November 24, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

বছরজুড়ে রোজার সওয়াব মিলবে শাওয়ালের ৬ রোজায়

1 min read

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের শান্তির বার্তা নিয়ে মাহে রমজান বিদায় নিয়েছে। সঙ্গে চলে গেছে রোজা, সেহরি, ইফতার, কোরআন তেলাওয়াত, তারাবি, ইতিকাফ ও দান-সদকার মতো বিশেষ বিশেষ ইবাদতের সব সুযোগুলোও। শুরু হয়েছে বছরজুড়ে রোজার সওয়াব লাভের মাস শাওয়াল।

শাওয়াল শব্দের বিশ্লেষণ

পবিত্র রমাজানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল মাস। শাওয়াল শব্দটি ‘শাওলুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে- উঁচু করা, উন্নতকরণ, উন্নত ভূমি, পূর্ণতা, ফলবতী, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া, প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করা বা দানে হস্ত প্রসারিত করা।

শাওয়ালের আরেক অর্থ হচ্ছে বের হওয়া। যেহেতু এ মাসে আরববাসী আনন্দ-উল্লাসের জন্য ভ্রমণে বের হয় এজন্য শাওয়ালকে শাওয়াল বলা হয়। (গিয়াসুল্লুগাত-২৮৭)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধির এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম রোজাকে বান্দার জন্য নির্ধারণ করেছেন। রোজা মানুষের গুনাহমাফির মাধ্যমে নিষ্কলুষ ও নির্ভেজাল করে। রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।

ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যক্তি যাতে শুধু মাহে রমাজানের ফরজ রোজা রেখে থেমে না যান, বরং তিনি কীভাবে সহজেই পূর্ণ বছরটা মহান আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে থাকতে পারেন এবং কী করে চিরস্থায়ী জান্নাতের বাসিন্দা হতে পারেন এবং পরকালে তিনি কীভাবে সফলকাম থাকতে পারেন প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের সামনে এই পথ সুস্পষ্ট করে দিয়ে গেছেন। শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারা বছর রোজার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুযোগ এনে দেয়।

হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখলো এবং শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখলো, এটি (শাওয়ালের ৬ রোজা) তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (মুসলিম)।

এই সওয়াব এভাবে যে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমের সুরায়ে আন-আমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, ‘যে একটি সৎকর্ম করবে, সে তার দশগুণ পাবে।’ সে হিসেবে রমজানের ত্রিশ রোজায় তিনশত রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ষাট রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।

রমজানে তাকওয়ার গুণ অর্জন করা নেককার মুমিন মুসলমান ঈদ পালনের পর বছর জুড়ে রোজার সওয়াব লাভে শাওয়ালের ৬ রোজা পালন করে থাকেন। এ রোজার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও প্রয়োজনীয়তা। আর তাহলো-

ঈদের মাস শাওয়ালের ৬ রোজার গুরুত্বকে এভাবে তুলনা করা হয়েছে যে, ফরজ নামাজের পর সুন্নতে মুয়াক্কাদার মতো। যা ফরজ নামাজের উপকারিতা ও তার অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণ করে। ঠিক ঈদের মাস শাওয়ালের ৬ রোজা রমজানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে এবং রমজানের রোজায় কোনো ত্রুটি ঘটে থাকলে তা দূর করে থাকে। সে অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি কথা রোজাদারের জানা থাকুক আর না থাকুক।

রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর, ঈদের মাসে পুনরায় রোজা পালনের মানে হলো- রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরো নেক আমল করার তাওফিক দান করে থাকেন। যেমন ওলামায়ে কেরামরা বলে থাকেন, ‘নেক কাজের সাওয়াব হলো, তার পরে পুনরায় নেক কাজ করা।’

ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহু আলাইহি বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের পরের ৬ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা উত্তম। যদি কেউ বিরতি দিয়ে রোজা রাখে বা মাসের শেষ দিকে রাখে, তাহলেও হাদিসে ঘোষিত ‘রমজানের পরে’ রোজা রাখার ফজিলত পাওয়া যাবে।

শাওয়ালের রোজা রাখার সময়

ঈদের মাস শাওয়ালেই ৬ রোজা রাখতে হয়। উত্তম সময় হলো ঈদের পরের ৬ দিন। কারণ রমজান ও ঈদ পরবর্তী সময়ে রোজা পালনে রয়েছে নেক আমলের প্রতি ধাবিত হওয়ার প্রমাণ। আর এ কথাই রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পরপরই শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা পালন করে। তবে সে যেন সারা বছরই সিয়াম বা রোজা পালন করল। (তিরমিজি)।

এ হাদিসের উপর ভিত্তি করেই ওলামায়ে কেরামের কিছু অংশ এ ৬ দিনের রোজাকে মোস্তাহাব বলেছেন। তাছাড়া হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারাক বলেন, প্রতি মাসের তিন দিন (আইয়্যামে বিজের) রোজা রাখার মতো শাওয়ালের ৬ দিন রোজা রাখাও উত্তম আমল।

যেভাবে রাখবেন শাওয়ালের রোজা
শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখাই ফজিলতপূর্ণ। তবে লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা যায়। শাওয়াল মাস চলে গেলে তা কাজা করা জরুরি নয়। যেহেতু তা কারো কাছে সুন্নত আবার কারো কাছে মোস্তাহাব। তাই ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় হোক যথাসময় পার হয়ে গেলে তা কাজা করা আবশ্যক নয়। সুতরাং সম্ভব হলে ঈদের পরপরই এ রোজা একাধারে পালন করা। অথবা বিচ্ছিন্নভাবেও এ রোজা পালন করা যায়।

শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন এবং শাওয়ালের রোজা পালন করেন।

আবার যাদের রমজানের রোজার ভাংতি বা কাজা আছে, তাদের জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা জরুরি নয়। সেক্ষেত্রে আগে রমজানের রোজার কাজা আদায় করে নেয়া জরুরি। তারপর সম্ভব হলে শাওয়ালের রোজা আদায় করা।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজান পরবর্তী সাওয়াল মাসের ৬ রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

About The Author