November 24, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

রাজশাহী চিড়িয়াখানায় থাকছে না পশু

1 min read

রাজশাহী নগরীর কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানাটি ‘শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা’ নামে পরিচিত। তবে ভবিষ্যতে এ চিড়িয়াখানায় থাকছে না কোনো পশু। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) কর্তৃপক্ষ বলছে, এটিকে নগরবাসী ও দূরবর্তী পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ‘স্পেশাল বার্ড জোন ও শিশু পার্ক’ হিসেবে।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ও চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ৩৩ একর জায়গার ওপর নির্মিত এ চিড়িয়াখানার আড়াই বিঘা জায়গা সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে নভোথিয়েটারের জন্য। চিড়িয়াখানার মাঝখান বরাবর রয়েছে সুদীর্ঘ একটি লেক, যার কারণে বড় ধরনের পশু রাখার মতো মানসম্মত জায়গা নেই বললেই চলে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের সঠিক দেখভাল ও পরিচর্যার জন্য প্রয়োজন কিউরেটর ও ভেটেরিনারি সার্জনের। রোগাক্রান্ত পশু-পাখির জন্য আলাদা আইসোলেশন সেল থাকা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু সেটিও নেই।

মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, চিড়িয়াখানায় মোট ৫৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে স্থায়ী ১৩ জন। স্থায়ী কর্মীদের মধ্যে আবার চারজন বাইরে কর্মরত। বাকি ৪১ জনই অস্থায়ী। তাদের নেই প্রাণী সম্পর্কে ন্যূন্যতম ধারণা, প্রয়োজন ট্রেনিংয়ের। আবার চিড়িয়াখানার ভেতরের রাস্তার চেয়ে পশু-পাখির খাঁচা নিচু। এজন্য খাঁচাগুলো উঁচু করা প্রয়োজন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার। এসব সমস্যার জন্য পার্কটি প্রায় ১৮ মাস ধরে বন্ধ।

রাজশাহী চিড়িয়াখানাকে ‘স্পেশাল বার্ড জোন ও শিশু পার্ক করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজশাহী চিড়িয়াখানাটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র ইতোমধ্যে পার্কটির উন্নয়নে মাটি ফেলে উঁচু করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। মূলত রাজশাহী চিড়িয়াখানায় প্রচুর গাছপালা থাকায় এটি পাখির জন্য বসবাস উপযোগী। এছাড়া লেক ও মনোরম পরিবেশ বিরাজ করায় এখানে ভাঙাচোরা রাইডিং বাতিল করে মানসম্পন্ন অত্যাধুনিক রাইডিং বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দূর-দূরান্তের পর্যটকদের রাজশাহী চিড়িয়াখানামুখী করার জন্য এখানে বিভিন্ন স্থানে পিকনিক স্পট, ফাস্ট ফুডের দোকানসহ পর্যটকদের বসার জায়গাও তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন মেয়র। অন্যদিকে, বড় পশুদের জন্য বড় পরিসরে নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় ১০০ একর জায়গার ওপর একটি সাফারি পার্ক ধরনের চিড়িয়াখানা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যার কারণে এখান থেকে পশুগুলো সরিয়ে নওদাপাড়া চিড়িয়াখানায় নেওয়া হবে বলে জানান চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এ তত্ত্বাবধায়ক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার এই জায়গাটি ব্রিটিশ আমলে ছিল ঘোড়দৌড়ের মাঠ। এক সময় ঘোড়ার রেস হতো এই উদ্যানে। ঘোড়দৌড় ও টমটম বন্ধ হওয়ার পর এই মাঠটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল। শহরবাসীর বিনোদনের লক্ষ্যে তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান এখানে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। পরে উদ্যানে মূল্যবান গাছের চারা রোপণ, ফুল গাছের কোয়ারি ও কুঞ্জ তৈরি, লেক ও পুকুর খনন, কৃত্রিম পাহাড় তৈরির কাজ ১৯৭৪ সালে শুরু হয়। পরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পশুপাখি এনে উদ্যানটি বিনোদনের উপযোগী করা হয়। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণের মাধ্যমে এখানে উত্তরবঙ্গবাসীর জন্য পার্কটি আরও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে।

উদ্যানের সুপারভাইজার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, চিড়িয়াখানায় মোট ৩৭ ধরনের পশুপাখি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নয় ধরনের স্তান্যপায়ী প্রাণী, তিন ধরনের সরীসৃপ প্রাণী, পাখি রয়েছে ২৫ ধরনের। এছাড়া রঙিন ফেন্সি কার্প, গজার ও সাধারণ বিভিন্ন ধরনের মাছ।

তিনি বলেন, এখানে ১০ ধরনের প্রাণীর জোড়া দরকার। ইতোমধ্যে এসব প্রাণীর জোড়ার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গাসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিচ্ছেন রাসিক মেয়র। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে হলেও তিনি প্রাণীর জোড়া আমদানির চেষ্টা করবেন।

উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক ফরহাদ হোসেন বলেন, রাজশাহী নগরীর উন্নয়নের পাশাপাশি উদ্যানটিরও দ্রুত উন্নয়ন করে নগরবাসীকে একটি বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে কাজ করছেন মেয়র। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে বিনোদনের জন্য আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশও সহায়তা দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানাটি হচ্ছে ‘স্পেশাল বার্ড জোন ও শিশু পার্ক’ এবং নগরীর অদূরে বড় পশুদের নিয়ে গড়ে উঠবে বিশাল আরেকটি চিড়িয়াখানা, যা নগরবাসীর বিনোদনের খোরাক জোগাতে সক্ষম হবে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *