ঝড়-তুফানে হিফাজতের দোয়া
1 min readমেঘের গর্জন, ঝড় তুফান মহান আল্লাহ তাআলার মহাশক্তির এক ছোট নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে নানাবিধ আপদ-বিপদ ও মুসিবত দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করেন। সব রকম বিপদ-আপদে হিফাজত থাকার কলা-কৌশল, দোয়া, জিকির-আজকার কোরআন ও হাদিসে এসেছে। মেঘের গর্জন, ঝড় তুফান ও অধিক বৃষ্টির অনিষ্ট থেকে হিফাজত থাকারও রয়েছে দোয়া।
মেঘের গর্জনে পঠিতব্য দোয়া
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কোরআন মাজীদের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ
উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি
অর্থ : পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তার প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। (মুয়াত্তা)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
উচ্চারণ :আল্লা-হুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুলহিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা জা-লিকা।
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও। (তিরমিজি)
ঝড় তুফানের সময়ের দোয়া
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا
উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না। (বুখারি) ঝড়-তুফানের সময় এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে।
اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা- ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।`
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।
আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত দোয়া ও আমলগুলো যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে ঝড়-তুফানসহ যাবতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বৃষ্টিসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব দোয়া পড়বেন
প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যে কোনো সমস্যায় আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে দোয়া এবং রোনাজারি করা। কেননা আল্লাহ তাআলা হলেন মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আশ্রয়দাতা। তাছাড়া দোয়া ও রোনাজারি আল্লাহ তায়ালার কাছে অনেক প্রিয় স্বতন্ত্র ইবাদতও বটে।
হাদিসে প্রবল বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প এবং প্রবল বাতাসসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত থাকার অনেক দোয়া ও আমল বর্ণিত আছে। এ দোয়াগুলো পড়ে নিজের জন্য এবং ঘূর্ণিঝড়সহ সব দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা উচিত। বৃষ্টিসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব দোয়া পড়বেন তাহলো-
বৃষ্টি দেখলে যে দোয়া পড়বেন
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّ مَافِيْهِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন সাররি মা ফিহি।’ (বুখারি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এ মেঘের যত অনিষ্টতা আছে তা থেকে আশ্রয় চাই।’
মেঘের গর্জনে পড়ার দোয়া
হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, ‘মেঘের গর্জন শুনলে প্রিয় নবী (সা.) কোরআন মাজিদের একটি আয়াত পড়তেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কোরআন মাজীদের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-
سُبْحَانَ الَّذِىْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রাদু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’ (মুয়াত্তা)
অর্থ : ‘পবিত্র সেই মহান সত্তা প্রশংসা যিনি পানিভরা মেঘ উঠান। মেঘের গর্জন তার প্রশংসা সহকারে তার পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং তার ফেরেশতারাও তার ভয়ে কম্পিত হয়ে তার তাসবিহ পাঠ করে।’
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন-
اَللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَ لَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَ عَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লা তাক্বতুলনা বিগাদাবিকা ওয়া লা তুহলিকনা বিআজাবিকা, ওয়া আ’ফিনা ক্ববলা জালিকা।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আজাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করো।’
ঘূর্ণিঝড়ে পড়ার দোয়া
বান্দার জন্য বাতাস আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নেয়ামত। কারণ মানুষ বাতাস ছাড়া বাঁচতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তবে যদি তোমরা একে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেখতে পাও, তবে এ দোয়া করবে-
اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা- ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।`
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।’
ঝড় তুফানে পড়ার দোয়া
اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا
উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা।’ (বুখারি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না।’
ভূমিকম্পসহ যাবতীয় দুর্যোগ থেকে বাঁচার দোয়া
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلّا بِاللهِ
উচ্চারণ : ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনজ জ্বালিমিন।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)
বিপদাপদ থেকে আত্ম-রক্ষায় প্রতিদিনের দোয়া
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেহ সকাল এবং সন্ধ্যায় নিন্মোক্ত দোয়াটি পড়বে; তাকে কোনো বিপদাপদ, বালা-মুছিবত স্পর্শ করবে না-
بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الأَرْضِ وَلَا فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহিল লাজি লা ইয়াদূররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামিই ওয়াহুয়া সামিয়ুল আলিম।’ (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)
পরিশেষে…
বৃষ্টিসহ সব বিপদকালীন সময়ে প্রিয়নবী (সা.) এর শিখানো দোয়া ও আমল করার পাশাপাশি বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার করা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আবশ্যক পালনীয়। মুসলিম উম্মাহর উচিত প্রবল বৃষ্টিপাতসহ ঘূর্ণিঝড়, ঝড়ো বাতাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব ধরনের দুর্যোগে এ দোয়াগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় লাভে রোনাজারি করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দোয়া ও আমলের মাধ্যমে প্রবল বৃষ্টিপাতসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।