নারিন ঝড়ে রেকর্ড গড়ে ফাইনালে বরিশালের সঙ্গী কুমিল্লা
1 min readলক্ষ্য ১৪৯ রানের। যা তাড়া করতে নেমে ৬ ওভারেই দলের সংগ্রহ ৮৪ রান। পাওয়ার প্লে’তে প্রায় ৬০ শতাংশ রান করে ফেলার পর জয় পাওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। যা তুলে নিতে একদমই কালক্ষেপণ করেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তারুণ্যনির্ভর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে রীতিমতো উড়িয়ে ফাইনালে উঠে গেছে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচটিতে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন মূলত কুমিল্লার ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার সুনিল নারিন। তার ঝড় তুলে গড়া রেকর্ড ফিফটিতে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১২.৫ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে কুমিল্লা। শুক্রবার শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হবে ইমরুল কায়েসের দল।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে চট্টগ্রামের করা ১৪৮ রানের জবাবে ইনিংসের প্রথম বলেই লিটন দাসের উইকেট হারায় কুমিল্লা। চট্টগ্রামের এই খুশির রেশ মাত্র দুই বল টিকতে দেন সুনিল নারিন। একের পর এক বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারিতে চট্টগ্রামের বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে দেন এ ক্যারিবীয় ওপেনার।
শরিফুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন ধ্রুবদের চার-ছক্কায় ভাসিয়ে মাত্র ১৩ বলে ফিফটি করেন নারিন। এছাড়া কুড়ি ওভারের ক্রিকেটেই এর চেয়ে কম বলে ফিফটির রেকর্ড আছে আর মাত্র তিনটি।
নারিনের এই রেকর্ড ফিফটির সুবাদে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই ৮৪ রান করে ফেলে কুমিল্লা। যা বিপিএল ইতিহাসে পাওয়ার প্লে’তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এতদিন ধরে পাওয়ার প্লে’তে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল ২০১৩ সালের আসরে খুলনা টাইগার্সের করা ৮৩ রান, যা তারা করেছিল রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে।
দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়ে ১৬ বলে ৫৭ রান করে আউট হন নারিন। তার ১৬ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ৬টি ছয়ের মার। নারিনের ইনিংসের পর অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ২২ রান। এরপর ঝড় তোলেন মইন আলি ও ফাফ ডু প্লেসি।
এ দুই বিদেশির ৪.৩ ওভারে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানের জুটিতে ৪৩ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে যায় কুমিল্লা। তিন চার ও দুই ছয়ের মারে মাত্র ১৩ বলে ৩০ রান করেন মইন। ফাফের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস।
এর আগে টস জিতে চট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রতিপক্ষের আমন্ত্রণে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারের ৫ বল আগেই ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে যায় চট্টগ্রাম। একপর্যায়ে চট্টগ্রামের ইনিংসের যে অবস্থা ছিল, তাতে মনে হচ্ছিল একশ রানই হয়তো করতে পারবে না তারা।
তবে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৬১ রান যোগ করে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন মিরাজ ও আকবর। তাদের দুজনের ব্যাটেই মূলত মুখ রক্ষা হয়েছে চট্টগ্রামের। আকবর ৩৩ ও মিরাজ খেলেছেন ৪৪ রানের ইনিংস।
অথচ চট্টগ্রামের ইনিংসের শুরুটা ছিল উড়ন্ত। প্রথম ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান পেটের প্রদাহ থেকে সুস্থ হয়ে একাদশে ফেরা উইল জ্যাকস। আবু হায়দার রনির সেই ওভারে আরও দুই চার মারেন আরেক ওপেনার জাকির হাসানও। এ দুজনের ব্যাটে প্রথম ৩ ওভারে ৩০ রান করে ফেলে চট্টগ্রাম।
সুনিল নারিনের করা তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে তামিম ইকবাল ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে ছাড়িয়ে চলতি আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে যান জ্যাকস। তবে পরের ওভারে আক্রমণে এসেই এ ইংলিশ তরুণকে সাজঘরে পাঠান শহিদুল ইসলাম। ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ৯ বলে ১৬ রান করেন জ্যাকস।
পরের ওভারে আরেক ইনফর্ম ব্যাটার চ্যাডউইক ওয়াল্টনের উইকেট হারায় চট্টগ্রাম। বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের বলে লেগ বিফোর হওয়া ওয়াল্টন করতে পেরেছেন মাত্র ২ রান। সেই ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে ইতিবাচক শুরুর ইঙ্গিত দেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক আফিফ হোসেন ধ্রুব।
কিন্তু মইন আলি করার পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় চট্টগ্রাম। পরপর দুই বলে সাজঘরে ফিরে যান জাকির হাসান (১৯ বলে ২০) ও শামীম পাটোয়ারী (১ বলে ০)। হ্যাটট্রিক বল ঠেকান ছয় নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজ। সেই ওভারে কোনো রানই খরচ করেননি মইন। পাওয়ার প্লে শেষে স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৪৩ রান।
এরপর দলীয় পঞ্চাশ হতেই সাজঘরের পথ ধরেন ১০ রান করা অধিনায়ক আফিফ। মাত্র ৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে গভীর চাপে পড়ে যায় চট্টগ্রাম। সেখান থেকে হাল ধরেন মিরাজ ও আকবর। শুধু দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করাই নয়, দুজন মিলে রানও তোলেন দ্রুতগতিতে। বিশেষ করে আকবরের ব্যাট ছিল অধিক সচল।
মইন আলির করা ১২তম ওভারে স্লগ সুইপ করে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান আকবর। একই ওভারের শেষ বলে হাঁকান বাউন্ডারি। পরের ওভার নিয়ে আসা তানভিরকে একটি করে ছক্কা মারেন আকবর ও মিরাজ। যার সুবাদে ইনিংসের ১৩ ওভারেই চট্টগ্রামের দলীয় একশ রান পূরণ হয়ে যায়।
এরপর আর বেশিক্ষণ থাকা হয়নি আকবরের। আবু হায়দারের করা ১৫তম ওভারে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২০ বলে ৩৩ রান করেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। যেখানে ছিল দুইটি করে চার ও ছয়ের মার। আকবর ফেরার পর ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন ৫ বলে ৩ রান করা বেনি হাওয়েল।
ইনিংসের বাকি অংশে চট্টগ্রামকে এগিয়ে নেন মেহেদি মিরাজ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুণ। বিশেষ করে শহিদুল ইসলামের করা ১৯তম ওভারে মিরাজ একটি ও মৃত্যঞ্জয় হাঁকান দুইটি ছক্কা। যা চট্টগ্রামকে নিয়ে যায় দেড়শ ছুঁইছুঁই স্কোরে। সেই ওভারেই অবশ্য আউট হন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে আসে ৩ চার ও ২ ছয়ের মারে ৪৪ রান।
অন্যদিকে মৃত্যুঞ্জয় দুই ছয়ের মারে করেন ১৫ রান। কুমিল্লার পক্ষে মইন ও শহিদুল নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া আবু হায়দার, মোস্তাফিজ ও তানভিরের শিকার ১টি করে উইকেট।