November 23, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

৯৮ কোটি টাকায় বদলে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম

1 min read

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে মাঠে চোখ রাখলে মনে হবে চাষাবাদের জমি। ঘাষ নেই, চারপাশের অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকও নেই। এখানে-ওখানে মাটির স্তুপ। পরিবেশটা মোটেও খেলার উপযোগী নয়। চারিদিকের কাজের যজ্ঞ দেখলে বোঝাই যায়, বিশাল কিছু হতে যাচ্ছে।

ক্রীড়াঙ্গনের সবারই জানা, জাতির পিতার নামের এই স্টেডিয়ামে চলছে সংস্কারযজ্ঞ। প্রায় ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্টেডিয়ামকে অত্যাধুনিক করার কাজ চলছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন করে সেজে ওঠার কথা দেশের প্রধান এই ক্রীড়াভেন্যুটি।

তবে প্রকল্পের সময় মাস ছয়েক বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে ব্যয়ও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা সোমবার জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘প্রকল্পটি শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। শেষ হওয়ার কথা এ বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে ৬ মাস সময় বৃদ্ধি হতে পারে।’

‘কারণ যে প্রকল্প আছে সেখানে স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারিতে শেড দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি পূর্ণাঙ্গ শেড করার। সেটা হলে আমাদের সময় বাড়বে। কারণ, বাকি শেডের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করতে হবে।’

দেশের খেলাধুলার প্রধান এই ভেন্যুটির ভেতর-বাইরের চেহারাটা মোটেও শোভনীয় ছিল না। গ্যালারিতে এখানে সেখানে ছিল ভাঙা চেয়ার, ফুটবল মাঠের চারপাশের অ্যাথলেটিক ট্র্যাক ছিল জোড়াতালির। মাঠের পানি নিষ্কাশন সিস্টেমও উন্নত ছিল না, বৃষ্টি হলেই জমে থাকতো পানি। বর্ষা মৌসুমে খেলা হতো কাদা মাঠেই।

নিচে ভাঙা চেয়ার। উপরে খোলা আকাশ। কখনো রোদে গা পুড়ছে, কখনো বৃষ্টি ভিজিয়ে দিচ্ছে পুরো শরীর। তারপরও ফুটবল খেলা দেখেছেন দর্শক। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে দর্শকদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না। রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যাই থাকুক না কেন, হোম অব ফুটবলের গ্যালারিতে বসে নির্বিঘ্নে খেলা দেখতে পারবেন সবাই।

স্টেডিয়ামের বিদ্যমান কাঠামো ঠিক রেখেই চলছে সংস্কারকাজ। মাঠ উন্নয়ন, গ্যালারিতে শেড নির্মাণ, গ্যালারিতে চেয়ার স্থাপন, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় খেলোয়াড়দের সাজঘর আধুনিকায়ন, ফ্লাডলাইট স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, জেনারেটর স্থাপন, এলইডি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো, নতুন অ্যাথলেটিক ট্র্যাক স্থাপন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড স্থাপন, মিডিয়া সেন্টার তৈরি, টিকিট কাউন্টার, ডোপ টেস্ট রুম তৈরি, চিকিৎসা কক্ষ, ভিআইপি বক্স নির্মাণ, প্রেসিডেন্ট বক্স, টয়লেট উন্নয়ন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সাব-স্টেশন সরঞ্জাম, এসি ও সৌর প্যানেল সরবরাহ- এই কাজগুলো আছে স্টেডিয়াম সংস্কারে।

নির্মাণের পর বহুবার সংস্কার হয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। তবে প্রতিবারই সংস্কার হয়েছে কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক বা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সামনে রেখে। ২০১১ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছিল এই স্টেডিয়াটির।

নির্দিষ্ট কোনো টুর্নামেন্ট উপলক্ষে এবার স্টেডিয়াম সংস্কার করছে না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এখানে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক খেলা ছাড়াও হয় জাতীয় পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করেই তৈরি দেশের খেলাধুলার বলয়। গুরুত্ব বিবেচনা করেই সরকার বড় ধরনের সংস্কার করছে জাতির জনকের নামের এই স্টেডিয়ামটি।

২০১৭ সালে যখন স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, তখন বাজেট ছিল ৮০ কোটি টাকার মতো। ওই ডিপিপি তৈরি হয়েছিল ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সংস্কার শেষ করার লক্ষ্যে। কিন্তু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্টেডিয়াম সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ কোটি টাকার কিছু বেশি।

সাধারণ গ্যালারি ও ভিআইপি গ্যালারিতে বসানো হবে উন্নতমানের নতুন চেয়ার। এর মধ্যে ভিআইপি গ্যালারিতে বসানো হবে ফোল্ডিং চেয়ার। বদলে ফেলা হবে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। তবে ফ্লাডলাইটের টাওয়ার অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু বদলে ফেলা হবে বাতি।

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যায়ে সংস্কার শেষ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কেবল দর্শনীয় হবে না, এই স্টেডিয়ামে বসে দর্শক ফুটবলসহ অন্যান্য খেলা দেখতে পারবে নির্বিঘ্নে। জাতির পিতার নামের দেশের প্রধান এই ক্রীড়াভেন্যুও সংস্কার শেষ হলেই এখানে আবার ফিরবে ফুটবল ও অ্যাথলেটিকস।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *