শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
1 min readআজ ১৭ মে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত থেকে ১৯৮১ সালের এই দিনে দেশে ফেরেন তিনি। এদিন তাকে বহনকারী উড়োজাহাজটি বিকালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে ঢাকায় নামলে বিমানবন্দরে লাখো মানুষ তাকে স্বাগত জানায়। সেদিনের মেঘের গর্জন, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বদলা নেওয়ার লক্ষ্যে গর্জে উঠেছিল। আর অবিরাম মুষলধারে ভারী বর্ষণে যেন ধুয়েমুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃহত্যার জমাটবাঁধা পাপ আর কলঙ্কের চিহ্ন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালে
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ওই দিনটি ছিল রবিবার। সারাদেশ থেকে আসা লাখো মানুষ সেদিন তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানায়। ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল নামে। ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরেবাংলা নগরে লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন- ‘সব হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফেরার আগেই ওই বছরের (১৯৮১) ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তার অনুপস্থিতিতেই তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সেই বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মহাকাশে। সমুদ্র বিজয়, সীমান্ত বিজয়ের পর মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ- বাংলাদেশ যেন নতুন বিস্ময় বিশ্বে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। তারই নেতৃত্বে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমছে দারিদ্র্যের হার। দেশকে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন-২০২১’ ও ‘ভিশন-২০৪১’ কর্মসূচি নিয়েছেন; গ্রহণ করেছেন ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী কর্মসূচি বাংলার ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
কিন্তু ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথ মসৃণ ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে তাকে। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী তার এক নিবন্ধে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরেন এভাবে- ‘একবার নয়, দুইবার নয়, শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং ২৩ জুন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এর পরের ইতিহাস সবারই জানা। দেশ ও জনগণের কল্যাণে অভূতপূর্ব অবদান রাখায় দেশের মানুষ তাকে পরপর টানা তিনবারসহ মোট চারবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।
কর্মসূচি : শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্তি উপলক্ষে ‘শেখ হাসিনার চার দশক : বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটি আয়োজিত এই তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন প্রজš§ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং বেলা ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে। দিনটি উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ টেলিভিশনও বিটিভি ওয়ার্ল্ডসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে ডকুড্রামা- ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’। প্রচারিত হবে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। এ চলচ্চিত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের মুখ থেকে তার বিদেশজীবন, দেশে ফিরে আসার কথা শোনা যায়। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিসেবে নয়, বরং এ ডকুড্রামার মূল উপজীব্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।