করোনাকালে শ্বাস-প্রশ্বাসের যে ব্যায়ামগুলো করা জরুরি
1 min readফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে করোনাকালে শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনের বিকল্প নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলনগুলো ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা যথাযথ থাকে। পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও ঘুম ভালো হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের যদি কোনো সমস্যা থাকার ফলে ফুসফুসের রোগ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃৎপিণ্ড এবং ফুসফুস- এই দুই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সুস্থতা ও কার্যকারিতা শ্বাসক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে। শরীরে কোষের বিপাকের ফলে তৈরি কার্বন ডাই-অক্সাইড রক্তের সঙ্গে এসে পৌঁছায় হৃৎপিণ্ডে, সেখান থেকে চলে যায় ফুসফুসে। সেই সময়েই ফুসফুসে গৃহীত অক্সিজেন রক্তস্রোত থেকে সংগ্রহ করে প্রতিটি সজীব কোষে পৌঁছে দেয় হৃৎপিণ্ড।
করোনায় আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীরাই শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে করোনা থেকে সুস্থ হয়েও অনেকে লং কোভিড হিসেবে ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলে সবাই উপকার পাবেন।
বিশেষ করে বুক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া চালানোর পরিবর্তে অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে। এ ধরনের ব্যায়াম নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিদিনের অভ্যেসে পরিণত হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, কেউ যদি অন্তত তিন মিনিট ধরে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার প্রক্রিয়া চালান; তাহলেই তার শ্বাস-প্রশ্বাসগত সমস্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৪-৫ মিনিট ধরে অ্যাবডোমিনাল ব্রিদিংয়ের অনুশীলন করলে, তা আমাদের সামগ্রিক শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়ার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ফুসফুস এবং হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়ার সামগ্রিক উন্নতি ঘটে।
বর্তমানে করোনা-পরিস্থিতিতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামকে গুরুত্ব দিতেই হবে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে যতক্ষণ পারেন ধরে রেখে, পরে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। এর ফলে ফুসফুসের কোষগুলোর ব্যায়াম হয়। ভাইরাসজনিত কারণে এর ফলে শ্বাসজনিত সমস্যা এড়ানো যায়। জেনে নিন শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এড়াতে এ সময় কোন ব্যায়ামগুলো করবেন-
বেলি ব্রিদিং এক্সারসাইজ
প্রথমে বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে দুই হাঁটু ভাঁজ করে নিন। প্রয়োজনে মাথা ও হাঁটুর নিচে বালিশ রাখবেন। এবার এক হাত পেটের ওপর এবং অপর হাত বুকের ওপর রাখুন। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে থাকুন যেন পেট ফুলে ওঠে। এবার নিঃশ্বাস ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং মুখ দিয়ে শিস দেওয়ার মতো করে জোরে বাতাস ছেড়ে দিন। এভঅবে যে কয়বার পারেন করতে থাকুন।
পার্সড লিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ
যাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা আছে; তাদের জন্য বেশ উপকারী একটি ব্যায়াম হলো পার্সড লিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ। এটি অর্ধশায়িত বা উপুড় হয়ে করতে হয়। এর ফলে অধিক পরিমাণে অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে। সেইসঙ্গে শ্বাসকষ্ট কমে এবং ফুসফুসের ভেতর জমে থাকা কফ পাতলা হয়।
এই ব্যায়ামটি করার জন্য নাক দিয়ে প্রথমে শ্বাস নিন। এর কিছু সময় (৩-৫ সেকেন্ড) বাতাস ধরে রাখুন এবং মুখ দিয়ে শিস দেওয়ার মতো করে যতক্ষণ বাতাস নিয়েছেন, তার দ্বিগুণ সময় ধরে বাতাস ছাড়ুন। অর্থাৎ ২ সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিলে ৪ সেকেন্ড সময় ধরে শ্বাস ছাড়ুন।
ইকোয়াল ব্রিদিং
এই ব্যায়ামটি শুয়ে, বসে যেকোনো অবস্থায় করা যায়। এটি করার সময় প্রথমে নাক দিয়ে ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বাতাস নিন। কিছু সময় বাতাস ধরে রাখুন এবং নাক দিয়েই ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বাতাস ছাড়ুন।
ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ
প্রথমে দুই হাত বুকের ওপর আর কনুই পেছনের দিকে রেখে বুক প্রসারিত করুন। এবার নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন। এভাবে কিছুক্ষণ শ্বাস ধরে রাখুন এবং নাক দিয়ে জোরে শ্বাস ছাড়ুন।
অ্যাকটিভ সাইকেল অব ব্রিদিং টেকনিক
আধা শোয়া অবস্থায় এই ব্যায়ামটি করলে বেশি উপকার পাবেন। এজন্য নাক দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিন। এরপর ৩ সেকেন্ড ধরে রাখুন। সবশেষ মুখ দিয়ে জোরে বাতাস ছাড়ুন। এভাবে তিনবার করুন। এরপর ১০ সেকেন্ড স্বাভাবিকভোবে শ্বাস নি। আবারও ব্যায়ামটি শুরু করুন।
এরপর জোরে ২-৩ বার কাশি দিন। কাশি দেওয়ার সময় ২-৩টি চক্র পূর্ণ করুন। ফুসফুসে জমে থাকা কফ বের করার জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।