শেষ বলে ছক্কা মেরেও সাকিবদের কাছে হারলো খুলনা
1 min readশেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২১ রান। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সমীকরণটা ৪ বলে ১৬ রানে নামিয়ে আনেন সেকুগে প্রসন্না। পরে ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকান শেখ মেহেদি হাসান। তবু ম্যাচ জিততে পারেনি খুলনা টাইগার্স। মাঝের তিন বলে মাত্র তিন রান খরচ করে ফরচুন বরিশালের ৬ রানের জয় নিশ্চিত করেন ডোয়াইন ব্রাভো।
টস জিতে আগে ব্যাট করা বরিশাল অলআউট হওয়ার আগে করেছিল ১৪৫ রান। চট্টগ্রামের উইকেট বিবেচনায় রানটি খুব বেশি ছিল না। কিন্তু সাকিব আল হাসান ও মুজিব উর রহমানের কিপটে বোলিংয়ের মুখে পুরো ২০ ওভার খেলে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি খুলনা। তাদের বিপক্ষে দুই ম্যাচের দুইটিতেই জিতলো বরিশাল।
প্রথমে ব্যাট হাতে ২৭ বলে ৪১ ও পরে বোলিং করতে নেমে ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন অধিনায়ক সাকিবই। ফলে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় বাছাই করতে কোনো সমস্যাই হয়নি সংশ্লিষ্টদের। আসরের ১৪তম ম্যাচে এসে প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব।
এ জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচ তিন জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠে এসেছে সাকিবের দল। সমান ম্যাচে খুলনার এটি তৃতীয় পরাজয়। নিজেদের শেষ তিনটি ম্যাচই হারলো তারা। পয়েন্ট টেবিলে খুলনার অবস্থান পঞ্চম। প্রথম দুইটি স্থানে রয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
শুধু ব্যাটিং-বোলিং নয়, অধিনায়কত্বেও নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন সাকিব। মাত্র ১৪৫ রানের ছোট পুঁজি নিওয়ে খুলনাকে চেপে ধরার জন্য দারুণ এক পরিকল্পনা আটেন সাকিব। মুজিব উর রহমান ও শফিকুল ইসলামকে দিয়ে বোলিং শুরু করেন তিনি। কিন্তু উইকেটে স্পিন ধরছে দেখে শফিকুলকে এক ওভার পরই সরিয়ে নেন সাকিব।
পরে দুই প্রান্ত থেকে বোলিং করতে থাকেন সাকিব ও মুজিব। ডানহাতি মুজিব ও বাঁহাতি সাকিবের সামনে রীতিমতো হাঁসফাঁশ করতে থাকেন খুলনার ব্যাটাররা। এ দুজনের ৮ ওভারে এক মেইডেনসহ খরচ হয় মাত্র ২৩ রান। সাকিব আল হাসানের দুই শিকারে পরিণত হন রনি তালুকদার (১২ বলে ৬) ও সৌম্য সরকার (২২ বলে ১৩)। তিনি ৪ ওভারে খরচ করেন মাত্র ১০ রান। মুজিবের ৪ ওভারে আসে ১৩ রান।
সাকিব-মুজিবের দ্বিমুখী আক্রমণে ৯ ওভার শেষে খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩১ রান। পরের ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে বিপজ্জনক ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার (২৩ বলে ১২) ও মারকুটে অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরার (৩ বলে ৪) বিদায়ঘণ্টা বাজান ব্রাভো। ফলে ইনিংসের মাঝপথ পেরিয়ে খুলনার বোর্ডে জমা পড়ে ৪ উইকেটে মাত্র ৩৫ রান।
সেখান থেকে দলকে জেতানোর প্রাণপন চেষ্টা করেন দুই তারকা ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি রাব্বি। বিশেষ করে ইয়াসির রাব্বি ছিলেন দুর্দান্ত। উইকেটে এসে শুরুতে খানিক জড়তা দেখা যাচ্ছিল মুশফিকের ব্যাটে। কিন্তু ইয়াসির ছিলেন সপ্রতিভ। অধিনায়ককে চাপমুক্ত রাখা ব্যাটিংয়ে ধীরে ধীরে লক্ষ্যে এগুতে থাকেন তিনি।
