স্ত্রীর ওপর জেদ করে বিরিয়ানি রান্না, ব্যবসায় নেমে লাখপতি
1 min readনাম তার মো. সজীব মোল্লা। বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীতে। তিনি ছিলেন মসজিদের ইমাম। স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে অনেকটা জেদের বশে নেমে পড়েন বিরিয়ানি-চপ বানাতে। আর এতেই বাজিমাত। মাসে উপার্জন করেন প্রায় লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সজীব মোল্লা তার নিজের হাতে বানানো চপের নাম দিয়েছেন ‘বিরিয়ানি চিকেন চপ’। চপ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশন করেন তিনি। ছেলে মেয়ের নামে দোকানের নাম দিয়েছেন ‘আল্লাহর দান তালহা-তোয়া রেস্টুরেন্ট এ্যান্ড ফাস্ট ফুড কর্ণার’। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তার দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।
উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের জাফরাকান্দি অজপাড়াগাঁয়ের বাসিন্দা সজিব মোল্লা। বাড়ির পাশেই ছোট্ট একটি বাজারে তার মজাদার চপ-বিরিয়ানির দোকান। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করেছেন প্রায় একযুগ। মসজিদের ইমাম থাকাকালীন সজীব মোল্লার একদিন রাতে বিরিয়ারি খাওয়ার খুব সখ হয়। সেই রাতেই ইমাম সজীব মোল্লা বিরিয়ানি রান্না করার জন্য বাজার থেকে মুরগি, চাল ও বিভিন্ন মসলা নিয়ে বাড়িতে হাজির হন এবং স্ত্রীকে বিরিয়ানি রান্না করতে বলেন। গভীর রাতে তার স্ত্রী বিরায়ানি রান্না করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং বেশ বিরক্তি বোধ করেন।
সজীব মোল্লা তার স্ত্রীকে বিরিয়ানি রান্না করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলেও তার স্ত্রীর মোটেও মন গলেনি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রাগারাগিও হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে মান অভিমান চরম আকার ধারণ করে। তউম্মা!
শেষমেশ গভীর রাতে রাগ-ক্ষোভ আর জেদের বশবর্তী হয়ে নিজেই শুরু করেন বিরিয়ানি রান্না। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় এতে তিনি হোঁচট খান। কিন্তু চাল ও মুরগির মাংস একসঙ্গে জমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিরায়ানির চাল, মশলা, মাংস দিয়ে চপ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সেই থেকে শুরু। তারপর থেকেই তিনি বাড়ির পাশে বসে পড়েন বিরিয়ানি চপের দোকান নিয়ে। আর এভাবেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম ডাক।
সজীব মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় একটি মসজিদে দীর্ঘ প্রায় একযুগ ধরে ইমামতি করেছি। স্ত্রীর উপর রাগ-ক্ষোভ আর জেদ করে বিরিয়ানি-চপের ব্যবসায় আসা। তবে স্ত্রীর প্রতি এখন আর রাগ-ক্ষোভ নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পাশাপাশি হালাল সৎভাবে মানুষকে বিরিয়ানি-চপ বানিয়ে খাওয়াই। এটাকে এখন পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছি।
তিনি বলেন, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার এটা আমার ব্যক্তিগত ছোট্ট একটি প্রয়াস। প্রতিদিন গ্রাম-ইউনিয়ন ও উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ আসেন আমার বিরিয়ানি-চপ খেতে। যা মহান আল্লাহর মেহেরবানী। নিজের ঘরের কোণে বসে মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করাটা আল্লাহর দয়া ছাড়া সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে তিনি সেদিনের রাতের ঘটনাটি তার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা বলেও উল্লেখ করেন।
তার রেস্তোরাঁয় মুরগির চপ, কোয়েল পাখির চপ, মুরগির ফ্রাই, কাচ্চি বিরিয়ানি, বোরহানি, বিভিন্ন প্রকারের ভুনা খিচুড়ি, ফুচকা ছাড়াও প্রায় ২১ প্রকারের বিভিন্ন ধরনের আচার পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য পার্সেল খাবারও পরিবেশন করা হয়।
তার বানানো বিরিয়ানি চপের সুনাম এলাকা ছাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বহু মানুষ ছুটে আসেন তার বানানো চপের স্বাদ নিতে।