November 24, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫১ বছর: আমাদের স্মরণ, বিস্মরণ ও অনুসরণ

1 min read

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এ দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। ইতিহাসখ্যাত ৭ মার্চের ভাষণ। ২ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সারা বাংলায় পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অসহযোগ চলছিল। তৎকালীন পাকিস্তানি জনগণই শুধু নয়, বহির্বিশ্বের অনেকেও এক অনন্য উদ্দীপনা নিয়ে তাকিয়ে ছিল, বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে কী বলেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য এ ছিল অন্তিম মুহূর্ত। অন্যদিকে স্বাধীনতার চেতনায় প্রদীপ্ত বাঙালি জাতির জন্য এ ভাষণ ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন–শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে জাতীয় মুক্তি বা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত সংগ্রামের সূচনা।

ভাষণের বিষয়বস্তু

মাত্র ১৯ মিনিটের এক ভাষণ। বঙ্গবন্ধু তাঁর সংক্ষিপ্ত অথচ তেজস্বী ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের রাজনীতি ও বাঙালিদের বঞ্চনার ইতিহাসের ব্যাখ্যা, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে বাঙালিদের দ্বন্দ্বের স্বরূপ উপস্থাপন, অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ ও বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানে তাঁর সর্বাত্মক চেষ্টা, সারা বাংলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ, প্রতিরোধসংগ্রাম শেষাবধি মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেওয়ার ইঙ্গিত, শত্রুর মোকাবিলায় গেরিলাযুদ্ধের কৌশল অবলম্বন, যেকোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার পরামর্শদান ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরার পর ঘোষণা করেন: ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশা আল্লাহ।…এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জ্যাকব এফ ফিল্ড উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচেস দ্যাট ইনস্পয়ার্ড হিস্টরি (লন্ডন, ২০১৩) শিরোনামে মানবজাতির ইতিহাসের ২৫০০ বছরের ৪১ জন জাতীয় বীরের ভাষণ নিয়ে একটি বই সংকলন করেছেন। তাতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ভাষণকে গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ১৮৬৩ সালের বিখ্যাত গেটিসবার্গ বক্তৃতার সঙ্গে তুলনা করা যায়।

লিংকনের সে ভাষণও ছিল সংক্ষিপ্ত। মাত্র তিন মিনিটের। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উভয়ই ইতিহাসের মূল্যবান দলিল। লিংকনের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো গণতন্ত্র সম্বন্ধে তাঁর বিখ্যাত উক্তি, ‘দিস গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল অ্যান্ড ফর দ্য পিপল উইল নেভার পেরিশ ফ্রম দ্য আর্থ।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ভাষণ থেকে উজ্জ্বল ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এ ভাষণ নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে রাতারাতি সশস্ত্র করে তোলে। একটি ভাষণকে অবলম্বন করে স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ বাঙালি জীবন উৎসর্গ ও কয়েক লাখ মা–বোন সম্ভ্রম বিসর্জন দেন। ’৭১–এর মুক্তিযুদ্ধকালে এ ভাষণ (বজ্রকণ্ঠ) রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করে। বলা যায়, এই একটি ভাষণ একটি জাতিরাষ্ট্র, বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে, যা বিশ্বে নজিরবিহীন। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেসকো এ ভাষণকে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ বিশ্ব–ঐতিহ্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’–এ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *