্বংসের ঘটনা গুরুত্ব পেয়েছে এ সুরায়।

সুরার শুরুতেই অবিশ্বাসীদের মুসলিম হওয়ার আকাঙ্খার কথা বর্ণিত হয়েছে। তারা আফসোস করে বলতে থাকবে-

رُّبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ كَانُواْ مُسْلِمِينَ

‘কাফেররা আকাঙ্ক্ষা করবে যে, কি চমৎকার হত! যদি তারা মুসলমান হত।’ (সুরা হিজর : আয়াত ২)

এ আয়াত সম্পর্কে কোরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতে এসেছে-

কখন কাফেরগণ সেটা আকাংখা করবে? কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, তারা এটা মৃত্যুর সময় কামনা করবে।’ (ইবনে কাসির) তবে এ ব্যাপারে একটি হাদিসের দিকে তাকালে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, এটা তারা আখেরাতে কামনা করবে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নামবাসীরা যখন জাহান্নামে একত্রিত হবে, তারা তাদের সঙ্গে কিছু গুনাহগার মুমিনদেরকেও দেখতে পাবে, তখন তারা বলবে, তোমাদের ইসলাম তোমাদের কোনো কাজে এলো না, তোমরা তো দেখছি আমাদের সঙ্গে জাহান্নামেই রয়ে গেলে। তারা বলবে, আমাদের কিছু গুনাহ ছিল যার কারণে আমাদের পাকড়াও করা হয়েছে। তারা যা বলেছে আল্লাহ তা শুনলেন।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তখন কেবলার অনুসারী মুসলিমগণকে বের করার নির্দেশ দেওয়া হবে। আর তখন কাফেরগণ আফসোস করে বলবে, হায়! আমরা যদি মুসলিম হতাম তাহলে তারা যেভাবে বের হয়ে গেছে সেভাবে আমরাও বের হতে পারতাম। সাহাবি হজরত আবু মুসা আল-আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়লেন, ‘আলিফ-লাম-রা, এগুলো মহাগ্রন্থের আয়াত, সুস্পষ্ট কুরআনে কখনো কখনো কাফিররা আকাংখা করবে যে, তারা যদি মুসলিম হতো।'(মুসতাদরাকে হাকেম)

এভাবে কাফেররা যখন প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবে তখন লজ্জিত হবে এবং আফসোস করে ঈমান আনার জন্য আকাংখা করতে থাকবে। কিন্তু তাদের সে আকাংখা কোনো কাজে লাগবে না। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ وُقِفُوۡا عَلَی النَّارِ فَقَالُوۡا یٰلَیۡتَنَا نُرَدُّ وَ لَا نُکَذِّبَ بِاٰیٰتِ رَبِّنَا وَ نَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

‘আপনি যদি দেখতে পেতেন যখন তাদেরকে আগুনের পাশে দাঁড় করানো হবে এবং তারা বলবে, হায়! যদি আমাদেরকে আবার ফেরত পাঠানো হত তবে আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনকে অস্বীকার করতাম না এবং আমরা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সুরা আনআম : আয়াত ২৭)

قَدۡ خَسِرَ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِلِقَآءِ اللّٰهِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَآءَتۡهُمُ السَّاعَۃُ بَغۡتَۃً قَالُوۡا یٰحَسۡرَتَنَا عَلٰی مَا فَرَّطۡنَا فِیۡهَا ۙ وَ هُمۡ یَحۡمِلُوۡنَ اَوۡزَارَهُمۡ عَلٰی ظُهُوۡرِهِمۡ ؕ اَلَا سَآءَ مَا یَزِرُوۡنَ

যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি হঠাৎ তাদের কাছে যখন কেয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে; হায়! এটাকে আমরা যে অবহেলা করেছি তার জন্য আক্ষেপ। তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে; দেখুন, তারা যা বহন করবে তা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৩১)

وَ یَوۡمَ یَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰی یَدَیۡهِ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِی اتَّخَذۡتُ مَعَ الرَّسُوۡلِ سَبِیۡلًا

‘জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজের দুই হাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ২৭)

