এক পরাজয়ে অনেক কিছু হারালেন তৈমূর
1 min readদলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় বিএনপি তাঁর পদ ‘প্রত্যাহার’ করে নিয়েছে। তাই ভোটের মাঠে দল হিসেবে বিএনপিকে পাশে পাননি। সঙ্গে ছিল না জোটসঙ্গীরাও। নির্বাচনী প্রচারণায় দলের শীর্ষ নেতার নাম তেমন উচ্চারণ করেননি।
সব মিলে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হওয়াকে সন্দেহের চোখেও দেখেছেন দলের কেউ কেউ। বিশ্বাস হারিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের। হারলেনও অনেক ভোটের ব্যবধানে। সব মিলিয়ে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান ‘বেশ খারাপ’ হয়ে গেল। বিএনপির এক নীতিনির্ধারকের ভাষায়, এক পরাজয়ে তৈমূর আলম খন্দকার অনেক কিছু হারালেন।
রবিবার অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৈমূর আলমের পরাজয়ের কয়েকটি কারণ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এর একটি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থী হতে না পারা। তাঁদের বিশ্লেষণ, নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন হলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। তবে স্থানীয় সুধীসমাজের ব্যক্তিরা মনে করেন, ‘অগোছালো’ তৈমূর ভোটারের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। ফলে প্রার্থী হিসেবে তিনি সেলিনা হায়াত আইভীর চেয়ে ম্লান ছিলেন।
নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সরকারি ছুটি ছিল না। এই কারণ দেখিয়ে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন, লক্ষাধিক শ্রমিক ভোটার কেন্দ্রে আসতে পারেননি। অথচ শ্রমিকরাই তৈমূরের ভোটব্যাংক ছিলেন।
তৈমূর আলম বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কারো সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। আমিও কারো সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। ভবিষ্যতে যোগাযোগ করব কি না তা-ও চিন্তা করিনি। ’ পদ ফিরে পেতে দলের সঙ্গে কথা বলবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো আবেদন করব না। ’
যদিও পরাজয়ের আভাস পাওয়ার পর রবিবার ভোটের রাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৈমূর বলেছিলেন, ‘রাজনীতি করতে দল লাগে। পদ-পদবি লাগে না। বিএনপি আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। এটা নিয়েই মরতে চাই। ’
সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় তৈমূর আলমের দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং জেলা আহ্বায়কের পদ কেড়ে নেয় বিএনপি। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও কেন্দ্রীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে।
দলের নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন বলেন, আন্দোলন কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তাঁকে দলের সঙ্গে হয়তো যুক্ত করবে। কিন্তু তাতে অনেক সময় লাগবে। পরাজয়ের পর তাঁর বক্তব্য এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর দল নজর রাখবে।
তৈমূরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বলেন, ‘দল সঙ্গে ছিল না। আমি ছাড়া জেলার কোনো সিনিয়র নেতা প্রচারে আসেননি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করে প্রশাসনের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। সরকারি ছুটি না থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক ভোটার আসতে পারেননি। এর মধ্যে ভোট করতে হয়েছে। ’ কামাল প্রশ্ন তোলেন, ‘দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০ শতাংশ ভোট কাস্ট হওয়ার পর বিকেল ৪টায় কিভাবে তা ৫৬ শতাংশ হয়ে গেল?’
স্থানীয় নেতাকর্মীরাও মনে করেন, তৈমূর আলম আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের প্রার্থী বলে নগরীতে জোরালো প্রচার ছিল। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াত আইভীর শিবির থেকেও বলা হয়েছে, তিনি শামীম ওসমানের প্রার্থী। অনেকে তা বিশ্বাসও করেছেন। এ কারণে ভোটারদের একটি অংশের সমর্থনও হারান তিনি।
তৈমূরের প্রচারে সক্রিয় ছিলেন, এমন এক নেতা বলেন, তাঁর গণসংযোগ কৌশল সঠিক ছিল না। দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া জীবনসংকটে থাকলেও তা নিয়ে তিনি জোরালো বক্তব্য দেননি। সরকারবিরোধী অনেক জাতীয় ইস্যু আছে, যেগুলো সামনে আনলে নির্বাচনী রাজনীতিতে তিনি এগিয়ে থাকতেন, সেটিও তাঁর প্রচারে তেমনভাবে আসেনি। বরং তিনি স্থানীয় সমস্যা নিয়েই বেশি কথা বলেছেন। অথচ স্থানীয় অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন আইভী, যার কারণে তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, তৈমূরের সংসদীয় আসন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ)। ওই আসনে নির্বাচন করেন বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মনির। মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং পরাজয়ের কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে জোরালো দাবিও তুলতে পারবেন না তৈমূর।
তৈমূরের পরাজয়ের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু। তিনি বলেন, ‘প্রথমত প্রার্থী হিসেবে তৈমূরের চেয়ে আইভী অনেক শক্তিশালী ছিলেন। দ্বিতীয়ত, প্রথম থেকে তৈমূরের অবস্থান পরিষ্কার বোঝা যায়নি। একবার তিনি বললেন নাগরিক পরিষদের প্রার্থী, কখনো বলতেন বিএনপির প্রার্থী। বিএনপি যখন মনোনয়ন দিল না, তখন বললেন জনগণের প্রার্থী। এ ছাড়া কেউ কেউ তাঁকে একজন বিশেষ ব্যক্তির প্রার্থীও মনে করতেন। তৃতীয়ত, নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি কী করবেন, সে বিষয়ে তাঁর কোনো ইশতেহার ছিল না। কেন তাঁকে ভোট দেবে, জনগণকে তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ’