প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে গ্রেডে বেতন পাবেন
1 min readপ্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে (১১০০০-২৬৫৯০) উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সহকারী শিক্ষক পদের বেতনস্কেলে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনোয়ার ইশরাত স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসনে আন্দোলন করে আসছিলেন। এমনকি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন তারা। বেতন বৈষম্য নিরসনে গত ২৮ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে বেতন বাড়লেও এতে যে শর্তারোপ করা হয়েছে, তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারণ শর্ত পূরণ করতে গেলে সব শিক্ষক নতুন বেতন স্কেল পাবেন না। এতে অনেকের মধ্যে সংশয়ও তৈরি হয়েছে বলে গেছে।
প্রজ্ঞাপনের শর্তানুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের বয়সসীমা ২১ থেকে ৩০ বছর হতে হবে। এছাড়া কোন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে।
এই শর্ত নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আসছে। যারা এ সুবিধা পাবেন না সেজন্য তাদের নিজেরাই দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে থেকে যারা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি না নিয়ে এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাস করে যোগদান করেছেন তারা নতুন সুবিধা পাবেন না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। আর নতুন করে তাদের স্নাতক ডিগ্রী গ্রহণেরও সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সবার সুবিধার জন্য শর্ত কিছুটা শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ শর্ত অনুযায়ী অনেকেই সুবিধা পাবেন না। এটা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ অনেক শিক্ষক যারা আগের শর্ত মোতাবেক যোগদান করেছেন, তাদের নতুন করে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের এ বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। সবাই যাতে নতুন সুযোগ পায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এজন্য শর্ত শিথিল করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
ফিরোজ মাহমুদ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে শর্ত সাপেক্ষে ১৩তম গ্রেডে বেতন উন্নীত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। শর্তে বলা আছে, ৪নং কলামে নির্ধারণকৃত বেতন গ্রেড ৫নং কলামে প্রদর্শিত যোগ্যতা/অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কার্যকর হবে।
সরকারি প্রাথিমক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯-এর তফশিল {বিধি২(গ)}-তে যোগ্যতা/অভিজ্ঞতায় উল্লেখ আছে, সহকারী শিক্ষক পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক/সমমান পাস হতে হবে। উন্নীত স্কেলের শর্ত মতে, যে সকল সহকারি শিক্ষকগণের শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক রয়েছে তারাই কেবলমাত্র এ উন্নীত স্কেলের আওতায় আসবেন।
ফিরোজ আলম নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি পাওয়াতে একেকজন একেক রকম মত প্রকাশ করছে। কিন্ত আমি মনে করি, পরিপত্র প্রকাশ করা হয়েছে সেটা অনেক বুঝেশুনে করা হয়েছে। কিছু স্যাররা বলছে, সে এইচএসসি পাশ করে চাকরি পেয়েছে। এখন মাস্টার্স পাশ কিন্ত তার বেতন বাড়ছে না।
আবার কেউ বলছে তৃতীয় শ্রেণি পাওয়াতে বেতন বাড়ছে না। যদি না বাড়ে সেটা আমাদেরই সমস্যা।আমরা যারা এসএসসি বা এইসএসসি পাশ করে ১৮ বছর বয়সে চাকরি পেয়ে অনার্স মাস্টার্স পাশ করা ৩০ বছর বা ২৮ বছরে জয়েন করা ব্যক্তির চেয়ে ১০/১২ বছর বেশি বেতন নিচ্ছি, ১০/১২ ধাপ চাকরিতে এগিয়ে যাচ্ছি, এমনও আছে যে একইসাথে এসএসসি পাশ করে একজন অনার্স মাস্টার্স পাশ করে চাকরিতে জয়েন করে স্কুলে গিয়ে দেখেন তার বান্ধবী হেড ম্যাডাম।
এগুলো বিবেচনা করুন। সবকিছুই উপরের দিকে যায় আমরাও যেতে চায়। আর একটা কাজ খুব জরুরি করা দরকার যে, জয়েনের যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি হবে। তাই অযথা বিরোধীতা না করে বেতন বাড়ার পরিপত্রটা আমাদের মেনে নিয়ে যাতে সামনে আমরা ১১ গ্রেড পেতে পারি সে চেষ্টা করা উচিৎ। আর নিজের দুর্বলতাকে বৈষম্য মনে না করি, কারণ এটা আমার হলে আমি মেনে নিতাম যে এটা আমার দুর্বলতা।’