November 22, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে লড়ছেন পাঁচ বাংলাদেশি

1 min read

দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। এ নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পাঁচ মার্কিন নাগরিককে নিয়ে চলছে আলোচনা।  মার্কিন নির্বাচনে অংশ নেওয়া এই পাঁচজন হলেন-টেক্সাসের অস্টিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একমাত্র বাংলাদেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী ডোনা ইমাম, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি. খান ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অডিটর জেনারেল পদপ্রার্থী ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ড. নীনা আহমেদ। এ ছাড়া ড. এমডি রাব্বি আলম মিশিগান স্টেট থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে ডেমোক্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির টিকেটে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের চারজনের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তাদেরকে নিয়ে গর্বিত যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি। এর আগে, মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনি হিসেবে মিশিগানের একটি আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন হেনসেন ক্লার্ক। তিনি এক মেয়াদের বেশি টিকতে পারেননি।

ডোনা ইমাম

এ যেন হঠাৎ ঝলসে ওঠার মতো ঘটনার জন্ম দিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনি ডোনা ইমাম। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে ৫৬ শতাংশ (২০ হাজার ৮৮৪) ভোট পেয়ে টেক্সাসের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩১ এর চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। অস্টিনের উইলিয়ামসন কাউন্টি এবং সেনা ছাউনি অধ্যুষিত ফোর্ট হুড নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষের ৫৯.১৯ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ। এশিয়ানের সংখ্যা মাত্র ৫.২ শতাংশ। হিসপ্যানিক হচ্ছে ২৩.৯৩ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গের সংখ্যা ১১.২৪ শতাংশ।

এই আসনে কখনোই ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হতে পারেনি। এবারই প্রথম বাঙালির রক্ত প্রবাহিত ডোনা রিপাবলিকানদের একটি ধাক্কা দিতে চাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তিনি অভিবাসী সমাজে আলোড়ন সৃষ্টির পাশাপাশি মধ্যম আয়ের শ্বেতাঙ্গদেরকেও পাশে টানার চেষ্টা করেছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে মন্তব্য করা হয়েছে।

ডোনা ইমাম প্রাথমিক পর্ব অতিক্রম করেছেন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। টেক্সাসে জন্মগ্রহণকারী ও ইলেক্ট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী ডোনা নিজেই একটি ফার্ম দিয়েছেন। সেখানে কাজের পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

শেখ রহমান

জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শেখ রহমান চন্দন। গত ৯ জুন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের এ নির্বাচনে সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৫ এ তার বিরুদ্ধে কেউ মাঠে নামেননি। এমনকি রিপাবলিকান পার্টি থেকেও কেউ প্রার্থী হননি এ আসনে। এর ফলে আসছে ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মূল নির্বাচনে তাকে ভোট চাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

শুধু ওই দিনটি অতিবাহিত হলেই দ্বিতীয় মেয়াদে সিনেটর হিসেবে শপথ নেবেন কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুরের শরারচর গ্রামের সন্তান শেখ রহমান চন্দন। ১৯৮১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন চন্দন। বাংলাদেশে তার ছোটভাই শেখ মুজিবর রহমান ইকবাল একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ থেকে।

আবুল বি খান

নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিনি আবুল বি খান। অর্থাৎ নিউ হ্যাম্পশায়ারে রিপাবলিকান দলের টিকিট পেয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে ভোটারদের সমর্থন প্রয়োজন হয়। এ জন্য মূল নির্বাচনের আগে প্রত্যেক দলের প্রাইমারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করেন।

নিউ হ্যাম্পশায়ারে রিপাবলিকান দলের প্রাইমারি নির্বাচনে স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট রকিংহাম ২০-এ রিপাবলিকান দলের স্টেট হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রার্থী হিসেবে ভোটে নির্বাচিত হন আবুল বি খান। ডিস্ট্রিক্ট ২০-এ স্টেট রিপ্রেজেন্টেটিভের তিনটি পদে রিপাবলিকান দলে ছয় প্রার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে তিনজন নির্বাচনে জয়লাভ করে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা এই পদের জন্য আবুল বি খানকে (তিনজনের মধ্যে) নির্বাচিত করেছেন।

মার্কিন রাজনীতিতে নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যর ডিস্ট্রিক্ট রকিংহাম বরাবরই রিপাবলিকান পার্টির দখলে। আবুল বি খান টানা তিনবার সেখানকার স্টেট হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। দলীয় মনোনয়নে বিজয়ী হওয়ায় রিপাবলিকান সমর্থিত এলাকা হিসেবে এবারের মূল নির্বাচনেও তিনি জয়ী হবেন বলে ধারণা করছেন সবাই।

আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে নিউ হ্যাম্পশায়ারের অঙ্গরাজ্যের সিব্রুক সিটির সিলেক্টম্যান (মেয়র) হিসেবেও ১২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন আবুল বি খান। আরও তিন বছর তিনি এ পদে দায়িত্বে থাকবেন। এবার নির্বাচিত হলে তিনি চারবার অঙ্গরাজ্যটির আইনপ্রণেতা হিসেবে জয় লাভ করবেন।

আবুল বি খানের জন্ম বাংলাদেশের পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়। ১৯৮১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেন। তার স্ত্রী মর্জিয়া খান একজন গৃহিণী এবং এই দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র।

নীনা আহমেদ

মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিনিদের উত্থানের ক্ষেত্রে ড. নীনা আহমেদ একটি উজ্জ্বল নাম। এর আগে তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ফিলাডেলফিয়ার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। এবার পেনসিলভেনিয়া স্টেট অডিটর জেনারেল পদে ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মনোনয়নের নির্বাচনে (প্রাইমারি) নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৮০ হাজার ১৩৭ ভোটের ব্যবধানে ধরাশায়ী করেছেন ড. নীনা। গত ২ জুন অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনার তথ্য অনুযায়ী নীনা আহমেদ পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৬ ভোট। ৬ প্রার্থীর মধ্যে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পিটসবার্গ সিটি কম্পট্রোলার মাইকেল ল্যাম্ব  পেয়েছেন ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৯ ভোট।

ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত পেনসিলভেনিয়া স্টেটে নীনা আহমেদের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। তার বিপরীতে রিপাবলিকান দলের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। ড. নীনা জয়ী হলে তিনি হবেন এই স্টেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে কজন নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম। পেনসিলভেনিয়ার ২৩৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন অশ্বেতাঙ্গ মুসলিম নারী এবং বাদামী রংয়ের বাংলাদেশি-মার্কিনির বিপুল ভোটে প্রাইমারিতে জয়লাভ করলেন।

উল্লেখ্য, ইউজিন ডিপ্যাস্কুয়ালে দুই টার্মে ৮ বছর দায়িত্ব পালনের পর আর নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় অডিটর জেনারেলের পদটি শূন্য হয়।

বাংলাদেশের সন্তান ড. নীনা আহমেদ ২১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে পিএইচডি করেন রসায়নে এবং মেডিকেল ফেলোশিপ করেছেন থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটি থেকে। সেই থেকেই তিনি পেনসিলভেনিয়া স্টেটের ফিলাডেলফিয়া সিটি সংলগ্ন মাউন্ট এয়ারিতে স্বামী আহসান নসরতউল্লাহ এবং দুই কন্যা প্রিয়া ও জয়াকে নিয়ে বসবাস করছেন। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে মাঠে রয়েছেন ৩২ বছরেরও অধিক সময়। এর ফলে তৃণমূলে জোরদার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ড. নীনার।

এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া আমেরিকান বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ নির্বাচনে এই স্টেটের লে. গভর্নর নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়ে এক লাখ ৮৪ হাজার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সেই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করেই এবার অডিটর জেনারেল পদে দলীয় মনোনয়নের পথ সুগম হলো তার।

ড. এমডি রাব্বি আলম

মিশিগান স্টেট থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী ড. এমডি রাব্বি আলম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সার্জেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির ককাসের প্রাক্তন সভাপতি এবং মিসোরি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এশিয়ান ককাসের প্রতিষ্ঠাতা।

এমডি রাব্বি আলম ২০০৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্যাটেলাইট ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বার্নী সানডারশের ক্যাম্পেইনের ‘মুসলিম আমেরিকান ফর বার্নী সানডারশ’ উইং এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন ।

শেষমেশ ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) ন্যাশনাল কনভেনশনে যখন হিলারি ক্লিনটন এর প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থীতা চুড়ান্ত  ঘোষণা করলো, ঠিক তখন এমডি রাব্বি আলম ‘মুসলিম ডেমোক্র্যাট ফর হিলারি ক্লিনটন’ ক্যাম্পেইনের সভাপতি নিযুক্ত হন। নিউইর্য়ক, মিসোরি, মিশিগান, ওয়াশিংটন ডি সি, এবং শিকাগো সহ অনেক সফল ‘হিলারি র‌্যালি’র নেতৃত্ব দেন তিনি।

২০১৬ এর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের পরাজয়ের পরে যখন রক্ষণশীল, কট্টরপন্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে মুসলমানসহ লাতিনো, হিস্পানিক, কালোসহ সকল সংখ্যালঘুদের ওপর কট্টরপন্থী নিয়মনীতি চালু করেন, তখন থেকে এমডি রাব্বি আলমের লিডারসিশের অগ্রযাত্রা শুরু হয় । ট্রাম্প বিরোধী এই আন্দোলনে সাড়া দেয় লক্ষ লক্ষ জনগণ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ফলে এমডি রাব্বি আলম ট্রাম্পকে হটানোর জন্য তিন লক্ষাধিক স্বাক্ষর সগ্রহ করেন।

মিশিগানের ৪ নম্বর আসনের নির্বাচনী এলাকাতে হ্যামট্রামিক শহরের ২০ হাজার এবং ডেট্রয়েটে ৮০ হাজার লোকের বসবাস। এদের মধ্যে বাংলাদেশি রেজিস্টার ভোটারের সংখ্যা হবে প্রায় ৫০০০। এমডি আলম উভয় শহরের বসবাসকারী বাংলাদেশিসহ সাদা, কালো, হিস্পানিক, আরব কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করছেন।

এমডি আলমের জয়ের মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো বাংলাদেশি-মার্কিন মিশিগান অঙ্গরাজ্যের সংসদে নির্বাচিত হবেন।  এমডি আলম হ্যামট্রামিক ও ডেট্রয়েট শহরে বসবাসরত সমগ্র বাংলাদেশি-মার্কিন ভোটারদের কাছে ভোটের আশা করছেন এবং ভোট চেয়েছেন।

About The Author