November 22, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

চরম অনিশ্চয়তায় সৌদিপ্রবাসীরা, বাতিল হতে পারে ৪০ হাজার ভিসা

1 min read

যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরন ছড়িয়ে পড়ায় সৌদি আরবে সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির জেনারেল অথরিটি ফর সিভিল এভিয়েশন (জিএসিএ)। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য দেশটিতে বিমান চলাচলে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও এই সময়সীমা আরো বাড়ানো হতে পারে। ফলে সোমবার থেকে জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আবার ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। আর এতে আটকে গেছেন লাখো প্রবাসী কর্মী। দেশটির কারাগারে আটকে থাকা বাংলাদেশি কর্মীসহ দেশে ফিরতে চাওয়া কর্মীরা আটকে গেছেন। চরম সংকটে পড়েছেন দেশে এসে আটকে পড়ারা। এ ছাড়া নতুন করে যাঁরা দেশটিতে  যাওয়ার জন্য টিকিট কেটে সব প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, এখন তাঁদের বিদেশযাত্রা চরম অনিশ্চয়তায় পড়ল। সৌদির নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ৪০ হাজার নতুন ভিসা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চাকরি বাঁচাতে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভে নেমেছিলেন সৌদিপ্রবাসীরা। দেশে এসে করোনায় আটকে পড়া এসব কর্মীর একটি অংশ গত দুই মাসে যেতে পারলেও পুনরায় ফ্লাইট বন্ধে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘২১ ডিসেম্বর থেকে এক সপ্তাহের জন্য সৌদি আরব সকল আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণে আমরা আপাতত এক সপ্তাহ সৌদিতে বিমানের তিনটি গন্তব্যের মোট ২১টি ফ্লাইট বাতিল করেছি। এই ফ্লাইটগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ১০০ জন যাত্রী যাওয়ার এবং সৌদি আরব থেকে প্রায় ছয় হাজার যাত্রী আসার জন্য নির্ধারিত ছিল। ফ্লাইট চালু হলে আমরা বিনা চার্জে তাদেরকে আসন পুনর্বরাদ্দ দেব।’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ ২৮টি বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে ফিরে এসেছেন তিন লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন প্রবাসী। তাঁদের মধ্যে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৪ জন পুরুষ ও ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী।

জানা গেছে, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ শেষে আউটপাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন সৌদি আরব থেকে। গত আট মাসে দেশটি থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ১৭ হাজার ৩১৬ জন নারী কর্মীসহ মোট ৯৬ হাজার ৬৮৭ জন প্রবাসী কর্মী। এর মধ্যে আউটপাস নিয়ে ফিরেছেন ১৩ হাজার ৪১৩ জন। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন আট হাজার ৩৯৭ জন নারী কর্মীসহ মোট ৮৭ হাজার ৫২৫ জন প্রবাসী কর্মী। এর মধ্যে আউটপাস নিয়ে ফিরেছেন সাত হাজার ৮৪৬ জন।

সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে ফিরে আসা কর্মীরা বলেছেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, প্রতারিত হওয়া এবং ভিসার মেয়াদ শেষ বা ইকামা (কাজের অনুমতি) না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তাঁদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা কর্মীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ না থাকায় চাকরিরত কর্মীদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, ‘সৌদি আরবে করোনা মহামারি শুরুর আগে ৭০ হাজার ভিসা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে এসব ভিসাধারী যেতে পারেননি। পরে এসব ভিসা নতুন করে নবায়ন করা হয় এবং কিছু কর্মী যাচ্ছিলেনও। নতুন করে ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক বিপাকে পড়েছেন। ফ্লাইট দ্রুত চালু না হলেও এই ৪০ হাজার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল মঙ্গলবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেন মারাত্মক আকার ধারণ না করে, সে জন্য এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক রুটের সব ফ্লাইট চলাচল ফের বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক রুটের সব ফ্লাইট বন্ধ করার ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ মহলে তিনি কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘এখনো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এখন পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করছি। সরকারিভাবে আমরা খুব দ্রুত কী করব সে সিদ্ধান্ত জানাব। করোনায় বিমানের ক্ষতি প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ও পর্যটন খাতের ক্ষতি দুই হাজার কোটি টাকা।’

বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় সৌদি আরবগামী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছে। এ বিষয়ে সরকার কী ভাবছে জানতে চাইলে মহিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে ফ্লাইট বন্ধ হয়েছে, সে জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটা আমাদের এখতিয়ারবহির্ভূত। তবে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো, যাঁরা ইতিমধ্যে বিমানের টিকিট নিয়েছেন, তাঁদের কোনো রকম ফি ছাড়াই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই টিকিট রি-ইস্যু করে দেওয়া হবে। তখন তাঁরা বাড়তি পয়সা ব্যয় না করেই যেতে পারবেন। আমরা এই সহযোগিতাটা করতে পারি। অতীতে বাংলাদেশ বিমান এই সহযোগিতাটা করেছে। তাই ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’

বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান আহমেদ রিয়াজ বলেন, এখন সৌদিপ্রবাসীরা চাকরির ঝুঁকিতে আছেন। তাঁরা যথাসময়ে ফিরতে না পারলে সমস্যায় পড়বেন। তাঁদের ওয়ার্ক পারমিট থাকবে না।

 

 

 

 

 

 

 

About The Author