শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী আজ
1 min readশহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৯৩৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে জগন্নাথ কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে একই বছর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন।
তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তরূপে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিহত হন। সেই সময়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব অভিযুক্তের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী যে গণআন্দোলন চলছিল, সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যাকাণ্ডে তা আরো তীব্রতা লাভ করে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৬৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টমেন্টে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য বাঙালি শিশুরা ভিড় করে। এতে অবাঙালি সৈনিকরা কয়েকজন অভুক্ত শিশুকে ধরে এনে বন্দিশিবিরের সামনে অমানবিকভাবে প্রহার শুরু করে।
কয়েকজন বন্দি এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে হাবিলদার মনজুর শাহর সঙ্গে জহুরুল হক তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা জহুরুল হক ঘর থেকে বের হলে মনজুর শাহ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি তার পেটে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
জহুরুল হকের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জনগণ প্রচণ্ড আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আইয়ুব সরকার ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সব বন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের মানুষ দেশমাতৃকার মুক্তিপ্রয়াসী এই বীর যুবককে সেদিন কেবল শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি, দেশে স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার নামে শপথ গ্রহণ করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ সেদিন ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নাম প্রবর্তন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে বিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম বেইজও সার্জেন্ট জহুরুল হক নামাঙ্কিত হয়। ২০১৮ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন সার্জেন্ট জহুরুল হক।