দুই বছর পর রাজধানীতে বৃক্ষমেলা, ইনডোর-ফলের গাছের চাহিদা বেশি
1 min readকরোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রাজধানীতে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়নি। তবে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় দুই বছর পর রাজধানীতে বসেছে বৃক্ষমেলা। আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলেন কেন্দ্র সংলগ্ন মাঠে গত ৫ জুন থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা, যা চলবে ৪ জুলাই পর্যন্ত। এরইমধ্যে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে আয়োজনটি। বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ, সার, গাছ পরিচর্যার যন্ত্রপাতি বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
বন অধিদপ্তর আয়োজিত বৃক্ষমেলায় স্টল রয়েছে ১১০টি। মেলায় প্রতিদিন হাজার হাজার চারাগাছ বিক্রি হচ্ছে। মেলা ঘুরতে লাগছে না কোনো অর্থ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকছে বৃক্ষমেলা।
মেলায় অংশ নেওয়া নার্সারির বিক্রয়কর্মীরা ঘুরে ঘুরে ক্রেতাদের দেখাচ্ছেন বিভিন্ন গাছ। গাছের নাম, কত দিনে ফল বা ফুল আসবে সেগুলো বলছেন তারা। ক্রেতারাও গাছ দেখছেন, কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে, কী সার দিতে হবে জেনে নিচ্ছেন। দাম আর পছন্দ মিললেই গাছটি কিনে ফেলছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ফলের গাছ। লেবু, আম, পেয়ারা, কমলা, কামরাঙ্গা, চালতা, কতবেল, জাম্বুরার গাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব গাছ। তবে বড় গাছ বিক্রি কম হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ইশিকা পাল বলেন, গরমের কারণে সকালে মেলায় উপস্থিতি একটু কম থাকে। তবে দুপুরের পর দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। ৫ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত তিন লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৭টি গাছ বিক্রি হয়েছে। যা টাকার অংকে দুই কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৭৭৮ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আম আর পেয়ারা গাছ মানুষ প্রচুর কিনছেন। নারীরা ছোট ছোট গাছ কিনছেন। মেলার প্রথম দিনেই ২০ লাখ ৭৪ টাকার গাছ বিক্রি হয়েছে। এতে বোঝা যায় মানুষের মধ্যে গাছ কেনা ও পরিচর্যার একটা ভালো ইচ্ছা আছে।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি স্টলে (নার্সারি) কৃষি যন্ত্রপাতি ও বাহারি জাতের গাছ রয়েছে। স্টলের বাইরে খোলা মাঠে থরে থরে সাজানো নানান প্রজাতির গাছ। আম থেকে শুরু করে অ্যাভোকাডো, ডাস্ট গোল্ডেন আপেল কী নেই। শাপলা, পদ্ম থেকে শুরু করেছে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। আছে ভেষজ ও মশলা জাতীয় গাছের চারাও।
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা মহুয়া নার্সারির স্বত্ত্বাধিকারী মনসুর আলম মাহমুদ কাউসার বলেন, বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফল এখন দেশেই চাষ হয়, দেশের মাটিতেই হয়। প্রতিবারের মতোই এবারও ফল গাছের চাহিদা বেশি। তবে বড় গাছ যেগুলো আট হাজার টাকার ওপরে সেগুলো বিক্রি কম হচ্ছে।
ফলের মধ্যে আম, লেবু, পেয়ারা আর ফুলের মধ্যে জবা, গোলাপ, হাসনাহেনা, গন্ধরাজ এইগুলা বিক্রি হচ্ছে। বড় গাছের মধ্যে অন্যান্য বছর আম গাছের চারা বিক্রি হতো, তবে এবার বিক্রি কম।
ডিপ্লোমা কৃষি নার্সারির কয়েকটি গাছে দেখা গেলো আপেল ধরে আছে। বাংলাদেশেও আপেল হয় জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. খোকন বলেন, ডাস্ট গোল্ডেন, আন্না, হরিমন-৯৯ এই তিন ধরনের আপেল হয়। বছরে একবার ফল পাওয়া যায় গাছগুলোতে। ফল সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, যারা ছাদ বাগান করেন তারা যদি গাছগুলোকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করেন তাহলে কাঙ্ক্ষিত ফল, ফুল পেতে পারেন। কিন্তু অনেকেই তা করেন না। এ কারণের গাছগুলো দ্রুত মারা যায়।
মহানান্দা নার্সারির স্টল ঘুরে দেখা গেলো সেখানে ইনডোর প্লান্ট বা অন্দর সজ্জার জন্য বিভিন্ন গাছ বিক্রি হচ্ছে বেশ। এর বিক্রয় প্রতিনিধি মৌসুমী নাজনীন জানালেন অন্যান্য গাছের তুলনায় তাদের ইনডোর প্লান্ট বিক্রি ভালো।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে দামটা একটু কম। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকায় ছোট গাছ পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফল ও ফুলের গাছও মানুষ এখান থেকে নিচ্ছে।
বাড্ডা থেকে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসেন শিউলি আক্তার। তিনি বলেন, প্রতিবছর মেলায় আসি। গত দুই বছর মেলা হয়নি, এবার হচ্ছে তাই খুব ভালো লাগছে। আমার ঘর ও ছাদ ভর্তি গাছ। এখানে এসেছি কিছু ইনডোর প্লান্ট কিনতে।
শিউলি আক্তার আরও বলেন, দাম আগের মতোই আছে। খুব একটা বাড়েনি। সামনের দিকে দোকানগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই একটু দাম বেশি বলে। ভেতরের দিকটায় একটু কম।
মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় আসা আসাবুর রহমানও জানালেন গাছের দাম খুব একটা বাড়েনি। তিনি বলেন, যারা প্রতিনিয়ত গাছ কেনেন ও গাছ চিনেন তারা আসলে গাছের প্রকৃত দামটা জানেন। তাদের কাছ থেকে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।
মেলা থেকে নানা জাতের অর্কিড, কাঁঠাল, পেয়ারা ও লেবুগাছ কিনেছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। তিনি বলেন, আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি দেশি ফল ও ফুলের গাছ লাগানো। কেননা এসব গাছের পরিচর্যা সহজ। এছাড়া এই গাছগুলো হারিয়ে গেলে আমাদের স্বকীয়তাও হারাবে।