মুশফিক-ইয়াসিরের জুটিতে আসে ৮.২ ওভারে ৭৯ রান। ম্যাচ জেতার জন্য শেষ তিন ওভারে বাকি ছিল ৪৯ রান। মেহেদি হাসান রানার করা ১৮তম ওভারে প্রথমে পুল শটে চার ও স্কুপ করে ছয় মেরে খুলনার জয়ের আশা জাগান মুশফিক। শেষ দুই ওভারের জন্য বাকি থাকে ৩৬ রান।
বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলামের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে দেন মুশফিক। ফলে খানিক চাপেই পড়ে যায় বরিশাল। তবে পরের বলেই মুশফিকের পুল শট স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে দারুণভাবে তালুবন্দী করেন তৌহিদ হৃদয়। ফলে বিদায়ঘণ্টা বাজে ২২ বলে ৩৩ রান করা মুশফিকের।
অধিনায়ক ফিরে গেলেও সেই ওভারের চতুর্থ বলে দৃষ্টিনন্দন শটে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে নিজের ফিফটি পূরণের পাশাপাশি সমীকরণটা হাতের নাগালে রাখেন ইয়াসির রাব্বি। সেই ওভার থেকে সবমিলিয়ে ১৫ রান এলে, শেষ ওভারের জন্য বাকি থাকে ২১ রান, বোলিংয়ে আসেন ব্রাভো।
চ্যাম্পিয়নখ্যাত এ মিডিয়াম পেসারের প্রথম বলে এক রান নেন ইয়াসির, দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকান সেকুগে। পায়ের ওপর করা পরের ডেলিভারিতে ছক্কার চেষ্টা করেন সেকুগে, বল চলে যায় ওয়াইড লং অনে। সেখানে ডাইভিং এফোর্টে কয়েকবারের চেষ্টায় বলটি তালুবন্দী করেন জ্যাক লিন্টট।
মূলত এই ক্যাচের মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বরিশালের জয়। পরে ওভারের চতুর্থ বলে ২ ও পঞ্চম বলে ১ রান নেন ইয়াসির। শেষ বলে ১৩ রানের সমীকরণে স্ট্রাইকে ছিলেন মেহেদি। ব্রাভোর অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিটি কভার অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে খুলনার পরাজয়ের ব্যবধান কমান তিনি। ইয়াসির অপরাজিত থাকেন ৩৪ বলে ৫৭ রানে।
এর আগে এ ম্যাচে বিপিএলের এবারের আসরে প্রথম দল হিসেবে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বরিশাল। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই তারা পড়ে খুলনার বোলিং তোপে। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের মধ্যেই সাজঘরের পথ ধরেন ডোয়াইন ব্রাভো (৯), ক্রিস গেইল (৪) ও তৌহিদ হৃদয় (৫)।
নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই ব্রাভো ও গেইলের উইকেট নেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ. চতুর্থ উইকেট জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন সাকিব ও শান্ত। এ দুজনের জুটিতে ৭৯ রান পায় বরিশাল। ইনিংসের ১৪তম ওভারে সাজঘরে ফেরার আগে ২ চার ও ৩ ছয়ের মারে মাত্র ২৭ বলে ৪১ রান করেন সাকিব।
পঞ্চাশের কাছাকাছি গিয়েও তা করতে ব্যর্থ হন শান্তও। তিনি খেলেন ৪০ বলে ৪৫ রানের ইনিংস। সাকিব-শান্তর ৭৯ রানের জুটির পর ফের নামে ধস। হতাশ করেন নুরুল হাসান সোহান (১০), জিয়াউর রহমান (৮) ও ইরফান শুক্কুররা (৬)। শেষ দিকে একটি করে চার-ছয়ের মারে ১২ রান করেন মুজিব উর রহমান। যা দেড়শ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ এনে দেয় বরিশালকে।
খুলনার পক্ষে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন খালেদ আহমেদ। এছাড়া কামরুল ইসলাম রাব্বি ও ফরহাদ রেজার শিকার দুইটি করে উইকেট।