November 24, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

দেশের ৩৪ জেলা করোনার উচ্চ সংক্রমণ

1 min read

ঢাকাসহ ৩৪ জেলায় করোনার উচ্চ সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এসব জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার বেশি। আবার কিছু কিছু জেলায় একদিনের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা কমার ফলে শনাক্তও কমে গেছে। তা ছাড়া বেশ কিছু জেলায় কম নমুনা পরীক্ষার বিপরীতেও বেশি সংখ্যক করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি খুলনা বিভাগে এবং জেলা হিসেবে শনাক্তের হার বেশি ফরিদপুর, ফেনী, কুমিল্লা, মেহেরপুর এবং পিরোজপুরে। পাশাপাশি ঢাকা জেলায় শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। তবে শনাক্তের সংখ্যার দিক দিয়ে ঢাকা জেলা সবার ওপরে। মহানগরসহ জেলাটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ৭৪৬টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১৩২৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনিবার (২৬ জুন) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব জানা গেছে।

২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মোট ৯ হাজার ৫৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯২১ জন করোনা রোগী, শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৮ শতাংশ। এই বিভাগে শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি ফরিদপুরে (৮৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ)। উচ্চ সংক্রমণের তালিকায় আরও আছে গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ি, টাঙ্গাইল এবং গাজীপুর। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জ থেকে নমুনা পরীক্ষার তথ্য আসেনি। যদিও আগের দিনের পাওয়া তথ্যে মাদারীপুরে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৭৪টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৮। তার মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ, নেত্রকোনায় ২২ দশমিক ৭২ , জামালপুরে ১৫ দশমিক ২৪ এবং গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে একজন শনাক্ত হয়েছেন। এই কয়টি জেলায় আগের দিনের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা কিছুটা কমেছে, ফলে শনাক্তের হারও কমেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে ২ হাজার ৭১১টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ৬৫৪ জনের, শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। বিভাগটিতে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্তের হার ফেনীতে (৬৩ দশমিক ২০)। এরপর আছে কুমিল্লা (৬০ দশমিক ৮৩ শতাংশ)। এই বিভাগের বান্দরবানে আগেরদিনের শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি থাকলেও শনিবারের তথ্য বলছে একটি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। তা ছাড়া চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি জেলায় করোনা শনাক্তের হার ২০ শতাংশের উপরে।

রাজশাহী বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় ৩৬২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে। বিভাগের জেলাগুলোর গড় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এই বিভাগের সবচেয়ে বেশি শনাক্তের হার সিরাজগঞ্জে (৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ)। শুক্রবারের তথ্যে নাটোর, নওগাঁ, পাবনায় শনাক্তের হার বেশি থাকলেও শনিবার নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় শনাক্তের হার কমে গেছে। একই চিত্র দেখা যায় রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষেত্রেও।

রংপুর বিভাগে করোনা শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ০১ শতাংশ। বিভাগটিতে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ হাজার ১৮টি, এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ২৭৫ জনের শরীরে। এই বিভাগের ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা এবং দিনাজপুরে শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের উপরে। তাছাড়া এই বিভাগের অন্যান্য জেলায় কম নমুনা পরীক্ষা হলে আগের দিন বেশি রোগী শনাক্ত হলেও সবশেষ দিনের পাওয়া তথ্যে তা কমেছে।

খুলনা বিভাগে মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২ হাজার ২২টি, এতে করোনা ধরা পরে ৮৪৮ জনের। খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্তের হার অন্যান্য সব বিভাগের তুলনায় বেশি, গড় শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এই বিভাগের প্রায় সব জেলাতেই করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেহেরপুরে। তারপর আছে যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট।

এই ২৪ ঘণ্টায় দেশে সবচেয়ে কম করোনারোগী শনাক্ত হয় বরিশাল বিভাগে, ৭৪ জন। তবে এই বিভাগে নমুনাও পরীক্ষা হয়েছে সবচেয়ে কম, মাত্র ২৭০টি। এর মধ্যে শুধু পিরোজপুরে শনাক্তের হার ৬০ শতাংশের উপরে। তা ছাড়া রোগী কম হলেও বরিশাল এবং ঝালকাঠি জেলাতে শনাক্তের হার বেশি।

আর সিলেট বিভাগে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মোট ৭৬৫টি। এর মধ্যে ১২২ জনের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই বিভাগের মৌলভীবাজারে শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের বেশি। তার কাছাকাছি আছে সুনামগঞ্জ।

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে মে মাসের শেষদিকে। জুনে ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়লেও মাঝামাঝি সময়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে শনাক্তের হার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ জুন থেকে ২০ জুন সাতদিনে ঢাকা বিভাগে শনাক্ত বেড়েছে ১১৪ শতাংশ। এই তুলনা করা হয়েছে তার আগের সাতদিনের সঙ্গে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় শনাক্ত হওয়া করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চারদিনেই ১০৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের ৬৪টির মধ্যে ৪০টি জেলাই অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। আর ১৫টি জেলা রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে, আটটি জেলা রয়েছে মধ্যম ঝুঁকিতে। সংস্থাটি সংক্রমণে বাংলাদেশকে এই তিন ভাগে ভাগ করেছে। বান্দরবান জেলায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় এই জেলাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। রিপোর্ট অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার সবকটিই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের বদলে দুই সপ্তাহ শাটডাউনের পরামর্শ দিয়েছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। আগামী সোমবার থেকে সাতদিনের কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হলেও শনিবার (২৬ জুন) এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এরপর জানানো হয়, সীমিত আকারে লকডাউন চলবে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হবে সারাদেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হবে। কঠোর এই লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনার কারণে মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে। সংক্রামণ হারও বেড়ে গেছে। তাই লকডাউন দিয়ে করোনা সংক্রমণ হার কমানোর চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা লকডাউন চাই না। লকডাউনের মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি হয়। দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে যায়। কাজেই এটা আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু মানুষের জীবন রক্ষার্থে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে লকডাউন আমাদের দিতে হচ্ছে। কারণ, আমরা ভ্যাকসিন যে সংখ্যায় চাই, সে সংখ্যায় পাই না।

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, সামনের দিনগুলোতে আরও বিপর্যয় আসছে। তার মতে, সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। সরকার এসব মানাতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে ঝুঁকি বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, সাতদিনের লকডাউনে তো কিছু হবে না, হয়তো সরকার ৪৯ দিনের জন্য অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। এখন অবস্থা তো ভয়াবহ। একদিকে সরকারের সর্বাত্মক লকডাউনের কোন বিকল্প নেই। তা ছাড়া সামনে কোরবানির ঈদ আছে, সব মিলিয়ে এখন কঠিন একটা অবস্থা। আর এবারের সংক্রমণ একদম ভিন্ন। আগের সংক্রমণ ছিল মূলত জেলা শহরগুলোতে, এখন সেটা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। কাজেই লকডাউন দিয়ে এটা ঠেকানো খুব কঠিন কাজ। আমরা যদি এই রোগীগুলোকে আগেই আইসোলেশনে নিতে পারতাম তাহলে কিন্তু লকডাউন ছাড়াও সংক্রমণ কমানো যেতো। এই পন্থা একটু কষ্টকর বলেই করা যাচ্ছে না। তাই সহজ কাজ হিসেবে লকডাউন দিতে হচ্ছে।

 

About The Author