সংস্কার হয়নি দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট, ঈদ-বর্ষায় বাড়বে ভোগান্তি
1 min readদৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। এ রুটে নৌযান (লঞ্চ) দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নদী পারাপার হন। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে নদীতে বিলীন হয় দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাত্রীদের যাতায়াতের কাঠের দুটি সেতুও।
দীর্ঘ ছয়মাস অতিবাহিত হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত ঘাট ও সেতু দুটি। ফলে যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে জিও ব্যাগের তৈরি রাস্তা দিয়ে লঞ্চঘাটে আসা-যাওয়া করছেন। কিন্তু নদীর পানি কমে যাওয়ায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ সময় নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি সমস্যায় পড়ছেন। এছাড়া মালামাল বহন করে ওঠা-নামায়ও বেগ পেতে হচ্ছে যাত্রীদের।দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমানে ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করেছে। যা দিয়ে দিনে প্রায় ১০ হাজার যাত্রী পারাপার করা হয়। বর্তমানের তুলনায় ঈদে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। ফলে জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ঘাট ও সেতু সংস্কারের দাবি জানান যাত্রী, লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ ঘাটের কাঠের সেতু দুটির প্রবেশ পথ বন্ধ এবং শেষভাগ ঘাটের পন্টুন থেকে অনেক উঁচুতে। যার অবস্থা জরাজীর্ণ। যাত্রীরা সেতুর পরিবর্তে সেতুর নিচ দিয়ে জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে হেঁটে ঘাটে প্রবেশ করছেন। ঘরমুখো যাত্রীদের লঞ্চ থেকে নেমে একইভাবে মাটির সিঁড়ি ব্যবহার করে ওপরে ওঠেন। যারা মালামাল বহন করছেন, তাদের উপরে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে।যাত্রী হারেজ মিয়া ও কামরুজ্জামানসহ কয়েকজন বলেন, গত বর্ষায় নদী ভাঙনের কারণে লঞ্চঘাট ও তাদের যাতায়াতের সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর থেকে তাদের ঝুঁকি নিয়ে জিও ব্যাগ ফেলে তৈরি করা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা কাদায় পিচ্ছিল হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এ সময় পিচ্ছিল খেয়ে অনেকে আহত হন, আবার অনেকের কাপড় নষ্ট হয়। সামনে বর্ষা মৌসুমে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হবে, তখনো যদি এ অবস্থা থাকে তাহলে তাদের খুব কষ্ট হবে।
তারা আরও বলেন, এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। ঈদের তার সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঘাট ও যাতায়াতের পথ ভালো না করলে বহু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত লঞ্চঘাট ও যাতায়াতের সেতু দুটি সংস্কার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে লঞ্চ মালিকের প্রতিনিধি মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার দুইপাশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নদী পারাপার হচ্ছে। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাটের যাত্রীদের যাতায়াতের সেতু দীর্ঘ দিন অকেজো পড়ে আছে। এখন যাত্রীরা জিও ব্যাগের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। প্রায় ছয় মাস আগে নদীভাঙনে লঞ্চ ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আজ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সংস্কারের প্রয়োজন মনে করেনি। ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এখন যাত্রীরা কোনোরকম রাস্তা দিয়ে চলাচল করলেও বর্ষায় অবস্থা খুব খারাপ হবে। তাই দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংস্কার করা না হলে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রী সংকটে পড়বে এবং যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। এছাড়া ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে, তখন দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় দৌলতদিয়ায় ছয় কিলোমিটার স্থায়ী কাজ হবে। গত বর্ষায় নদী ভাঙনে ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রীদের চলাচলের জন্য জিও ব্যাগ ফেলে রাস্তা করে হয়েছে। বর্তমানে যাত্রীরা সেই রাস্তা ব্যবহার করছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদের সময় নদীর পানি বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে কোনো একটি ফেরিঘাটকে লঞ্চঘাট হিসেবে ব্যবহার করা হবে।