নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা সেতুর টাকা উঠে আসবে: প্রধানমন্ত্রী
1 min readটার্গেটকৃত সময়ের অনেক আগেই পদ্মা সেতুর খরচের টাকা উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ বছরের মধ্যে খরচের টাকা উঠে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হেয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক আগেই আমরা এই সেতুর টাকা তুলে ফেলতে পারবো। কারণ, এই সেতুর যোগাযোগটা আরও বিস্তৃত হবে। কাজেই ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে আমাদের টাকা উঠে আসবে।’
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি অনুযায়ী, টোল আদায়ের মাধ্যমে ২৫ থেকে ২৬ বছরে খরচ উঠে আসার পূর্বাবাস ছিল। নিজস্ব অর্থায়নের এই খরচের টাকা সেতু কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। ১ শতাংশ সদুসহ ২৫ বছরে সরকারকে ফেরত দেবে। সেই চুক্তি করে সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ নিয়েছে। এই সেতু হয়েছে আমাদের নিজের টাকায়। বাংলাদেশের টাকায়। আমি মনে করি, অনেক আগেই আমরা এই সেতুর টাকা তুলে ফেলতে পারবো। কারণ, এই সেতুর যোগাযোগটা আরও বিস্তৃত হবে। কাজেই ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে আমাদের টাকা উঠে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা যেভাবে উন্নতি হয়েছে, তাতে এই সেতু আমাদের জন্য অনেক লাভজনক হবে। আমাদের অনেক বেশি উন্নতি হবে বলে বিশ্বাস করি। পদ্মা সেতুর সফল সমাপ্তিতে আমাদের বেশকিছু প্রাপ্তি যুক্ত হবে। এই সেতুর কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে স্বকীয়তা বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর ব্যয় বৃদ্ধির কারণগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, সড়ক সেতুর সঙ্গে রেলপথ যুক্ত, নদী শাসনের পরিমাণ বৃদ্ধি, অধিগ্রহণকৃত জমির পরিমাণ মূল্য ও পরিমাণ বৃদ্ধি, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পাইলিংয়ের গভীরতা বৃদ্ধিসহ যেসব কারণে ব্যয় বেড়েছে— তার বিস্তারিত তথ্য সমাপনী বক্তব্যে তুলে ধরেন সরকার প্রধান। প্রধানমন্ত্রী খাতভিত্তিক ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘সেতু নির্মাণের ব্যয় নিয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। নদী শাসন, পুনর্বাসন, ইউটিলিটি সুবিধাসহ অন্যান্য ব্যয় বাদ দিয়ে শুধু সেতুর ব্যয় ১১ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যেকোনও বিচারে এই ব্যয় সাশ্রয়ী। সমসাময়িক সময়ে নির্মিত সব সেতুর তুলনায় এই সেতুর ব্যয় অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। যৌক্তিকতার বাইরে কোনও কাজ বা ব্যয় অন্তর্ভুক্তির কোনও সুযোগ ছিল না। এই ব্যয় যেকোনও বিচারে অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে দুর্নীতির কোনও সুযোগই ছিল না।’
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলসহ দেশের যেসব অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট যেগুলো নষ্ট হয়েছে, সেগুলো আবার মেরামতের জন্য সহযোগিতা করা হবে।’
আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে দেশে বন্যা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরবর্তীকালে দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা আসবে— এটা আমাদের ধরেই নিতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শুকনো খাবার, ওষুধ ও তাবু প্রেরণ করার ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানবতার কারণে আমরা এ কাজটা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের ওপর চাপ এসেছে। বিশেষ করে যেসব পণ্য আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, সেগুলোতে চাপ আসে। দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার জন্য ভোক্তা অধিদফতরসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো দিয়ে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছি। তাছাড়াও আমরা রাশিয়া, ইউক্রেন, কানাডা ও অন্যান্য জায়গা থেকে গম, সার ও তেল যাতে আমদানি করা যায়, ব্রাজিল থেকে তেল আমদানির ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।’
বাজেট অধিবেশন প্রাণবন্ত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। তাদের ইচ্ছামতো তারা কথা বলতে পেরেছেন। আর আমাদের যারা অফিশিয়াল বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) তারাও আলোচনা করেছে।’