কোরআন নাজিলের মাস রমজান। এ পবিত্র মাসে আল্লাহ তাআলা কোরআন নাজিল করে তা হেফাজতের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন স্বয়ং তিনি। সে কারণে কোরআন থাকবে নিরাপদ, অবিকল ও অবিকৃত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ

‘আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৯)

রমজানে আল্লাহ তাআলা বিতাড়িত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখেন। এ ছাড়াও শয়তানের প্রতি আল্লাহ অগ্নিস্ফুলিগ্ন ছুড়ে মারেন। যাতে মানুষ শয়তানের ধোকা থেকে বেঁচে থাকে। আল্লাহ বলেন-

 وَ حَفِظۡنٰهَا مِنۡ کُلِّ شَیۡطٰنٍ رَّجِیۡمٍ – اِلَّا مَنِ اسۡتَرَقَ السَّمۡعَ فَاَتۡبَعَهٗ شِهَابٌ مُّبِیۡنٌ

‘আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি। কিন্তু যে চুরি করে শুনে পালায়, তার পশ্চাদ্ধাবন করে উজ্জ্বল উল্কাপিন্ড।’ (সুরা হিজর : আয়াত ১৭-১৮)

ক্ষমার দশকের প্রথম তারাবিতে হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে সেই চিরন্তন মহাসত্য বাণী। যে গবেষণায় বিজ্ঞানীরা হয়রান পেরেশান। আল্লাহ তাআলাই মানুষকে জীবন দান করেন আবার মৃত্যুদান করেন। কেউ আগে আসে আগে যায়, আবার কেউ পরে আসে পরে যায়। আল্লাহ বলেন-

وَ اِنَّا لَنَحۡنُ نُحۡیٖ وَ نُمِیۡتُ وَ نَحۡنُ الۡوٰرِثُوۡنَ – وَ لَقَدۡ عَلِمۡنَا الۡمُسۡتَقۡدِمِیۡنَ مِنۡکُمۡ وَ لَقَدۡ عَلِمۡنَا الۡمُسۡتَاۡخِرِیۡنَ

‘আমিই জীবনদান করি, মৃত্যুদান করি এবং আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। আমি জেনে রেখেছি তোমাদের অগ্রগামীদেরকে এবং আমি জেনে রেখেছি পশ্চাদগামীদেরকে।’ (সুরা হিজর : আয়াত ২৩-২৪)

মানুষ ও জ্বীনের সৃষ্টি সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট বর্ণনা। আল্লাহ কিভাবে কোন উপাদান দিয়ে মানুষ এবং জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন তা বর্ণনা করেছেন। এ মানুষ সৃষ্টির পর আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা মানুষকে সেজদা করলে করেনি ইবলিস, এ কথাও আবার তিনি এ সুরায় উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন-

‘আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। এবং জিনকে এর আগে লু এর আগুনের দ্বারা সৃজন করেছি। আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনম, আমি পচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব। অতপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যাবে। তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করল। কিন্তু ইবলিস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না। আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, তোমার কি হলো! যে তুমি সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হলে না? (সে) বলল, আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরি ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। তুমি বিতাড়িত। আর তোমার প্রতি ন্যায় বিচারের দিন পর্যন্ত অভিশাপ।’ (সুরা হিজর : আয়াত ২৬-৩৫)

শয়তান সে দিন থেকেই মুমিন মুসলমানরে প্রতি শত্রুতা পোষণ করে আসছে। আল্লাহর সঙ্গে মুমিন মুসলমানকে পথভ্রষ্ট করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে শয়তান। সে কথাও ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ বলেন-

‘ সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, তোমাকে অবকাশ দেয়া হল। সেই অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার পলনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৩৬-৩৯)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে শয়তানের পথ পরিহার করে মুত্তাকিদের পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার কথা বলেছেন। আর তাতে মুত্তাকিদের ঠিকানা হলো জান্নাত। আল্লাহ বলেন-

‘নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা বাগান ও নির্ঝরিনীসহূহে থাকবে। বলা হবে, এগুলোতে নিরাপত্তা ও শান্তি সহকরে প্রবেশ কর। তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে। সেখানে তাদের মোটেই কষ্ট হবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিস্কৃত হবে না। আপনি আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৪৫-৪৯)

