কে এই লুপা তালুকদার? জেনে নিন তার আসল পরিচয়
1 min readঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি এলাকা থেকে ফুল বিক্রেতা শিশু জিনিয়াকে (৯) ফুচকা খাইয়ে ও ঘোরাঘুরি করিয়ে অপহরণ করা হয়। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন জিনিয়ার মা। পরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার আমতলা থেকে জিনিয়াকে উদ্ধার ও অপহরণের সঙ্গে জড়িত নূর নাজমা আক্তার লুপা তালুকদার নামে একজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার দিবাগত রাত ১টা দশ মিনিটে মিনিটে নারায়নগঞ্জ জেলা ফতুল্লা থানার আমতলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম জিনিয়াকে উদ্ধারসহ অপহরণকারী লুপা তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার ওই মামলায় লুপাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
কিন্তু কে এই লুপা তালুকদার? সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ছবি রয়েছে লুপা তালুকদারের। এমপি, মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও ছবি তুলে ফেলেছেন তিনি। তাই অনেকেই ‘লোপা’কে রিজেন্ট গ্রুপের সাহেদের ‘লেডি ভার্সন’ হিসেবে মন্তব্য করছেন।
লুপা নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় পরিচিত মুখ। অনেক বড় বড় সাংবাদিকের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ এসব খবর এখন ভেসে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় পর্যায়ে লুপার পরিচিতি অনেক বড় মাপের সাংবাদিক হিসেবে। তাদের ধারণা, গ্রামের স্কুলের এসএসসি পাস এই নারীর ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা। ক্ষমতাধর অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে তার।
চাকরি, বদলি বা ঠিকাদারি কাজ- সবই তদবিরে পাইয়ে দিতেন লুপা। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন টাকা।
জানা গেছে, মাত্র তিনদিনের মধ্যে চাকরি দেওয়ার কথা বলে পটুয়াখালীর মিজানের কাছ থেকে ২০১৮ সালে দুই কিস্তিতে লুপা হাতিয়ে নেন ১৩ লাখ টাকা। দিন, মাস বছর পেরিয়ে গেলেও চাকরি আর হয় না। পাওনা টাকা চাইতে গেলে উল্টো মেলে হুমকি। চাকরি দেওয়ার নামে এভাবেই অনেকের কাছ থেকে লুপা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “তিনি বলেছিলেন- চাকরি দেওয়া তো আমার ওয়ান-টুর ব্যাপার বিভিন্ন মন্ত্রী আমার হাতের মুঠোয়। আমি সাংবাদিকদের সাংবাদিক।। দুইবারে ১৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন তা চাইলে জেলের ভাত খাওয়াবে বলে হুমকি দেয়।”
তার ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় তিনি অগ্নি টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কাজ করেছেন বেশকটি গণমাধ্যমে। নিজেকে দাবি করেন আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলে। বাগিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও।
এছাড়াও সিনিয়র রিপোর্টার নবচেতনা, সিনিয়র রিপোর্টার ও সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার মোহনা টিভি, ডিরেক্টর শীর্ষ টিভি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাপ্তাহিক শীর্ষ সমাচার এবং বাংলাদেশ কবি পরিষদের সদস্য হিসেবে ফেসবুকে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তদন্তকারীরা জানান, গ্রেফতারের পর তিনি মোহনা টিভিতে একবার চাকরি করেছেন বলে একটি বিজনেস কার্ড দেখিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে পথশিশু জিনিয়া অপহরণ মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর লুপা তালুকদারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে আসতে থাকে বিস্তর অভিযোগ। ২০০৩ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা থানায় লুপা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। ২০১৩ সালে ওই মামলার অভিযোগপত্র থেকে লুপা রাজনৈতিক বিবেচনায় রেহাই পান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘লুপা তালুকদারের অতীতে তার বিরূদ্ধে একটা হত্যা মামলা ছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।’
এক বছর আগে হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন লুপা। গত বছর ওই বাসা থেকে লুপার এক ছেলের লাশ উদ্ধার হলে তিনি এটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেন। লুপার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করায় এক সাংবাদিকের বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা গুম মামলা দিয়ে হয়রানি করেন তিনি।