November 22, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

তাইজুল-খালেদের কল্যাণে সমতায় দিন শেষ করলো বাংলাদেশ

1 min read

চা পানের বিরতির আগে ৩ উইকেট হারানোর পর থিতু হয়ে গিয়েছিলেন টেম্বা বাভুমা ও রায়ান রিকেলটন। দুজনের ৩১ ওভারের জুটিতে স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৮৭ রান। মনে হচ্ছিল, এ জুটিতেই দিন শেষ করে দেবে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে পোর্ট এলিজাবেথে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে তা হতে দেননি তাইজুল ইসলাম ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। দিনের শেষ ভাগে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশে স্বস্তি ফিরিয়েছেন তাইজুল-খালেদ।প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৯০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭৮ রান। ফিফটি হাঁকিয়েছেন ডিন এলগার, কেগান পিটারসেন ও টেম্বা বাভুমা। বাংলাদেশের পক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। খালেদের শিকার অন্য ২ উইকেট।

সেন্ট জর্জেস পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টসভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। সফরকারীদের ফিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার। খালেদ আহমেদকে দিয়ে বোলিং শুরু করেন মুমিনুল। প্রথম ওভারে প্রোটিয়ারা তোলে মাত্র ১ রান।

দ্বিতীয় ওভারেই স্পিন আক্রমণ। মেহেদি হাসান মিরাজের ওভারে আসে ৭ রান। ডিন এলগার আর সারেল এরউই শুরুটা করেন ভালোই। কিন্তু তৃতীয় ওভারেই এরউই সাজঘরে ফিরতে পারতেন। খালেদ আহমেদের বল সরাসরি আঘাত হানে তার প্যাডে।

আবেদন নাকচ করে দেন আম্পায়ার। খালেদ বলছিলেন, ব্যাটে বল লাগেনি। আউট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু মুমিনুল তাতে সাড়া দেননি। বারকয়েক কথা বলে পরে তিনি মত বদল করেন, রিভিউ নেওয়ার জন্য হাত তোলেন।কিন্তু ততক্ষণে নির্ধারিত ১৫ সেকেন্ড সময় শেষ। ফলে মুমিনুল রিভিউ নিলেও আম্পায়াররা তা আর যাচাই করেননি। পরে রিপ্লেতে দেখা যায়, আউট ছিলেন এরউই। বল হিট করতো তার লেগ স্ট্যাম্পে। ৪ রানে জীবন পেয়ে যান প্রোটিয়া ওপেনার।

এরপর রীতিমতো আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার। ইনিংসের ১১তম ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। মনে হচ্ছিল প্রথম টেস্টের মতোই বড় জুটি গড়বেন এরউই ও এলগার।

অবশেষে ১২তম ওভারে গিয়ে জুটি ভাঙেন সেই খালেদ আহমেদই। যে উইকেটে অবদান আছে লিটন দাসের দুর্দান্ত ক্যাচেরও। খালেদের অফসাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে এরউই ড্রাইভ করেছিলেন, বল ব্যাটে লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে।

বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ চারের মারে ৪০ বলে ২৪ রান করেন এরউই। অবশ্য উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সেশনের বাকি সময়ে আর সাফল্য মেলেনি বাংলাদেশের।

উল্টো বাংলাদেশি বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এলগার ও তিন নম্বরে নামা কেগান পিটারসেন। দারুণ সব শটে মাত্র ৬৬ বলে ৬ চারের মারে ফিফটি তুলে নেন এলগার।

পিটারসেনের সঙ্গে এলগারের অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রানের জুটিতে প্রথম সেশন আর উইকেট হারায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে ২৮ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান করে ফেলে স্বাগতিকরা।

তবে বিরতির পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি প্রোটিয়া অধিনায়ক। চলতি সিরিজে যেনো ৬০ থেকে ৭০ রানের গেরোয় আটকে গেছেন তিনি। আগের ম্যাচে ৬৭ ও ৬৪ রানের ইনিংস খেলার পর এবার দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হলেন ঠিক ৭০ রানে।

পোর্ট এলিজাবেথে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়া অধিনায়ককে সাজঘরে পাঠিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার করা ৩৩তম ওভারে অফস্ট্যাম্পের বাইরের সোজা চলে যাওয়া ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন এলগার।

এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন কেগান পিটারসেন ও টেম্বা বাভুমা। এবাদত হোসেনের এক ওভারে পরপর তিন বলে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন কেগান। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ ফিফটি।

দ্বিতীয় সেশনের ৫০ মিনিট খেলা হওয়ার নামে বৃষ্টি। যে কারণে প্রায় আধঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টি থামার পর খেলা শুরু হলে প্রোটিয়াদের রানের চাকায় লাগাম টানেন তাইজুল, খালেদরা। আগের মতো ওভারপ্রতি ৪ করে রান তুলতে ব্যর্থ হন বাভুমা-কেগান।

দিনের তৃতীয় ওভারে পুড়তে হয়েছিল রিভিউ না নেওয়ার হতাশায়। তবে দ্বিতীয় সেশনে আর সেই ভুল করেনি বাংলাদেশ দল। মাঠের আম্পায়ার নটআউটের সিদ্ধান্ত জানালেও, রিভিউ নিয়ে কেগান পিটারসেনকে সাজঘরে পাঠিয়েছে টাইগাররা।

তাইজুলের করা ইনিংসের ৫১তম ওভারের তৃতীয় বল এগিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন কেগান। বল তার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানে সামনের প্যাডে। কিন্তু জোরালো আবেদন করেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পক্ষে পায়নি বাংলাদেশ।

বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে রিভিউ নেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। রিপ্লে’তে দেখা যায়, বল আঘাত হানতো সোজা মিডল স্ট্যাম্পে। তাই নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন মাঠের আম্পায়ার আলাহুদেন পালেকার। আউট হওয়ার আগে ৬৪ রান করেন কেগান।

এরপর টাইগারদের হতাশায় ডোবাতে থাকেন টেম্বা বাভুমা ও রায়ান রিকেলটন। এই ডানহাতি-বাঁহাতির জুটিতে সহজেই রানের চাকা ঘুরতে থাকে প্রোটিয়াদের। এরই মাঝে পিঠের অস্বস্তিতে মাঠ ছেড়ে যান লিটন দাস। তার জায়গায় গ্লাভস হাতে নেন নুরুল হাসান সোহান।

এদিকে মাঠে আবারও দেখা যায় সেই প্রথম টেস্টের পুনরাবৃত্তি। বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের আবেদনে আঙুল না তোলার পণ করেই যেনো নেমেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস ও আলাহুদেন পালেকার। অগত্যা রিভিউ-ই ভরসা।

পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের প্রথম দিনেই দুইবার রিভিউ নিয়ে উইকেট আদায় করতে হলো বাংলাদেশকে। দুইবারই বোলার তাইজুল। প্রথমবার কেগান পিটারসেনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার পর এবার রায়ান রিকেলটনকে করেছেন ক্যাচ আউট।

তাইজুলের করা ইনিংসের ৮২তম ওভারের তৃতীয় বলে রিভার্স সুইপ করেছিলেন রিকেলটন। বল তার গ্লাভসে লেগে চলে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো ইয়াসির আলি রাব্বির হাতে। কিন্তু তাইজুল-ইয়াসিরের জোরালো আবেদন নাকচ করে দেন এরাসমাস।

সঙ্গে সঙ্গে রিভিউয়ের জন্য অধিনায়ক মুমিনুল হককে তাড়া দেন ইয়াসির-তাইজুলরা। মুমিনুলও রিভিউ নিতে ভুল করেননি। রিপ্লে দেখে রিকেলটনকে আউট দিতে বাধ্য হন এরাসমাস। সাজঘরে ফেরার আগে ৪২ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটার।

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ৮০ ওভার পেরিয়ে গেলেও নতুন বল নেয়নি বাংলাদেশ। অদ্ভুত সিদ্ধান্তে ৮২.৩ ওভার হওয়ার পর খালেদের হাতে ইনিংসের দ্বিতীয় নতুন বল তুলে দেন অধিনায়ক মুমিনুল। নতুন বল নেওয়ার পর সাফল্য পেতে সময় লাগেনি একদমই।

ইনিংসের ৮৫তম ওভারের তৃতীয় বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া টেম্বা বাভুমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন খালেদ। তার অফ স্ট্যাম্প ঘেঁষা ডেলিভারিতে ফার্স্ট স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দেন বাভুমা।

আউট হওয়ার আগে ১৬২ বল খেলে ৭ চারের মারে ৬৭ রান করেন বাভুমা। পরে দিনের বাকি সময়টুকু নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন কাইল ভেরেন (২৪ বলে ১০) ও উইয়ান মাল্ডার (১৯ বলে ০)। শেষ বিকেলে জোড়া আঘাতের স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *