সিলেটকে বিদায় করে কোয়ালিফায়ারে সাকিবের বরিশাল
1 min readজিততে হলে পাড়ি দিতে হবে রান পাহাড়। কঠিন পথ জেনেও খেই হারালেন না সিলেট সানরাইজার্সের কলিন ইনগ্রাম। ফরচুন বরিশালের বোলারদের ওপর দিয়ে টর্নেডো বইয়ে দিতে থাকলেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটসম্যান, সিলেট তখন পাহাড় টপকে জয়ের আশায়। তার বিদায়ের পর চেষ্টা করলেন মোসাদ্দেক-আলাউদ্দিনরা, কিন্তু তা যথেষ্ট হলো না। দারুণ এক জয় তুলে নিলো সাকিব আল হাসানের দল বরিশাল।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ঘরের মাঠের দল সিলেট সানরাইজার্সকে ১৩ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। আগের ম্যাচেই প্লে-অফ নিশ্চিত করা বরিশাল এই ম্যাচ জিতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে নিজেদের নাম তুললো। এই জয়ে সেরা দুইয়ে থাকা নিশ্চিত হয়েছে তাদের। ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে সাকিবরা। অন্যদিকে এই হারে বিপিএল থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল সিলেটের। ৮ ম্যাচে এক জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তলানিতে তারা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুন বরিশাল। মুনিম শাহরিয়ার, ক্রিস গেইলের হাফ সেঞ্চুরি এবং টানা চার ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা সাকিব আল হাসান ও ডোয়াইন ব্রাভোর ব্যাটিং ঝড়ে ৪ উইকেটে ১৯৯ রানের বিশাল সংগ্রহ তোলে বরিশাল। জবাবে কলিন ইনগ্রামের ৯০ রানের অসাধারণ ইনিংসের পরও ১৮৭ রানে থামে সিলেটের ইনিংস।
বিপিএলে ব্যাটে-বলে উড়ছেন সাকিব আল হাসান। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক প্রতি ম্যাচেই দলের জয়ে রাখছেন বড় অবদান। মঙ্গলবার টানা চতুর্থ ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে ৮ ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৮.১২ গড়ে ২২৫ রান করেছেন সাকিব, যা এখন পর্যন্ত বিপিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ। বল হাতে তার শিকার ১৪ উইকেট, যৌথভাবে শীর্ষে আছেন বরিশালের অধিনায়ক।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি সিলেট সানরাইজার্স। দলীয় ৩৪ রানে বিদায় নেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। ৭ রান করে ফেরা বিজয়ের বিদায় অবশ্য দলকে বুঝতে দেননি কলিন ইনগ্রাম ও মোহাম্মদ মিঠুন। দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন তারা। এ সময়ে বরিশালের বোলারদের বিপক্ষে চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজান ইনগ্রাম।
দক্ষিণ আফ্রিকার বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ১১টি চারে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ৫০ রানের মধ্যে ৪৪ রানই বাউন্ডারি থেকে তোলেন তিনি। ১৪ বলে ১৯ রান করা মিঠুনের বিদায়ে জুটি ভাঙে। ইনগ্রাম তখনও সাবলীল ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। অধিনায়ক রবি বোপারা উইকেটে গিয়ে বেশি সময় তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি, ১১ বলে ৯ রান করে আউট হন তিনি।
দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইনগ্রাম হাঁটছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু ১৫তম ওভারে গিয়ে থামতে হয় তাকে। নাজমুল হোসেন শান্তর বলে আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ১৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৯০ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেন ইনগ্রাম।
শেষের দিকে চেষ্টা চালিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আলাউদ্দিন বাবু। আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও মারকুটে ব্যাটিং করেন দুজন। কিন্তু তাদের চেষ্টার পরও ব্যবধান থেকে যায়। মোসাদ্দেক ২১ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ রান করে আউট হলেও আলাউদ্দিন ১২ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২২ রানে অপরাজিত থাকেন। বরিশালের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ম্যাচসেরা সাকিব, ব্রাভো ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা ফরচুন বরিশালকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার ও ক্রিস গেইল। অবশ্য শুধু মুনিমের নাম বললেই হয়। গেইল উইকেটে থাকলেও ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। দারুণ সব শটে ২৬ বলেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। দলীয় ৭২ রানে গিয়ে থামেন মুনিম। এর আগে ২৮ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫১ রান করেন।
গেইল পুরোপুরি তার চরিত্রের উল্টো মেজাজে ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে গেইলের সঙ্গে যোগ দেন নুরুল হাসান সোহান। কিন্তু ২ বলের বেশি টিকতে পারেননি তিনি। ৪ বলে ২ রান আউট হন সোহান। গেইল তখনও ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে আসছিলেন।
সোহানের পর উইকেটে যান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। গেইলকে অন্য প্রান্তে রেখে সিলেটের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার মাত্র ১৯ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৮ রান করে থামেন। এরপর ১১ বলে ১০ রান করে আউট হন তৌহিদ হৃদয়। এরপর বাকিটা সময় নিজের করে নেন ডোয়াইন ব্রাভো। মুনিম, সাকিবদের মতো ব্রাভোও গেইলকে নন স্ট্রাইকে রেখে তাণ্ডব চালান।
তাদের জুটি থেকে ৪২ রান পায় বরিশাল। ১৩ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ব্রাভো। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা গেইল ৪৫ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। বিপিএলে এটাই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ২৮ ইনিংস পর পেলেন ৫০ রান করার স্বাদ। সিলেটের সোহাগ গাজী, একেএস স্বাধীন, আলাউদ্দিন বাবু ও নাজমুল ইসলাম অপু একটি করে উইকেট নেন।