অল কমিউনিটি ক্লাবে সেদিন পরীমনির সঙ্গে যা ঘটেছিল
1 min readঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে ক্লাব কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের ব্রিফ করলেও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কি না তা নিয়ে দেখা দেয় ধোঁয়াশা। কোনো কোনো গণমাধ্যম পরীমনির বিরুদ্ধে জিডি করা হয়েছে বলে সংবাদ পরিবেশন করে।
তবে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই রাতে ক্লাব থেকে ৯৯৯ -এ পরীমনির ফোন পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। পরে বিষয়টি পুলিশের তরফেই থানায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলছে, এক সহযোগীর ড্রেসকোড নিয়ে প্রশ্ন করতেই চটে যান তারা, ভাঙেন বেশ কিছু জিনিসপত্র। এরপর তারাই ৯৯৯ -এ কল করে পুলিশ ডাকেন।
এসব নিয়ে পরীমনি বলেন, ‘ইস্যু ঘোরানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমাকে নিয়ে চক্রান্ত চলছে।’
গত ৮ জুন গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ক্লাব কর্মকর্তাদের বিরোধ হয়। ওই রাতে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা কী কী করেছেন তা বুধবার রাতে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে কিছুদিন আগে (৮ জুন) ছোট্ট একটি অঘটন ঘটেছিল। আমাদের ক্লাব বন্ধের সময় হয়ে এসেছিল। তখন কয়েকজন লোক ক্লাবে আসেন। গেটে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডরা ফোন করে জানান, তারা কিছুক্ষণ আগে একবার এসেছিলেন। তখন তারা ফোন ও কিছু কাগজ রেখে গেছেন। সেগুলো নেয়ার জন্য আবার এসেছেন।’
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন আছে। কেউ যদি ক্লাবে আসে তাহলে তাকে কিছু ড্রেস কোড মেনে আসতে হয়। সেদিন এখানে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হাফপ্যান্ট ও স্যান্ডেল পরা। তখন আমাদের কর্মকর্তারা বলেন, আপনারা তো ক্লাবের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। তাদের ক্লাব থেকে এটা বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে তারা যে সদস্যদের মাধ্যমে ক্লাবে আসেন তিনিও তাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু তারা যেতে চাননি। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের সেই সদস্য চলে যান। এর মধ্যে আমাদের ক্লাবের সব কর্মকর্তা চলে যান। শুধু দুজন ওয়েটার ছিল।’
ভাঙচুর করে পুলিশও ডাকেন তারা
অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘একপর্যায়ে উনারা ৯৯৯ -এ ফোন করে পুলিশ কল করেন। তখন পুলিশ আসে, পুলিশ এসে দেখতে পান যে, উনি এগুলা ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ উনাদের জিজ্ঞেস করেন আপনারা এখানে কেন আসছেন, কেন আমাদের কল করছেন? তখন তারা বলে যে, আমাদের সাথে এই হয়েছে, ওই হয়েছে। উনারা (পুলিশ সদস্যরা) বলেন যে, এরকম তো কিছু দেখছি না। তখন কেউ ছিলও না। দুইজন ওয়েটার ছিল আর এই তিন চারজন মানুষ।’
‘তারপরে পুলিশ ভাইয়েরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে উপরে জানতে চায় যে তারা এখন কী করবে। ওয়াকিটকির আওয়াজ বাইরে যাচ্ছিল। তখন উপরের থেকে নির্দেশ আসে যে, উনারা যদি এমন করে তাহলে উনাদেরকে বের করে দিয়ে আপনারা চলে যান। তখন ওই আওয়াজ শুনে উনারা কিছুটা ঠান্ডা হন, আর পুলিশ ভাইদের কথা মতো সেখান থেকে চলে যান। তারপর পুলিশ ভাইয়েরাও চলে যান।’
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘সাধারণত ক্লাবে অবান্তর কিছু হলে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে ইনফর্ম করার কথা। কিন্তু পরীমনি যেহেতু এখানকার অতিথি তিনি সেটা জানেন না।’
ক্লাব সদস্যকে শোকজ
যে সদস্যের মাধ্যমে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা ক্লাবে এসেছিলেন তাকে শোকজ করেছে অল কমিউনিটি ক্লাব।
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী যে সদস্যের মাধ্যমে তিনি (পরীমনি) এসেছিলেন তাকে আমরা শোকজ করেছি। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সেটি এখন চলমান। এটিই হলো আমাদের ক্লাবের সংশ্লিষ্টতা। অন্য কোনো ব্যাপারে আমাদের কিছু ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘ক্লাবের নিয়ম হলো যিনি অতিথি, তিনি ক্লাবেরও অতিথি। ক্লাবের অতিথির বিরুদ্ধে ক্লাব কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নাই। যার মাধ্যমে এসেছেন তিনি ক্লাবের নিয়মকানুন জানেন। শুধু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। সেটি আমরা করছি। এর বাইরে অন্য কিছু করার আমাদের এখতিয়ার নেই। এমন ভয়ানক কিছু করে নাই যে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লাব সভাপতি বলেন, ‘না, আমরা কোনো ডায়েরি করি নাই। কেন করি নাই; আমরা মনে করেছি যে, এতে আমাদের ক্লাবেরই সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এজন্য আমরা জিডি করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি উনি (পরীমনি) সেলিব্রেটি। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি উনাকে চিনি না। যদি উনি সেলিব্রেটি হয়, উনার মান-সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব উনার নিজের। উনি উচ্চবংশের, উনি শিক্ষিতা, এটা উনার ডিউটি যে, উনার মান সম্মান কীভাবে রক্ষা করবেন। এটা আমার ডিউটি নয়। আমার ডিউটি আমার মান সম্মান কীভাবে ধরে রাখব। যেমন- নায়ক শাকিব খান আমাদের ক্লাবের মেম্বার। উনি তো কোনো অসংলগ্ন আচরণ করেছেন বলে আমার মনে পড়ে না। যার যার মান সম্মান তাকে বজায় রাখতে হবে। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
জিডির বিষয়ে পুলিশ যা বলছে-
পরীমনির বিরুদ্ধে জিডির বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গুলশানের ক্লাবটিতে ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা বা অভিযোগ করেনি। ওইদিন রাতে ৯৯৯ থেকে ফোন আসে পরীমনির সঙ্গে ক্লাবের কাদের যেন ঝামেলা হচ্ছে। পরে আমাদের সদস্যরা সেখানে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পরীমনিসহ যে যার মতো সেখান থেকে চলে যায়। তখন ক্লাব কর্তৃপক্ষ কোনো জিডি করেনি।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী থানা এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে সেগুলো থানায় লিপিবদ্ধ করতে হয়। আমরা নিজেরা নিজেদের জন্যই এগুলো করি। যেমন- কোথাও বজ্রপাত হলে, দুর্ঘটনা, ডিউটিতে যাওয়া-আসা, ওয়্যারলেসে কোনো মেসেজ দিলে সেগুলোও লিপিবদ্ধ করে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এটা স্বাভাবিক নিয়ম।’
এ ঘটনার পরদিনই আবার রাজধানীর অদূরে ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হন বলে অভিযোগ করেছেন পরীমনি।
এমন অভিযোগ এনে রোববার (১৩ জুন) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে ওই রাতেই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এরপর ১৪ জুন দুপুরে সাভার মডেল থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। সে মামলায় প্রধান অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।