টিকার তালিকায় নাম তুলতে হুড়াহুড়ি
1 min readবাংলাদেশে কবে আসবে টিকা, কবে কে পাবে—সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছে দেশের মানুষ। যদিও মধ্য জানুয়ারির দিকেই দেশে অক্সফোর্ডের টিকা আসার সম্ভাবনার কথা বারবার জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতিও এগিয়ে চলছে জোর গতিতে। এর অংশ হিসেবে এত দিন তালিকা হয়েছে ক্যাটাগরিভিত্তিক, অর্থাৎ সবার আগে কোন ক্যাটাগরির মানুষ প্রথম লটে আসা টিকা প্রয়োগের আওতায় আসবে। আর এখন চলছে প্রতিটি ক্যাটাগরির অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যক্তিদের নাম ধরে তালিকার কাজ, যা ঘিরে এরই মধ্যে দপ্তরে দপ্তরে এক ধরনের তদবির-তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।
প্রথমে যে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে, বিশেষ করে এখন তাঁদের নাম নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরাও সুযোগ পাচ্ছেন প্রথম লটের টিকার। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কার আগে কে তালিকায় নাম তুলবেন সে জন্য অনেকেই যোগাযোগ শুরু করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায়। আবার কর্মীরাও নিজ নিজ দপ্তরের নির্দিষ্ট শাখায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন—যাতে করে নিজের নামটি প্রথম লটের তালিকায় নিশ্চিত থাকে।
এমন পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখেই স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করতে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথম লটে ৫০ লাখ টিকা আসবে, যা ২৫ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ক্যাটাগরিভিত্তিক যে তালিকা হয়েছে তাতে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির আওতায় তালিকাভুক্ত সব চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীই টিকা পেয়ে যাবেন বলে আশা করছি। ফলে অযথা কারো দৌড়ঝাঁপ বা অস্থিরতার কোনো প্রয়োজন নেই।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে কভিডসেবায় যে চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীরা সরাসরি কাজ করেছেন তাঁদের টিকার আওতায় আনা হবে। এ জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক তালিকা সংগ্রহ করছি। সব প্রতিষ্ঠানে সবাই তো আর কভিডসেবায় নিয়োজিত নেই বা ছিলও না। আমরা আনুমানিক হিসাব করে দেখেছি, ঢাকা থেকে শুরু করে একেবারে উপজেলা পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পেতে পারেন এমন স্বাস্থ্যকর্মী মাত্র কয়েক হাজার হতে পারে।’
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, একইভাবে অন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকার সংখ্যাও খুব যে লম্বা হবে তাও নয়। এ ছাড়া আগামী মাস থেকে প্রতি মাসেই অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ টিকা আসবে বলে এরই মধ্যেই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ ছাড়া অল্প সময়ের ব্যবধানে আবার কোভ্যাক্সের প্রথম লটের ৫০ লাখ টিকা আসবে। ফলে হা-হুতাশের কারণ দেখছি না। পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে পারলে কোনোই বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই। এদিকে ঢাকার একটি বড় সরকারি হাসপাতালের পরিচালক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, টিকা না আসতেই বড় ঝামেলায় পড়ে গেছি। কর্মচারীরা মাথা খরাপ করে ফেলছেন। অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, যাঁরা সরাসরি কভিড রোগীদের হ্যান্ডলিংয়ে রয়েছেন তাঁদের অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা পাঠানোর জন্য। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। কিন্তু এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের অন্যান্য ইউনিটের চিকিৎসক ও কর্মীরা ছুটছেন তাঁদের নাম তালিকায় ঢোকানোর জন্য। কেউ কেউ তদবিরও করাচ্ছেন। আমরা অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন—এমনভাবে আশ্বাস দিচ্ছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাও প্রায় এমন তদবিরের কথা জানিয়েছেন কালের কণ্ঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অগ্রাধিকার কোটায় পড়েন না এমন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকে এবং অন্য পেশারও অনেকেই রীতিমতো তদবির শুরু করেছেন তাঁদের নাম যেন প্রথম লটের টিকায় রাখা হয়।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রথম দিকে কেবল সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। তবে এখন আমরা দেখছি, যেভাবে টিকা আসবে তাতে আমরা শুরু থেকেই কিছু কিছু করে বেসরকারি পর্যায়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও টিকা দিতে পারব। ফলে একই সঙ্গে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতের তালিকার কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে নজর রাখা হচ্ছে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে। অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালের কণ্ঠকে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি অ্যালায়েন্সের সমন্বয়ে গঠিত কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়ার জন্য এরই মধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন জমা দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি) ডা. সামসুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ১৪ ডিসেম্বর আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন পাঠিয়েছি কোভ্যাক্সে। সেখান থেকে আরো কিছু বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। এখন আমরা সেগুলো তৈরি করছি পাঠানোর জন্য।’ প্রথম লটের টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে চাহিদা প্রসঙ্গে এই পরিচালক বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলার পরও অনেকেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। আমাদের কাছে তাঁদের কেউ কেউ আবেদন নিয়ে আসছেন, কেউবা ফোনে নিজের প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রুপের টিকা প্রথম লটেই নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করছেন। সবাইকেই ধৈর্য ধরতে হবে, নয়তো বিশৃঙ্খলা হবে। আমরা শুধু এটুকুই বলতে চাই—পর্যায়ক্রমে সবাই টিকা পাবেন, কেউ একটু আগে কেউবা একটু পরে।’