তাই ভোজন রসিকদের রসনার তৃপ্তিতে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আইরিন সুলতানার রসুইঘর থেকে বের হয়ে এসেছে মুখরোচক খাবারের রন্ধন পদ্ধতি।
বর্ষায় বউয়া
উপকরণ: খুদ তিন গ্লাস। মসুর ডাল এক গ্লাস। ১টি ছোট পেঁয়াজ বেরেস্তা করা। ২টি পেঁয়াজ ঝিরিঝিরি কাটা। ৮টা কাঁচামরিচ। ১ চা-চামচ হলুদ গুঁড়া। ২ চা-চামচ ধনে গুঁড়া। ১ চা-চামচ লাল মরিচ গুঁড়া। ২টি তেজপাতা। ১টি এক আঙ্গুল সমান দারুচিনি। ৪টি এলাচ। লবণ। ঘি। ২ চা-চামচ আদা বাটা। ২ চা-চামচ রসুন বাটা। ৮ গ্লাস গরম পানি।
পদ্ধতি: চাল-ডাল একসঙ্গে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিতে হবে। যদিও চাল যে পরিমাণের ঠিক তার অর্ধেক ডাল দিতে হয়। এখানে ডাল সেই অনুপাত থেকে সামান্য কম দেওয়া হয়েছে।
পাতিলে বা বড় প্যানে ঘি দিয়ে (সাদা তেলের সঙ্গে ঘি মিশিয়েও দেওয়া যাবে) গরম করে তাতে একে একে তেজপাতা, এলাচ এবং দারুচিনি টুকরা করে ছেড়ে দিতে হবে। সুগন্ধ ছড়ালে তাতে পেঁয়াজ কাটা দিয়ে নাড়তে হবে।
পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে তাতে চাল-ডাল দিতে হবে। এরপর আদা-রসুন বাটা দিয়ে ভালো করে চাল-ডালের সঙ্গে মেশাতে হবে। স্বাদমতো লবণ মেশাতে হবে।
চাল-ডাল টানা নাড়তে হবে ভালো করে এবং একটু সময় নিয়ে। নাড়তে নাড়তে এক সময় শনশন করে আওয়াজ পাওয়া গেলে বুঝতে হবে চাল-ডাল ভাজা হয়ে গেছে।
এখন গরম পানি ঢেলে নেড়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। পাঁচ মিনিট পর ঢাকনা তুলে আবার নেড়ে আপাতত চারটা কাঁচামরিচ ফালি করে কেটে দিয়ে আবার ঢাকা দিতে হবে।
পাঁচ মিনিট পর দেখতে হবে পানি মাখা মাখা হয়ে গেছে কি-না। এই পর্যায়ে যদি মনে হয় চালটা তেমন সিদ্ধ হয়নি তবে আরেক গ্লাস পানি ছড়িয়ে দিয়ে নেড়ে আবার ঢাকা দিতে হবে।
এবার দমে বসাতে হবে। চুলায় সমান একটি তাওয়া বসিয়ে গরম করে নিয়ে তারপর চুলার আঁচ মৃদু করে নিতে হবে। তাওয়ার ওপর খিচুড়ির পাতিল চাপিয়ে দিতে হবে। পাতিলের ঢাকনা তুলে বাকি চারটা কাঁচামরিচ মুখ চিড়ে ছড়িয়ে দিয়ে ঢাকনা আবার চাপা দিতে হবে।পরিবেশনের সময় ওপরে বেরেস্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
এখানে চামারা লো ফাইবার চালের খুদ দিয়ে এই খিচুড়ি করা হয়েছে। এই লো ফাইবার চাল পুরো সাদা হবে না এবং পোলাওয়ের চালের মতো সুগন্ধি নয়।
এখন আর আগের মতো চাল কুলায় ঝেড়ে নিতে হয় না বলে বাড়িতে খুদ জমা করার দিন নেই। তবে নতুন করে খুদ চেনা শুরু করেছে সবাই অনলাইনের কারণে। সহজেই অর্ডার করে কেনা যায়। সুগন্ধি চালেরও খুদ মিলছে।
খুদ কারও কাছে ভাঙা চাল। অনেক অঞ্চলেই খুদের ভাতকে বউয়া বলে। এই বউয়া সরিষার তেল দিয়েও রান্না করা যায়। এর সঙ্গে অবশ্যই কয়েক পদের ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে পরিবেশন করতে হয়।
ছাদ বাগানে কলাগাছ রয়েছে বলে হাতের কাছে কলাপাতা মিলে গেল। আপনারও হাতের কাছে কলাপাতা থাকলে কলাপাতায় বউয়া আর ভর্তা সাজিয়ে ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে চটপট খেতে বসে পড়ুন।
ভর্তা ভক্তদের সিঁদল
উপকরণ: ২টি ছোট সিঁদল বড়া। ৫টি ভাজা শুকনা মরিচ। ১টি বড় পেঁয়াজ কাটা। ২টা মাঝারি রসুন (কোয়া খুলে নেওয়া)। সরিষার তেল ও লবণ।
পদ্ধতি: সিঁদল বড়া পানি (গরম পানিও হতে পারে) দিয়ে ধুয়ে নিয়ে ভেঙে ভেঙে নিতে হবে। তারপর চুলায় তাওয়া গরম করে ভেজে নিতে হবে। ভাজা ভাজা রং হলে এবং সিঁদলের গন্ধ ছড়ালে নামিয়ে নিতে হবে।
পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে সামান্য নরম হয়ে আসা পর্যন্ত। পেঁয়াজ ভাজার সময় একটু সরিষা তেলও দেওয়া যেতে পারে। এরপর রসুনও ভেজে নিতে হবে।
শিলপাটায় ভর্তা বেটে নিলে সবচেয়ে ভালো। তবে মিক্সার মেশিনেও ভর্তা বাটা যায় সুন্দর। এতে সময় ও শ্রমও বাঁচে।
ভাজা সিঁদল, শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন ও স্বাদমতো লবণ যোগে বেটে নিতে হবে। বাটা হলে সরিষার তেল দিয়ে মেখে নিয়ে গোল গোল বল করে পরিবেশন করুন। অথবা এক তাল সিঁদল ভর্তা একটি মাটির বাটিতে রেখে ওপরে একটু সরিষার তেল মেখে পরিবেশন করুন।
সিঁদল এক সময় শুধু উত্তরবঙ্গের সবাই খেতো এবং চিনত। ওদিকেই বানানো হত পুঁটি বা ছোট মাছের শুটকির সঙ্গে কচু, রসুন ও এমন আরও মসলা যোগে।এখন অনলাইনের যুগে উত্তরবঙ্গ ছাড়াও অন্যরা সিঁদল চিনেছেন বেশ। অনলাইনে কেনাও যাচ্ছে সিঁদল বড়া।
শীতের দিনে কালাই আটার রুটি সঙ্গে ঝাল ঝাল সিঁদল দুর্দান্ত লাগবে। আবার খুদের ভাত ও খিচুড়ির সঙ্গে পাতে সিঁদল ভর্তা হলে আর কোনো কথা বলার সুযোগই পাবেন না রসনাবিলাসীরা।
ঝালে ঝালে জিভে জলে মরিচ-পেঁয়াজের ভর্তা
২টি পেঁয়াজ ঝিরিঝিরি বা জুলিয়ান আকারে করে কাটা। ৪টি ভাজা শুকনা মরিচ। ৩টি লেবু পাতা কুচি করে কাটা। সরিষার তেল ও লবণ।
প্রথমে পেঁয়াজ ও লেবু পাতা হাত দিয়ে হালকা করে কচলে মেশাতে হবে যেন রস ও সুগন্ধ মিলেমিশে যায়। এরপর ভাজা শুকনা মরিচ ভেঙে ভেঙে মেশাতে হবে। এবার স্বাদ মতো লবণ ও সামান্য তেল দিয়ে মেখে নিতে হবে। এইটুকু করলেই ভর্তা পরিবেশন ও খাওয়ার জন্য তৈরি।
লেবু পাতার বদলে ধনেপাতাও একইভাবে দেওয়া যায়। বাগানে লেবু গাছ থাকায় লেবুপাতাই দেওয়া হয় এই রেসিপিতে। খাওয়ার সময় লেবুপাতার সুগন্ধের কারণে এই ভর্তা ঝাল হওয়ার পরও একটু বেশি খেতে কার্পন্য করবেন না কেউ।
লেবুপাতার সঙ্গে অথবা লেবুপাতা না থাকলে ঘরে যদি লেবু থাকে তবে এর খোসা মিহি কুচি করে কেটে নিয়েও মেশানো যাবে ভর্তাতে।
আটা বা ময়দার রুটির সঙ্গে দারুণ জমবে এই ভর্তা। গরমে ঝাল খেলে একটু গরম বেশিই লাগবে; তবে বর্ষার দিনে খিচুড়ির সঙ্গে এই ঝাল ঝাল ভর্তা মেখে খেলে জমে যাবে দুপুরের খাবার।
আর শীতকালে কালাই আটার রুটির সঙ্গে এই ভর্তা হলে জমিয়ে কুয়াশা মাখা সকাল উপভোগ করতে পারবেন।