November 27, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্যবাধকতা; আইন সংশোধনের দাবি

1 min read

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাব রুল (২) এবং রুল ৪ অনুসারে দেশের যে কোনও স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত অন্য সকল স্পনসর এবং পরিচালকদের যৌথভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০% শেয়ার থাকতে হবে এবং এসইসি অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ২ সিসি অনুসারে,যে কোনও তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত প্রত্যেক পরিচালকের পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ২% শেয়ার থাকতে হবে। তা না হলে পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করা হবে।

পরিচালকের প্রতিটি পদের বিপরীতে যে কোনও ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে মনোনীত করার জন্য এককভাবে দুই শতাংশ শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতাকে অনেকেই সাধুবাদ জানালেও যৌথভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা দিনেশেষে বাজারে পুঁজির সংকট তৈরী করছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছে, পৃথিবীর কোন কোন দেশে এমন আইন না থাকলেও বাংলাদেশে এটি বলবৎ আছে। এটি ব্যবসা পরিপন্থী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তারা বলেছেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে এই আইনের সংশোধন হওয়া জরুরী।

জানা যায়, ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়ায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালককে পদ ছাড়তে হয়েছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর দুই শতাংশের কম শেয়ার ধারণ করায় ৯কোম্পানির ১৭ পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষণা করে বিএসইসি।

এদের মধ্যে, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সবচেয়ে বেশি পাঁচজন পরিচালক পদ হারান। তারা হলেন-ফাতেমা ইসলাম সোনীয়া,আজিজ মাহমুদ ইরশাদ উল্লাহ, আজাদ মোস্তফা, সাদ কাদির বিন সোলাইমান ও শফিকুর আহমেদ। ইটকেট লিমিটেড থেকে পদ হারান তিনজন। তারা হলেন- মো. আনিসুজ্জামান,এটিএম মাহবুবুল আলম ও সাদিকা মাহাবুব । এছাড়া, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স থেকে দুজন – হাবিব-ই আলম চৌধুরী ও বদলুর রহমান খান । মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে শামিমা নাসরিন ও দিলরুবা শারমিন, ইউনাইটেড এয়ারের শাহিনুর আলম, ইমাম বাটনের লোকমান চৌধুরী, পূরবী জেনারেলের মো. ইকবাল এবং বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের হোসেল হুমায়ন পরিচালক পদ হারান।

৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়া কোম্পানির পরিচালকদের ক্ষেত্রে এমন হলে, উদ্ভাবনী গ্রিনফিল্ড সংস্থাগুলি (বহুজাতিক, প্রযুক্তি সংস্থা, স্টার্টআপস সহ) যারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন তারা আতংকে ভোগেন বলে মত অনেকের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক পরিচালক দ্য রিপোর্টকে বলেন, কোন কোম্পানির পরিচালক হতে হলে সে কোম্পানির স্বার্থেই কোম্পানির পরিশোধিত মূল্যের ২% শেয়ার থাকা জরুরী । এতে কোম্পানির প্রতি তার দায়বদ্ধতা বাড়ে। এটি চর্চা সারা পৃথিবীতেই চলে। কিন্তু কোন তালিকাভূক্ত কোম্পানির পরিচালকদেরকে যৌথভাবে বাধ্যতামূলক মোট পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকার যে ঘোষণা বাংলাদেশে বলবৎ আছে সেটি যৌক্তিক নয়। কমিশন একদিকে বলছে- প্রত্যেককে আলাদাভাবে ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। আবার যৌথভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে- এটা বলে কমিশন আসলে নিজের সিদ্ধান্তের বিপরীতে নিজেই অবস্থান নিচ্ছে।কারণ , একটি কোম্পানির যদি ছয়জন পরিচালক থাকে তাহলে,কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেককে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করলে ছয়জন ধারণ করবে মোট ১২ শতাংশ। বাকী আঠারো শতাংশের কী হবে? কে ধারণ করবে? কোম্পানি কোন পরিচালককে অধিক শেয়ার ধারণে আইনত জোরও করেত পারবে না । এটা নিয়ে জটিলতা বাড়বেই বৈ কমবে না।

সুতরাং, নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করে, সুশাসন নিশ্চিত করে এমন একটি কোম্পানিকেও এই সিদ্ধান্তের জন্য ভূগতে হবে যার প্রভাব শেয়ারহোল্ডারদের উপর পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ৪৩টি কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকায় এসব কোম্পানির পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে প্রথম দফায় এ বছরের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয় বিএসইসি। এরমধ্যে, গত ২৫ নভেম্বর বিএসইসির ৭৫০তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – ‘৩০ নভেম্বরের মধ্যে যেসকল তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ আইন অনুযায়ী সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হবেন,সে সকল কোম্পানির পর্ষদ পুণর্গঠন করা হবে’। ঘোষিত এই আল্টিমেটামের মধ্যে ৪৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৫টি কোম্পানি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পুরণ করে। সর্বশেষ ৩০ নভেম্বর বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এই শর্ত পূরণ করে। বাকি ২৮টি কোম্পানি শর্তপূরণে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

যেসব কোম্পানি শর্ত পূরণ করেনি

আফতাব অটোমোবাইলস, আলহাজ্ব টেক্সটাইল, এপেক্স ফুটওয়্যার, এ্যাপোলো ইস্পাত, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস,ডেল্টা স্পিনার্স, ফ্যামিলিটেক্স, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট,কে অ্যান্ড কিউ, ফাইন ফুডস, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, ইমাম বাটন, ইনটেক ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, নর্দার্ণ জুট ম্যানুফ্যাকচারিং,অগ্নি সিস্টেমস, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, একটিভ ফাইন কেমিক্যাল অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্মা এইডস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, সালভো কেমিক্যাল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, তাল্লু স্পিনিং এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।এসব কোম্পানির পর্ষদ অচিরেই ‍পুনগর্ঠন করা হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুসুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্যবাধকতার সিদ্ধান্ত একদম সঠিক। এর ফলে কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা বাড়ে। যেসব কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার থাকেনা সে সব কোম্পানি দেউলিয়া হলে কোম্পানির পরিচালকরা ভোগেন না ,ভোগেন বিনিয়োগকারীরা। এ আইনের প্রয়োগের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, এ বিষয়ে (৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের আইন সংশোধন) প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগই নেই।যারা পুঁজিবাজারে এসেছেন তারা আইন জেনেবুঝেই এসেছেন। এখন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা তো বেআইনি। পুঁজিবাজারের স্বার্থে,বিনিয়াগকারীদের স্বার্থে কমিশন এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাজারকে বিনিয়োগবান্ধব করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে যত শীগ্র সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকার শর্ত হিসেবে পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে দুই শতাংশ আর সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করে বিএসইসি। কিন্তু এ নির্দেশনাকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক আদালতের শরনাপন্ন হন। শুরুতে আদেশটি আদালতে স্থগিত হলেও, শেষ পর্যন্ত বিএসইসির পক্ষেই রায় দেয় আদালত।

About The Author