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভের সান্ত্বনা দিয়েছেন। মুমিন বান্দার জন্য রহমতের দরজা সব সময় খোলা। তাওবার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

এছাড়াও এ সুরায় বৃদ্ধ বয়স হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সন্তান লাভের সুসংবাদ দিয়েছেন। আবার গোনাহের কারণে নবী লুত ও সালেহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা বলেছেন। যা মানুষের ঈমানকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে নিয়ে আসবে।

সুরা নাহল : আয়াত ১-১২৮

সুরা নাহলও মক্কায় অবতীর্ণ। এর প্রেক্ষাপট ব্যাপক এবং সুপ্রশস্ত। বিশেষ করে এ সুরায় এত বেশি নিয়ামাতের কথা এসেছে, যার কারণে এ সুরাটি সুরাতুন নিয়াম নামেও পরিচিত। এ সুরায় আল্লাহর গুণ-বৈশিষ্ট্য, বিশ্বনবির প্রতি ওহি ও পরকাল- এ তিনটি বিষয়ে গভীর আলোচনা করা হয়েছে।

এ সুরায় মহান রবের অগণিত নেয়ামতের সেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে, বান্দা চাইলেও তার নেয়ামত গুণে শেষ করতে পারবে না। আল্লাহ বলেন-

وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَةَ اللّهِ لاَ تُحْصُوهَا إِنَّ اللّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

‘যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১৮)

সব জগতের সব সৃষ্টিই মহান আল্লাহর ইবাদত করে। আল্লাহকে ভয় করে। কেননা সব নেয়ামত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দা পেয়ে থাকে। যার বর্ণনা এভাবে ওঠে এসেছে। আল্লাহ বলেন-

‘যা কিছু নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আছে তা তাঁরই ইবাদত করা শাশ্বত কর্তব্য। তোমরা কি আল্লাহ ব্যতিত কাউকে ভয় করবে? তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতপর তোমরা যখন দুঃখে-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই কাছে কান্নাকাটি কর। এরপর যখন আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দুরীভূত করে দেন, তখনই তোমাদের একদল স্বীয় পালনকর্তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করতে থাকে। যাতে ঐ নেয়ামত অস্বীকার করে, যা আমি তাদেরকে দিয়েছি। অতএব মজা ভোগ করে নাও-সত্বরই তোমরা জানতে পারবে। তারা আমার দেয়া জীবনোপকরণ থেকে তাদের জন্যে একটি অংশ নির্ধারিত করে, যাদের কোনো খবরই তারা রাখে না। আল্লাহর কসম, তোমরা যে অপবাদ আরোপ করছ, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৫২-৫৬)

এছাড়াও হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিলকৃত বিধানের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনাকারী তাওহিদ, ঈমান, কুফরি, হিদায়াত ও গোমরাহী সংক্রান্ত মানবীয় ইচ্ছা ও আল্লাহর ফয়সালার বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।

হালালকে হারাম করা ও হারামকে হালাল করা- এ বিষয়ে পৌত্তলিকদের ধ্যান-ধারণার আলোচনা ও আল্লাহর পথে হিজরত, মুসলমানদেরকে নির্যাতনের মাধ্যমে ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করা প্রসঙ্গও পাঠ করা হবে আজ।

ঈমান গ্রহণের পর পুনরায় কুফরি গ্রহণ করলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে শাস্তি নির্ধারিত করা হয়েছে এ সুরার মাধ্যমে। পারস্পারিক লেন-দেন, ন্যায়-বিচার, পরোপকার, আল্লাহর পথে দান ও ওয়াদা পালনের বিষয়াবলীও আলোচিত হয়েছে এ সুরায়।

সর্বোপরি গোটা মানবজীবন, তার ঘটনাবলীও পরিণাম, গোটা পরকালীন জীবন, তার মূল্যবোধ ও দৃশাবলী এবং সমগ্র অদৃশ্য জগত, তার বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, মানব সত্ত্বা ও প্রকৃতির ওপর তার সুগভীর প্রভাব- এ সব কিছু নিয়েই এ সুরার আলোচনা ও পটভূমি গঠিত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাদ্বয় বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *