সুন্দর জীবন ও পরকালীন মুক্তির ৪ উপদেশ
1 min readমানুষের দুনিয়ার জীবনের কোনো কাজই সহজ নয়; তবে জীবনকে সহজ করে নিতে হয়। তা কখনো দোয়া; কখনো সবর; কখনো ক্ষমা; আবার কখনো আবার কখনো কখনো অন্যায় এড়িয়ে চলা কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে। উপদেশগুলোর কার্যকরী আমলই মানুষের দুনিয়ার জীবনকে যেমন সুন্দর করে তোলে তেমনি পরকালীন মুক্তিও হবে সহজ।
বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা তারিক জামিল কুরআন-সুন্নাহর আলোকে দেয়া তাঁর এক বক্তব্যে চমৎকার উপদেশগুলো তুলে ধরেছেন। আর এ কাজগুলো একজন মুমিনের অন্যতম গুণও বটে। তিনি বলেছেন-
‘জীবন সহজ নয়; জীবনকে সহজ করে নিতে হয়। কখনো দোয়া; কখনো সবর; কখনো ক্ষমা; আবার কখনো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে।’
দুনিয়ার সুন্দর জীবন ও পরকালীন মুক্তিতে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক সুরা ও আয়াতে যেসব নসিহত ও নির্দেশ দিয়েছেন; তার মধ্যে এগুলো বার বার এসেছে-
> দোয়া করা
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বান্দাকে তাঁর কাছে চাওয়ার বা তাঁকে ডাকার কথা বলেছেন। যে কোনো বিষয়ে তার কাছে সাহায্য প্রার্থনার তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আর তোমাদের প্রভু বলেন, তোমরা আমাকে ডাক; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)
> সবর করা
সব মানুষের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তাআলা সব সময় সবর বা ধৈর্যধারণ করার উপদেশ দিয়েছেন। ধৈর্যধারণের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– ‘তোমরা সবর ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)
– অতএব আপনি উত্তম সবর করুন।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ৫)
– সুতরাং এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার প্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে, সূর্যাস্তের আগে এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন রাতের কিছু অংশ ও দিনের কিছু অংশে। সম্ভবত তাতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩০)
> ক্ষমা প্রার্থনা
আল্লাহ তাআলা নিজে ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন। ক্ষমা মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ। সুতরাং বান্দা জীবনকে সহজ করে নিতে যেমন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে তেমনি কারো সঙ্গে কোনো কিছু ঘটলে অন্যকে ক্ষমা করে দেবে। আর তাতেই পাবে সুন্দর জীবনের হাতছানি। কুরআন জুড়ে রয়েছে ক্ষমা সব সুন্দর সুন্দর বর্ণনা। তাহলো-
– ‘আপনার প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া থাকার কারণেই আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন; কিন্তু আপনি যদি রুক্ষ মেজাজ ও কঠিন অন্তরের লোক হতেন, তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে যেত। সুতরাং আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আর কাজ-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আর যখন কোনো সংকল্প করেন, তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করুন। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার উপর নির্ভরশীলদের ভালোবাসেন। (আল-ইমরান : আয়াত ১৫৯)
– অতঃপর বলছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
> কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা
যে কোনো কাজে অন্যায় অপরাধ এড়িয়ে চলা। আল্লাহর শুকরিয়া ও প্রশংসায় নিজেকে নিয়োজিত রাখায় রয়েছে প্রশান্তি ও সর্বোত্তম প্রাপ্তি। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বার বার তার শুকরিয়া ও প্রশংসার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদের আরও (নেয়ামত) দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
– সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা : ১৫২)
এভাবে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে দোয়া, সবর, ক্ষমা ও শুকরিয়ার কথা বলেছেন। হাদিসে পাকের এ গুণগুলোর ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এ গুণগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নে রয়েছে দুনিয়ায় সুন্দর জীবনের হাতছানি এবং পরকালের মহা সফলতা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিটি ক্ষেত্রে কখনো দোয়া, কখনো সবর, কখন ক্ষমা আবার কখনো এড়িয়ে চলার মাধ্যমে সুন্দর জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। পরকালের সফলতা দান করুন। আমিন।