November 23, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

বরিশাল বিসিক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের বৈঠক বাহিরে সন্ত্রাসীদের মহড়া

1 min read

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বরিশাল শিল্পনগরী বিসিকে আবারও উত্তাপের পারদ তৈরী করলো মহানগর ছাত্রলীগ। নবাগত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বিসিক কার্যালয়ে উন্নয়ন নিয়ে যখন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে বৈঠক করছিলো, ঠিক সেই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগের ত্রাস সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন নেতা স্বদলবলে পালাক্রমে মহড়া দিয়ে সেখানে জড়ো হয়। একপর্যায়ে ফরচুন সু কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তার সমর্থিত ব্যবসায়ীদের তালাশ করতে থাকে। এসময় মড়কখোলার পুল থেকে বরিশাল টেক্সটাইল মিল পর্যন্ত সড়কের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত অন্তত ৩০ টি মোটরসাইকেলে মহড়া দিতে থাকা ক্যাডারদের মুখে পড়ে ফরচুন সু কোম্পানির জনৈক এক শ্রমিক। তার গতিরোধ করে মোটরসাইকেল কেড়ে নিয়ে গণধোলাই দেয়। ঘটনাচক্রে সে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তেজনাকর পরিস্তিতিতে সংঘাতময় ঘটনারসমূহ সম্ভাবনার খবর কোনও এক মাধ্যম জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হলে তিনি কৌশলে বক্তব্য দীর্ঘায়িত করে আতঙ্কগ্রস্থ বিসিক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের বৈঠকের মধ্যে আবদ্ধ রাখেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জেলা প্রশাসক সিসি ফুটেজের মাধ্যমে বাহিরে ছাত্রলীগের মহড়া এবং ক্রমান্বয়ে অযাচিত সমাগত হওয়ার দৃশ্য দেখে তার সতর্ক বক্তব্যে অসন্তোসের আভা প্রকাশ পায়। তিনি না কী বলেন, যোগদানের পরেই বিসিকে কতৃত্ব বিস্তারে মহড়ার কথা শুনেছেন, এবার স্বচোখে দেখলেন, যা কী না তার কাছে অনভিপ্রেত। পরে কাউনিয়া থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করা হলে সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হঠাৎ করে কেনো ছাত্রলীগ জেলা প্রশাসকের বৈঠকস্থলের আশে-পাশে মারমুখী অবস্থান নিলো? এমন প্রশ্নের উত্তরের অনুসন্ধানে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করতে চায়, ফরচুন সু কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে হেনস্থ করতেই তাদের আগমন ঘটেছিলো। ওই বৈঠকে মিজানুর রহমান অংশ নেন বলে জানা যায়। বর্হিবিশ্বে সু রপ্তানিকারক এই শিল্প উদ্যোক্তার সাথে মহানগর আ’লীগের শীর্ষ এক নেতার দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়ন চলছে বিসিকে কতৃত্ব দখল নিয়ে। এর জের ধরে গত ২০ জানুয়ারি একটি নাটকীয় পরিবেশ তৈরির প্রেক্ষাপটে মিজানুর রহমান ও তার ২ ভাইসহ প্রতিষ্ঠানের আরও কয়েকজনের নাম না উল্লেখ করে কাউনিয়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই দিন সকালে সোহাগ নামক এক যুবক বিসিকে প্রবেশ করে ফরচুন সু কারখানার সম্মুখে ২ নারী শ্রমিককে উত্যক্ত করার অভিযোগে দলবদ্ধ শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং অবরুদ্ধ করেন। এসময় কারখানায় প্রবেশকালে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারমম্যান মিজানুর রহমান ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করে আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ রেখে সোহাগকে পুলিশে সোপর্দ করার পরামর্শ দেন। এসময় বিসিকে দায়িত্বরত পুলিশের মধ্যস্থতায় কাউনিয়ার বাসিন্দা সোহাগকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয়। পাশাপাশি এই যুবকের বিরুদ্ধে ইভটিজিং আইনে মামলা দায়েরে ওই দুই নারীর পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ দেওয়া হলে পুলিশ তা মামলা আকারে গ্রহণে আশ্বস্ত করে। কিন্তু এতে ঘটনার হিতে বিপরীত ঘটে। কারণ বর্তমান সময়ে বিসিক নিয়ে ফরচুন কোম্পানির সাথে ক্ষমতাসীন মহলের একটি অংশের চরম বিরোধপূর্ণ অবস্থায় সৃষ্টি বেশ কয়েকটি সংঘাতপূর্ণ ঘটনায় এই সোহাগ ভূমিকা রাখে। ওই সব ঘটনার প্রেক্ষাপটে সোহাগের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে একটি মামলার বাদী পক্ষ হচ্ছে ফরচুন কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠান থেকে দাবি করা হয়, সোহাগ বিভিন্ন সময় বিসিকে প্রবেশ করে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে মহানগর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সোহাগ তাদের অনুগত হওয়ায় প্রতিহিংসার শিকার। এমনকি এই যুবককে কখনও ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা, আবার কখনও শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবেও পরিচয় তুলে ধরা হয়। যেমনটি ঘটেছে গত ২০ জানুয়ারি তাকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর সোহাগকে শ্রমিকলীগ নেতা হিসেবে দাবি করে পিনিক ছড়ানো হয় যে, এই ঘটনার সাথে মহানগর ছাত্রলীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে আসামী করা হচ্ছে।

একাধিক মহলের ভাষ্য, এমন স্পর্শকাতর খবর সংগঠনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পর মহানগর আ.লীগের একজন শীর্ষ সারির নেতার নির্দেশনায় নগরী অচল করে দিতে গণপরিবহন এবং দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনেকটা ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে সংঘাতে প্রতিপক্ষের হাতে আহত সোহাগকে থানায় আটকে রাখা হয়েছে, তাকে মুক্তির দাবি জোরালো করতে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে শতশত নেতা-কর্মী অনুসারীদের থানামুখে নিয়ে আসতে গৃহীত কৌশলে সফল হতে দেখা যায়। কাউনিয়া থানার সামনে সন্ধ্যা রাতে ছাত্রলীগের ব্যানারে সমাবেশ করে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সেই লাইভ আকারে প্রচার করে দলীয় অনুসারীদের ঢল সৃষ্টি করে থানা ঘেরাও করে পুলিশকে চাপের মুখে ফেলে দেয়। এসময় মহানগর আ.লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে বলে জানা যায়।

একদিকে আতঙ্কে নগরী অচল , অন্যদিকে পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করায় অবশেষে সোহাগকে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। থানার সম্মুখে সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, সোহাগ সংঘাতে পুলিশি হেফাজতে নয়। ফরচুন সু কোম্পানিতে পাওনা টাকা আনতে গেলে তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শ্রমিকদের দ্বারা তাকে প্রহার করে ইভটিজিংয়ের নাটক সাজিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে হাস্য-তামাশার সৃষ্টি হয়। এমনকি মিরাকলের ন্যায় সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা না নিয়ে উল্টো ফরচুন কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও তার ২ ভাইসহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি অপহরণ মামলা ওই রাতেই দায়ের করা হয়। একটি ঘটনা নিয়ে দ্বিমুখী ভূমিকার বিষয় নিয়ে পুলিশ কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সোহাগকে কেন্দ্র করে সেদিনের প্রকৃত ঘটনা কি তা মহানগর আ.লীগ বা ছাত্রলীগের কৌশলের কাছে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। কিন্তু সোহাগ যে ক্ষমতাসীন দলের কেউ নয়, বরং তিনি বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত তার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং স্থানীয়দের ভাষ্যও অভিন্ন।

মূলত ফরচুনকে চেপে ধরতে শেষ কৌশল হিসেবে মিজানুর রহমানকে এক হাত দেখিয়ে দিতে কোনো এক নেতা শেষত্বক সোহাগকে ইস্যু করে বরিশালকে উত্তপ্ত করে নিজের ক্ষমতা ষোলআনা দেখালেন বলে বিভিন্নজনের মন্তব্য পাওয়া যায়। এই ঘটনা নিয়ে বরিশালে ঘটে যাওয়া লঙ্কাকান্ড নিয়ে এখনও যখন আলোচনা-সমালোচনা ও নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখন আজ বৃহস্পতিবার আবর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো বিসিক নিয়ে প্রসঙ্গ।

বিসিকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, উৎপাদনশীল উন্নয়ন কলাকৌশল প্রশিক্ষণ এবং নগরীর উত্তর জনপদের এই শিল্প নগরীর উন্নয়নে নবাগত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার মতবিনিময় এবং সরেজমিনে ঘুরে দেখবেন বলে আগেভাগেই তার কর্মসূচি নির্ধারণ ছিলো। সঙ্গত কারণে বিসিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরচুন ও প্রিমিয়ার সু কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান উপস্থিত থাকবেন তা আঁচ করেই মহানগর ছাত্রলীগের মারদাঙ্গা নেতারা যারা কী না এখন নেতৃত্বের অগ্রভাগে রয়েছেন এধরনের চারজন নেতার নেতৃত্বে সেখানে তাদের অনুগত ক্যাডাররা সমাগত হয়। বিসিকের ভেতরে প্রবেশ না করে ঠিক বিসিক কার্যালয়ের সামনে তারা অবস্থান নেয় এবং মহড়া দিতে থাকে।

বিভিন্ন জন থেকে আভাস পাওয়া গেছে, মামলার আসামী হিসেবে তারা মিজানুর রহমানকে ধরে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেওয়ার টার্গেট নিয়েছিল। এর কিছুটা আলামতও পাওয়া যায় মড়কখোলার পুল, বরিশাল টেক্সটাইল ও সাধুর বটতলা অর্থাৎ বিসিকে প্রবেশদ্বারের তিন মাথায় ছাত্রলীগ ক্যাডারদের একটি অংশ বিভক্ত হয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। পাশাপশি পুলিশের একাধিক টিম বিসিকের নিরাপত্তা দেয়ার ছদ্মবেশে মিজানুর রহমান বা ওই মামলার অন্য কোনো আসামীকে আটকের লক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো। সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন মহলের পক্ষ থেকে চাপ ছিলো। কিন্তু পুলিশ এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল হিসেবে নিরাপত্তা দিতে সেখানে একাধিক টিমের সমাবেশ ঘটায়।

পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করলেও কাউনিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে চলতি দায়িত্বে থাকা আজিমুল করিম যে বক্তব্য দেন তাতে একই কথা দাড়ায়। তার ভাষ্য, একদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো, অন্যদিকে মামলার আসামী খুঁজতে পুলিশ তার দায়িত্ব অনুসারে আইনী পথে হাঁটাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মহড়া অথবা জেলা প্রশাসকের বৈঠক লাগোয়া স্থানে ছাত্রলীগের অবস্থান নিয়ে পুলিশকে নিশ্চুপ থাকতে দেখা যায়। এসময় ছাত্রলীগ যখন মহড়া দিচ্ছিলো তখন বৈঠকে অংশ নেওয়া মিজানুর রহমান বিসিক কার্যালয়ের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিজস্ব প্রটেকশনে বিসিক থেকে বেরিয়ে যান । যা ছাত্রলীগ নেতা ও ক্যাডাররা আঁচ করতে পারেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিজানুর রহমানকে নিরাপত্তা দিতে সমসংখ্যক একদল যুবক অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে অবস্থান নিয়ে একপর্যায়ে তাকে বহন করা গাড়ির আগে-পিছে আগলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। অবশ্য অপর একটি সূত্রের জোর দাবি, মহানগর আ’লীগের একজন নেতা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার পরই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে মিজানুর রহমানের স্থান ত্যাগে সহায়ক হয়। কিন্তু ওই মহানগর নেতার দাবি ছাত্রলীগ নেতারা সাংগঠনিক একটি কর্মসূচিতে অংশ নিতে সেখানে সমবেত হয়েছিলো অন্য কিছু ভাবাটা সমীচীন নয়। এরপরই দুপুর ২ টায় জেলা প্রশাসক অনুষ্ঠান শেষ করে তিনিও বিদায় নিয়ে ফাঁকা সড়কপথে নিজস্ব কার্যালয়ে ফিরে যান। তার উপস্থিতিতে বিসিকের বৃহস্পতিবারের দুপুরের পরিস্থিতি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে এই প্রতিবেদক একাধিক দফা ও ক্ষুদেবার্তা (মোবাইলে মেসেজ) পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

 

About The Author