সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজার পর্যবেক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার প্রতিকেজি ৬৪ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে সরু চাল বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ ধরনের চালের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৭২ টাকা। মাঝারি চাল বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫২ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে, এক সপ্তাহ আগে এর সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ৫৮ টাকা। গত সপ্তাহের মতই ৪৮ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল।
টিসিবির পরিসংখ্যান বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দামে ৯ শতাংশ, মাঝারি চালে ১২ শতাংশ এবং মোটা চালে ৮ শতাংশ বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। এক বছর আগের তুলনায় দাম বেড়েছে সরু চাল ১৩ শতাংশ, মাঝারি চাল ৮ শতাংশ এবং মোট চাল ৯ শতাংশ।
গত মে মাসে বোরো মৌসুমের ধান বাজারে আসার পর বরাবরের মত চালের দাম কমে আসার কথা থাকলেও উল্টো বাড়তে শুরু করে। তখন আলোচনায় আসে মজুদ করে ব্যবসায়ীরা খুচরায় চালের সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছেন। ইউক্রেইন যুদ্ধ ঘিরে সরবরাহ সংকটে ভারত গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিলে দেশের চাল ব্যবসায়ীরা মজুদের পথে হাঁটছেন বলে আলোচনার মধ্যে প্রধান খাদ্য চালের দাম ভরা মৌসুমেও চড়তে থাকে।
ইউক্রেইন যুদ্ধ পরিস্থিতি আর সয়াবিন তেলের সংকটের অতীত অভিজ্ঞতায় দেশে খাদ্য সংকটের শঙ্কার আভাসে বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। সেসময় নতুন ধানের দামও প্রতিমণে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা বেড়ে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল বলে মিল মালিকরা জানিয়েছিলেন।এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি ধান-চালের দাম বাড়ানোর পেছনে জড়িতদের খুঁজতে খাদ্য মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একযোগে অভিযান শুরু করে।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও দেশের আট বিভাগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের দায়ে ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।এমন তৎপরতার পর বাজার আর না বেড়ে আগের মতই একইরকম দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। সরবরাহ সংকটের কথাও আর শোনা যায়নি।
পীরেরবাগে চালের খুচরা বিক্রেতা মঈন জানান, গত ১০ দিন ধরে চালের বাজার বলতে গেলে অনেকটা স্থিতিশীল। দাম বাড়ছেও না, কমছেও না। মে মাসের শেষ দিকে দাম সর্বোচ্চ যে পর্যায়ে উঠেছিল, সেখান থেকে কিছু চাল বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে কমেছে।
তিনি বলেন, “যেমন পাইজাম, স্বর্ণা ও বিআর আটাশ চাল বস্তায় ১০০ টাকা করে কমেছে। মিনিকেটের বস্তায় ৫০ টাকা করে কমেছে। এখন মিনিকেট বা নাজির চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ টাকা থেকে ৭২ টাকায়। বিআর আটাশ প্রতিকেজি ৫৫ টাকা, পাইজাম বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫২ টাকায়।”
পাড়ার মুদি দোকানগুলোতে যদিও খুচরা মূল্যের চেয়েও কেজিতে ২/১ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চাল। ভালো মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।
ফাইল ছবি
উত্তর পীরেরবাগে ভূঁইয়া স্টোর থেকে চাল কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, চাল বলেন আর আটা বলেন, যেটাই হাত দেই দাম দ্বিগুণ। এই পরিস্থিতিতে খাবারের খরচ যোগাতে গিয়ে অন্য অনেক খরচই কাঁটছাঁট করতে হচ্ছে। এভাবে চলা যায় না।রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাল বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম জনি কখনও মিলগুলো থেকে কখনও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট থেকে চাল এনে বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম খুবই উঠানামা করছে। একবার ৫০ টাকা কমে তো আবার ১০০ টাকা বাড়ে। আমার কাছে এখন রানা ব্র্যান্ডের মিনিকেট আছে, যার বস্তা (৫০ কেজি) ৩৪০০ টাকা; মোজাম্মেল মিনিকেট ৩৫০০ টাকা, এআর ব্র্যান্ড ৩২০০ টাকা, নজরুল ৩১৫০ টাকা ও রশিদ ৩২৫০ টাকা।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, মিনিকেটের দাম ব্স্তাপ্রতি ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা। ৩১৫০ টাকার মিনিকেটও পাওয়া যাচ্ছে। মোজাম্মেল ৩৪০০ টাকা ও রশিদ মিনিকেট ৩২৫০ টাকা। পাইজাম বা পাইরির বস্তা ২৫০০ টাকা হয়ে গিয়েছিল; তা এখন কমে ২৪০০ টাকায় নেমেছে। বিআর আটাশ এখন ২৪০০/২৪২০ টাকা, যেটা ২৫৫০ টাকা হয়েছিল।