বন্যা ও এর পরে শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচাতে করণীয়
1 min readবাংলাদেশের বন্যার প্রভাবে ১৬ লাখের বেশি শিশু চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। সিলেট বিভাগে ৯০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, যেখানে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে।
শিশুরা পানিতে ডুবে যাওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। যা এরই মধ্যে দেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ বলে গন্য হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সাধারণত বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে নানা রোগ দেখা যায়।
এসব উৎস থেকে জীবাণু বন্যার পানিতে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়। পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও সব কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তাই এ মুহূর্তে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পানি বিশুদ্ধ করার ট্যাবলেট, শিশুদের জন্য পুষ্টিকর শুকনা খাবার, ওরস্যালাইন ইত্যাদি প্রাণরক্ষা সহায়ক উপাদানের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বন্যায় প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হলো ডায়রিয়া। ডায়রিয়া প্রতিরোধের জন্য খাবার আগে সাবান দিয়ে নিরাপদ পানির সাহায্যে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। পায়খানা করার পরে হাত একইভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা শুরু হলে পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন খেতে হবে।
তবে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। ভাতের মাঁড়, চিঁড়ার পানি, ডাবের পানি ব্যবহার করতে হবে। কিছু পাওয়া না গেলে শুধু নিরাপদ পানি খাওয়ানো যেতে পারে। যে বয়সের জন্য যে খাবার স্বাভাবিক, তা খাওয়ানো চেষ্টা করতে হবে। এ সময় শিশুর পুষ্টিহীনতা রোধে খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে।
অবস্থার উন্নতি না হলে, পাতলা পায়খানা ও বমির মাত্রা বেড়ে গেলে ও শিশুর পানিশূন্যতার ভাব দেখা গেলে, নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে শিশুর শিরাপথে স্যালাইনের প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিটি শিশুকে এ সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো যেতে পারে।
বন্যা-পরবর্তী সময়ে শিশুকে (দুই বছরের নিচের শিশু ব্যতীত) কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। কৃমিনাশক ওষুধ নিয়মিতভাবে ৪-৬ মাস অন্তর খাওয়াতে হবে। বন্যাদুর্গত এলাকায় স্বাভাবিক টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
ইউনিসেফের মতে, ৩৬ হাজারের বেশি শিশু তাদের পরিবারের সঙ্গে জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। স্কুলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। যা শিশুদের পড়াশোনাকে আরও বিঘ্নিত করছে। আগেই করোনার জন্য ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ভয়াবহ ও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার সময় কারও কারও মানসিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে, শিশুদের মধ্যেও সমস্যা আসে। এক্ষেত্রে সবার সহমর্মিতা একান্ত প্রয়োজন।
কোনো রোগব্যাধি বিস্তার লাভ করার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি হয়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সহায়তা প্রদান করতে হবে যাতে আমাদের শিশুরা নিরাপদে থাকে।
বন্যা ও এর পরবর্তী সময়ে যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, যার উদ্যোগ সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এর মধ্যে নেওয়া হয়েছে।