November 25, 2024

ফরচুন নিউজ ২৪

বাবা-মায়ের কোলে ফিরল বাকেরগঞ্জের সেই চার শিশু

1 min read

মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হলো ধর্ষণের অভিযোগে আটক হওয়া বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সেই চার নাবালক শিশুকে।

হাইকোর্টের নির্দেশে শুক্রবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে একটি মাইক্রোবাস যোগে তাদেরকে উপজেলার রুনশী গ্রামে নিয়ে এসে বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয় স্থানীয় প্রশাসন।
গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে নাবালক শিশুদের বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাদের বাবা-মা’রা। এময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
এদিকে স্বজনদের হাতে ওই চার শিশুকে বুঝিয়ে দেয়ার সময় বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায়, বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ, বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাত ১০টার দিকে বসে বরিশালের শিশু আদালত। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আবু শামীম আজাদ ওই চার শিশুকে জামিন দেন।

এদিকে জামিনের আদেশ হাতে পেয়ে ওই রাতেই বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ওই চার শিশুকে মুক্তি দিতে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালককে ই-মেইলে বার্তা পাঠান।

বার্তা পেয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মুক্তি পাওয়া চার শিশুকে নিয়ে মাইক্রোবাস যোগে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপর সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে উপজেলার রুনশী গ্রামে চার শিশুকে নিজ নিজ পরিবারের হাতে তুলে দেন।
এদিকে শিশু সন্তানদের ফিরে পেয়ে তাদের স্বজনরা এক প্রতিক্রিয়ায় আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সেই সাথে মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধবী রায় বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পালন করেছি। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম- বিএমএম (বার)। এসময় তিনি বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক বিচার করা হবে। যদি অবুঝ শিশুদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয় তবে বাদী পক্ষকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

উল্লেখ্য, গত চার অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে ছয় বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই গ্রামের অপর চার ছেলে শিশুর বিরুদ্ধে। যাদের বয়স ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে। গত ৬ অক্টোবর কন্যা শিশুর বাবা বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় ওই চার শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ‘চার শিশুর বয়স ৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে হলেও মামলায় কন্যা শিশুর পরিবার এবং পুলিশ তাদের তিন জনের বয়স ১০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ বছর উল্লেখ করে। এমনকি ওই মামলায় চার শিশুকে গ্রেফতারের পরে তাদেরকে ৭ অক্টোবর আদালতে সোপর্দ করে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশ।

এসময় বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাকেরগঞ্জ আমলী আদালতের বিচারক এনায়েত উল্লাহ তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি একই দিন রাত ৯টায় বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসে। এর পরপরই হাইকোর্ট বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আগামী ১১ অক্টোবর হাইকোর্টে তলব করেন। একই সঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে ওই চার শিশুকে তাদের অভিভাবকসহ একই দিন আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালককে একই দিন সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ভিকটিম শিশুর ধর্ষণ সংক্রান্ত মেডিকেল রিপোর্ট হাইকোর্টে দাখিলেরও নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি ওই চার শিশুকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাইক্রোবাসে বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে তাদের অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দিতে যশোর জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

যা ওই রাতেই হাইকোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশ বরিশালের শিশু আদালতের বিচারক, জেলা প্রশাসক, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সংশ্লিষ্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে টেলিফোনে অবগত করেন।

About The Author